নিউজ ডেস্কঃ
সাভারের সাদুল্যাপুরের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান গোলাপ গ্রাম। লাখো গোলাপে ছেয়ে থাকা গ্রামটিতে পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অন্যান্য ফুলও। এমন মোহনীয় পরিবেশে প্রিয় মানুষ কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসেন অনেকেই। তাদের দেখে গোলাপ বিক্রি করার জন্য হাঁকডাক শুরু করেন গোলাপ চাষি ও বিক্রেতারা।
‘আসেন মামা আসেন, তাজা গোলাপ আছে মামা। যত খুশি তত নিয়ে যান। পাইকারি রেট মাত্র ২ টাকা।’ এভাবেই হাঁকডাক দিয়ে গোলাপ গ্রামে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের ডাকছিলেন এখলাস মিয়া।
পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২২ বছর ধরে পাঁচ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করছেন তিনি। এর আগে, গোলাপ চাষে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন এখলাস মিয়া। কিন্তু এবারের মতো এতো বিপদে কখনো পড়তে হয়নি তার। আগে প্রতিটি গোলাপ ১০-১৫ টাকা ও প্রতি আঁটি ৩০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন, এখন করোনার কারণে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২ টাকায়।
শুধু এখলাস নন, গোলাপ গ্রামের সাইফুল, সুজন, রিফাতসহ প্রায় অর্ধশতাধিক চাষি এখন এভাবেই ফুল বিক্রি করছেন। সাভার উপজেলা কৃষি অধিদফতর থেকে কোনো সহয়তা পাননি বলেও জানান গোলাপ চাষিরা।
সরেজমিনে সাভারের বিরুলিয়ার সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়িতে দেখা গেছে, ফুল চাষিরা ছোটো ছোটো কুড়ে ঘর করে ক্ষেতের পাশে বসে এভাবেই দর্শনার্থীদের ডেকে ডেকে ফুল বিক্রি করছেন। দর্শনার্থীরা এলে বাগান থেকে তাজা গোলাপ তুলে দিচ্ছেন। তিন মাস করোনার কারণে গোলাপ গাছের পরিচর্যা করতে পারেননি। এ কারণে এবার ফুল ফুটেছে কম। তাই কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সেগুলো খুচরা হিসেবেই ২ টাকা করে বিক্রি করছেন তারা।
এখলাস মিয়া বলেন, করোনার আগে আমরা একটি গোলাপ ১০-১৫ টাকায় বিক্রি করতাম। কিন্তু মার্চ থেকে খুব কম বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। ঘোরাঘুরি, সামাজিক, রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, অনুষ্ঠান বন্ধ। ফুলের চাহিদা তেমন ছিল না। গত তিন মাস কোনো ফুল পাইকারি বা খুচরা বিক্রি করতে পারিনি। আবার করোনার কারণে তিন মাস আমরা মাঠেও যেতে পারিনি। গাছেই পচে গেছে ফুল। এছাড়া দর্শনার্থীরাও গোলাপ গ্রামে আসতে পারেননি। এখন অল্প কিছু দর্শনার্থী আসতে শুরু করেছেন। তাই কোনো মতে সংসার চালাতে কম দামেই ফুলগুলো বিক্রি করছি।
গোলাপ বিক্রেতা সাইফুল বলেন, আমার কোনো গোলাপ ক্ষেত নেই। বাগানের চাষিদের থেকে গোলাপ কিনে, কেট্ বাছাই করে বাগানে ঘুরতে আসা মানুষের কাছে বিক্রি করি। করোনাকালে বাগান থেকে গোলাপ কিনতেও পারিনি, বিক্রিও করতে পারিনি। তবে দুই সপ্তাহ ধরে গোলাপ গ্রামে কিছু দর্শনার্থী আসায় কিছু গোলাপ বিক্রি করছি। আগে যে গোলাপ বিক্রি করতাম ১০ টাকায়, সেটা এখন ২ টাকা করে বিক্রি করছি।
করোনায় জারবেরা ফুল চাষিদের অবস্থাও একই রকম। ফুলের সঙ্গে গাছও পচে গেছে। তবে এখন কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন তারা।
শ্যামপুরের জারবেরা চাষি পলাশ বলেন, করোনার সময় ফুল বিক্রি করতে পারিনি। ঋণ করে শ্রমিকদের বেতন দিয়েছি। তবে এখন ফুলের দাম ভালো পাচ্ছি। করোনার আগে পাইকারি দরে একটি ফুল বিক্রি করতাম ৫ টাকায়, এখন ৭ টাকা করে বিক্রি করছি।
সুত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ