চাহিদা বাড়লেও করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে সক্ষমতা হারিয়েছে প্রধান আলু রফতানিকারক দেশগুলো। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে আলু ক্রয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন বিদেশী ক্রেতারা।

দেশের আলু রফতানিকারকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সম্প্রতি চিঠি দেয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসজনিত কারণে রফতানি বাজারে চীনের রফতানি বন্ধ হওয়া, বিরূপ আবহাওয়াজনিত কারণে রফতানি বাজারে পাকিস্তানি আলুর সরবরাহ ঘাটতি এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারতে আলুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বিশ্ববাজারে এখন আলু রফতানিতে বাংলাদেশের কোনো প্রতিযোগী নেই বলেই মূল্যায়িত হয়েছে। বিদেশী নতুন নতুন ক্রেতা দেশ বাংলাদেশ থেকে আলু ক্রয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছে। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে একটি নির্ভরযোগ্য রফতানিকারক দেশে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা দেশের বৃহত্তম স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আলু রফতানি হয়েছে মোট ৩০ হাজার ৫৬৭ টন। এই রফতানির ৮০ শতাংশই গেছে এককভাবে মালয়েশিয়ায়। বাকিটা সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ব্রুনাই ও কুয়েতে রফতানি হয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসজনিত লকডাউন অবস্থায় শুধু প্রয়োজনীয় অর্থায়নের অভাবে দেশ থেকে আলু রফতানি চাহিদা অনুযায়ী গতি পাচ্ছে না বলে রফতানিকারদের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হয়।

দেশের প্রথম ও শীর্ষস্থানীয় আলু রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এগ্রিকনসার্ন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শেখ আবদুল কাদের বলেন, ‘বিশ্বের বহু দেশের প্রধান খাদ্য হলো আলু। এর বাইরেও খাদ্যপণ্যটির চাহিদা নেই এমন দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রফতানি খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও দেশের আলু রফতানির বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন নতুন ক্রেতা আমদানির উদ্দেশ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রফতানিকারকদের অর্থ সংকট রয়েছে। এ খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়ার পর তা স্বল্প সময়ের মধ্যে রফতানি আয় থেকে আদায়যোগ্য হবে। তাই অন্তত পার্শ্ববর্তী দেশের মতো আমাদের দেশেও এর উৎপাদনসংশ্লিষ্ট সবকিছুর আমদানি প্রক্রিয়ায় এনবিআরকে আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে।’

আলু রফতানিতে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে আলুর উৎপাদন বছরে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে এক কোটি টন ছাড়িয়েছে। আলুর বার্ষিক অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টনের মতো। সে হিসাবে দেশে প্রায় ৩০ লাখ টন আলু অতিরিক্ত থাকছে। রফতানি উপযোগী আলু উৎপাদনে উন্নত মানের বীজের ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ থেকে স্থায়ীভাবে বৃহৎ পরিসরে আলু রফতানির সুযোগ রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আগামপত্র দাখিল হওয়ার পর শুল্কায়ন প্রক্রিয়া কীভাবে আরো দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, সেভাবেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক কিছু পণ্যের ক্ষেত্র সীমিত করে রাখা হলেও রফতানি কার্যক্রম সবসময়েই পুরোপুরি সচল রাখা হয়েছে। এতে অগ্রাধিকারও সর্বোচ্চ।

সূত্র: বণিক বার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *