এইচ এম শাহনেওয়াজঃ রাজশাহীর পুঠিয়ায় এ বছর অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় বাগানগুলোতে ব্যাপক আম ধরেছে। একমাত্র ঘুর্ণিঝড় আম্ফান ছাড়া এ বছর প্রকৃতিক দূর্যোগও অনেক কম হয়েছে। তবে শেষ মুহুর্তে বাগানগুলোতে ব্যাপক হারে আম ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে করে অনেক চাষিরা পরিপক্ক আমগুলো রক্ষা করতে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন।
এলাকার বিভিন্ন আমবাগান ঘুরে দেখা গেছে, ল্যাংড়া, ফজলি ও আশ্বিনা আমে মাছির আক্রমণ বেশী দেখা যাচ্ছে। অনেক বাগানের মধ্যে কিছু আমের গঠন দুইভাগে বিভক্ত। প্রতিটি আমের উপরের অংশ স্বাভাবিক থাকলেও নিচের অংশ কুচকে এবং বিবর্ণ কালো রং ধারন করছে। কিছু আম ফেটে যাচ্ছে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই নিচের অংশ থেকে আস্তে আস্তে পচন শুরু হয়। এর ৭/৮ দিনের মধ্যে পুরো আম পচে ঝড়ে পড়ছে।
এদিকে গত ১৫ মে থেকে গুটি জাতীয় আম দিয়ে পাড়া শুরু হয়েছে। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক গোপালভোগ, রাণীপ্রসাদ, লক্ষণ ভোগ, হিমসাগর বা খিরসাপাত আম পাড়ছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলায় নতুন ও পুরাতন মিলে প্রায় সাড়ে ৮শ হেক্টোর জমিতে আম বাগান রয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ হেক্টোর বেশী জমি। বৈরি আবহাওয়ার কারণে গত মৌসুমে এই এলাকায় আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিকটন। এবং উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিকটন আম।
তবে এ বছর বেশীরভাগ বাগানগুলোতে ব্যাপক আম ধরেছে। অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করলে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। তবে শেষ মুহুর্তে বাগানগুলোতে আম ছিদ্রকারী মাছি দমন করতে ব্যর্থ হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
আমচাষি আমির আলী বলেন, আমার প্রায় দু’একর আমবাগান লিজ নেয়া রয়েছে। বিগত দিনে ওই বাগানগুলোতে কোনো প্রকার রোগবালাই ছিল না। গত ৩ বছর যাবত বিভিন্ন প্রকার রোগের পাশাপাশি আম ছিদ্রকারী মাছির আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। কৃষি অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক সঠিক পরিচর্যা এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ৫/৬ দফা ব্যবহার করেও কোনো প্রকার সুফল পাইনি। যার কারণে এবার সেক্্র ফেরামিনট্যাব ব্যবহার শুরু করেছি।
শহিদুল ইসলাম নামে অপর একজন আমবাগান মালিক বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার একটু দেরিতে আম পাকছে। বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে গুটিসহ গোপালভোগ, রাণীপ্রসাদ, লক্ষণভোগ, হিমসাগর বা খিরসাপাত আম প্রায় শেষ হয়ে যেত। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে ঈদের পর থেকে আমের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। অনেক আম এখনো পরিপক্কই হয়নি। যার কারণে এবার মাছির আক্রমণ একটু বেশী।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা শামসুনাহার ভূঁইয়া বলেন, প্রথমমত আমবাগানগুলোতে অপরিষ্কারের কারণে সেখানে মাছিরা অবস্থান করে। এর মধ্যে সবচেয়ে সঠিক ও পরিবেশ সম্মত পদ্ধতি হচ্ছে সেক্স ফেরামিনট্যাব ব্যবহার করা। এছাড়া এবামেকটিন জাতীয় কীটনাশক সঠিকমাত্রায় ¯প্রে করলে মাছির আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।