কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন
অধিক জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বশর্ত সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করা। উল্লেখিত শর্ত পূরণের প্রথম ধাপ হলো আদর্শ বীজতলায় চারা উৎপাদন করা।
আদর্শ বীজতলা তৈরি করার খুব কঠিন কিছু নয়, আমাদের কৃষকরা এটি খুব সহজেই করতে পারেন। প্রথমে, বীজতলার জন্য উর্বর উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। অবশ্যই বন্যা মুক্ত এবং রৌদ্রজ্জ্বল জমিতে বীজতলা করতে হবে। নির্ধারিত জমিকে ৪/৫ টি চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় করতে হবে। জমিতে শতক প্রতি ২০ কেজি জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।
বীজতলার জমিকে ১/১.২৫ মিটার চওড়া অর্থাৎ ৩/৪ ফুট চওড়া করে লম্বালম্বি ভাবে বীজতলার বেড তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝে ৩০/৫০ সেঃমি জায়গায় নালা করতে হবে যার গভীরতা হবে ১০/১৫ সেঃমিঃ।
বীজতলায় বীজ ছিটানোর আগে ১ কেজি বীজ ১.৫ লিটার পানিতে ৩ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম/ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশকে ৮/১০ ঘন্টা ভিজিয়ে শোধন করে নিতে হবে। এতে বীজ বাহিত ছত্রাক জনিত রোগের আক্রমণ কমে হবে। বীজ ভালো ভাবে অঙ্কুরিত হতে ৪০-৪৮ ঘন্টা পানিতে জাগ দিয়ে রাখতে হবে।
অঙ্কুরিত বীজ বপনের পর থেকে চারার শিকড় মাটিতে লেগে যাওয়া পর্যন্ত (৪-৫ দিন) বীজতলার নালায় সেচের পানি রাখতে হবে। বীজতলায় ছিপছিপে পানি রাখা হলে চারার বাড়-বাড়তি ভালো হয়, খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি থাকলে চারা লম্বা ও দুর্বল হয়ে যায়।
বীজতলার চারার সুষম বৃদ্ধির জন্য বপনের ৪-৫ দিন পর প্রতি শতকে ২৮০ গ্রাম ইউরিয়া সার এবং ৪০০ গ্রাম জিপসাম সার ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রতি শতক বীজতলার জন্য বীজের প্রয়োজন ৩.৫- ৪ কেজি। প্রতি শতক বীজতলার চারা দিয়ে প্রায় ২৫ শতক জমি রোপণ করা যাবে। আমনের বীজতলায় চারার বয়স ২৫/৩০ দিন হলেই মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। চারার বয়স বেশি হলে কাঙ্ক্ষিত ফলন আসবেনা।
বীজতলায় পোকার উপস্থিতি এবং আক্রমণ খেয়াল রাখতে হবে বিশেষ করে আমনের বীজতলায় শোষক পোকা আক্রমণ করে যেমন থ্রিপস, সবুজ পাতা ফড়িং। সেক্ষেত্রে সঠিক মাত্রায় অনুমোদিত কীটনাশক যেমন- ইমিডাক্লোরাপ্রিড অথবা ক্লোরোপাইরিফস, ক্লোরাপাইরিফস+সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের ঔষধ স্প্রে করা যেতে পারে।
লেখকঃ কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা