নিউজ ডেস্কঃ
কয়েকদফা বন্যা ও অতিবৃষ্টির পর আমন ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন বগুড়ার কৃষকরা। তবে গতবারের তুলনায় এবার ফলন কম হতে পারে বলে বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কিন্তু বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন আমন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৩৫ হেক্টর। সেখানে আবাদ হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার ৮৪৫ হেক্টর।
এই লক্ষ্যমাত্রায় আমন ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় (চাল আকারে) ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮১২ মেট্রিক টন। তবে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় জেলার প্রায় এক হাজার ২২৮ হেক্টর আমন ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বগুড়ায় প্রায় ৩০ শতাংশ আমন ধান কাটা হয়ে গেছে। কয়েকদফা বন্যা ও অতিবৃষ্টির প্রভাবে এবার ধানের ফলন কিছুটা কম হতে পারে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার ফসলের মাঠে মাঠে ধান কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। জেলার পূর্ব অঞ্চলে অনেক ধানী জমি ফাঁকা পড়ে আছে। অথচ এই সময় ওই মাঠগুলো সোনালী ধানে ভরে থাকতো।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম এলাকার কৃষক যুধিষ্ঠির দাসের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তার ৬ বিঘা ফসলি জমির ধান কাটা শেষ। গড়ে বিঘা প্রতি ধানের ফলন পেয়েছেন ১২-১৩ মণ। এর মধ্যে ১০ মণ ধান বিক্রি করেছেন ১১০০ টাকা দরে। তবে এবার আমন চাষ করতে খরচ হয়েছে অনেক।
যুধিষ্ঠির বলেন, এবার প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে ধানে পোকার সংক্রমণ ছিল অনেক। তার ৬ বিঘা ফসলি জমিতে তিনবারের ওষুধ ব্যবহারে খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা।
এবার ৫ বিঘা জমিতে ৪৯-জাতের আমন ধানের চাষ করেছিলেন আবুল কালাম। তিনি শাজাহানপুর উপজেলার আতাইল গ্রামের বাসিন্দা।
আবুল কালাম বলেন, পোকার কারণে ধানের ফলন এবার ভালো হয়নি। দানা হয়েছে হালকা। গত বছর বিঘা প্রতি ফলন হয়েছিল ১৮ মণ, সেখানে এবার বিঘা প্রতি ফলন হয়ে ১৩ মণ।
বগুড়া কাহালু উপজেলার সান্তা পূর্বপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে ভারে করে ধান ঘরে তুলছেন কৃষক তবিবর রহমান। তার জমিতে গিয়ে দেখা গেল, ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধানে পোকা আক্রমণে অধিকাংশ শীষ চিটা হয়ে গেছে। তবে বাজারে ধানের দাম ভালো। তাই তার খরচ উঠতে সমস্যা হবে না।
নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল গ্রামের কৃষক আব্দুর জব্বার। তিনি এবার ৫ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছিলেন। এরমধ্যে দেড় বিঘা জমিতে ভালো ফলন হয়নি।
তিনি বলেন, যে জমিগুলোতে ভালো ফলন হয়েছে, সেগুলো থেকে বিঘা প্রতি ১৬ মণ ধান পাওয়া যাবে এবার।
এদিকে, জেলার পূর্ব অঞ্চলে আমন ধানের আবাদ একদমই ভালো হয়নি। নিচু জমি হওয়ায় গাবতলী, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে আমন ধানের ফলনের এই বেহালদশা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. দুলাল হোসেন বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে কিছু জমির ধানগাছ পড়ে গিয়েছিল। সেগুলোতে ফলনও কম হয়েছে। এছাড়াও অন্য জমিতেগুলোতে ভালো ফলন হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
সুত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ