বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশকে সবসময়ই রক্ষা করে আসছে দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। সুন্দরী-গেওয়াসহ নানা বৃক্ষের মজবুত বেষ্টনি আর অসংখ্য নদীনালা বছরের পর বছর ধরে প্রাণী ও সম্পদ রক্ষা করে আসছে। নিজে ক্ষত-বিক্ষত হলেও উপকূলের তেমন ক্ষতি হতে দেয়নি। গত নভেম্বরে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে বনটি। এবারও সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাত থেকে দেশ রক্ষায় বুক পেতে দেয় সুন্দরবন।
বুধবার (২০ মে) উপকূলজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে আমফান। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১১২ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে। প্রায় ৬ ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে রাত ১২টার দিকে খুলনা অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড়টি। সুন্দরবন দিয়ে অতিক্রম করার কারণে আমফানের তাণ্ডব কিছুটা কম হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আমফানের ছোবল থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় সুন্দরবন যে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবন দিয়ে অতিক্রম করায় আমফানের তাণ্ডব কিছুটা কম হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও উপকূলীয় এলাকার মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করতে বুক চিতিয়ে লড়াই করলো সুন্দরবন।
তিনি বলেন, ভারত থেকে আমফান যে গতি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল তার প্রভাব সেভাবে পড়তে পারেনি বনের গাছপালায় এই ঝড় বাঁধা পাবার কারণে। ভারতের সুন্দরবনের অংশের চেয়ে বাংলাদেশ অংশে গাছ ঘন থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম গতি নিয়ে খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডব থেকে এই বন উপকূলকে রক্ষা করেছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও ফণি থেকেও রক্ষা করেছে সুন্দরবন। প্রাথমিকভাবে বন কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে গাছপালা কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্য প্রাণীদের ওপর বড় ধরনের কোনও প্রভাব পড়েনি।
বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বলেন, সুন্দরবনের ভেতরে এখনও বাতাস বইছে। আমফানে ক্ষতি তো কিছু হয়েছে। বনরক্ষী ও কর্মকর্তারা ঝড়ের কারণে নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলেন। তারা এখন গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করবেন। তবে ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি হয়েছে তা বলবো না। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বেশি ছিল। এতে সুন্দরবনের ভেতরে থাকা মিষ্টি পানির পুকুরে লবণ পানি ডুকেছে। এটাই বেশি ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সামনে বুক পেতে দিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে ঝড়ের বেগ অনেক কমে গেছে যার কারণে আল্লাহর রহমতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে।
সুত্র :ppbd