নিউজ ডেস্কঃ
করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাদ নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তাই নিজ বাড়িতেই গবেষণাগার গড়ে তুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন। গবেষণা করছেন ইলিশ ধরার সঠিক প্রজনন মৌসুম নির্ধারণে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়কালকে আরও সুনির্দিষ্ট করতে। পাশাপাশি দেশীয় মাছের প্রজাতি রক্ষা ও সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মৎস্য নিয়ে দিনরাত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই অধ্যাপক। ইতিমধ্যে গুণী এই গবেষকের ৮৬টি নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায়। নিবন্ধ প্রকাশে ছাড়িয়ে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার বসাককেও। সম্প্রতি স্কপাসের করা জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষকদের মধ্যে প্রথম স্থানটি তার। পৌঁছে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত সেরা ৫০ জন গবেষকের তালিকায়।
এর আগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করার পর জাপানের কগোশিমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের পর ২০০৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন তিনি। সেই থেকে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধ করা এবং দেশের বাঁওড়গুলোতে (মরা নদী) পুরনো দেশি মাছ ফিরিয়ে নিয়ে আসা নিয়ে গবেষণা করেন।
অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন জানান, ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রজনন মৌসুমের সুরক্ষায় প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ শিকার নিষিদ্ধ। মাছের প্রজনন মৌসুমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ নিষিদ্ধ সময়কালে প্রয়োজনীয় পুনর্বিন্যাস নিয়ে আসা এবং জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত না করে মাছ ধরার পরিমাণ নির্ধারণ নিয়েও কাজ করছেন তিনি। এছাড়াও ইলিশ মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময় ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর থাকলেও পদ্মাতে ৪ থেকে ৫ দিন আবার মেঘনাতে ৩ থেকে ৪ দিন পর মা ইলিশ প্রবেশ করছে। ঠিক এমনভাবে বেরও হচ্ছে কয়েকদিন পরে। গত তিন বছরের গবেষণায় এমনটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বর্তমানে চারটি প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ন করছেন। একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সম্পদের মজুদ নিরূপণ, সর্বোচ্চ আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন। দেশীয় ছোট মাছ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নেও কাজ করছেন। বর্তমানে দেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম চলছে অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেনের। এছাড়াও গবেষণা চালিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, নেপাল, পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।
নিজ বাসায় গবেষণাগার স্থাপনের কারণ জানতে চাইলে ড. ইয়ামিন হোসেন বলেন, আমরা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুয়াকাটা ও পাথরঘাটা এই চার মেরিন স্টেশন থেকে মাছ নিয়ে আসি। এসব স্টেশন থেকে আসা মাছগুলো গভীর রাতে পৌঁছে। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় খুব অসুবিধায় পড়তে হত। এ সমস্যা কাটাতে দেড় বছর আগে শিক্ষার্থীদের পরামর্শে বাড়িতেই গবেষণাগার খুলে ফেলি। এছাড়া বেশকিছু প্রকল্পে গবেষণার কাজটা রাতেও চালাতে হয়।
তিনি জানান, গবেষণার কাজগুলো মূলত ছাত্রছাত্রীরাই করে থাকে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গবেষণাগুলো হচ্ছে। করোনার সময়টাতে এটি বেশ কাজে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও গবেষণায় প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি এখানে থাকায় ছাত্রছাত্রীরা গবেষণার কাজটা এখানে চালিয়ে নিতে পারছে। এদিকে রাতে কোনো শিক্ষার্থীর থেকে যাওয়ার প্রয়োজন হলে গেস্টরুমেই থেকে যান। এখন মোট ২৪ জন শিক্ষার্থীসহ আরও কিছু গবেষক তার অধীনে গবেষণা করছেন। তবে বর্তমানে পরিস্থিতির জন্য ১২ থেকে ১৪ জন নিয়মিত কাজ করতে পারেন।
গবেষণারত শিক্ষার্থীরা জানান, করোনার এই সময়টা তারা ভালোভাবেই কাজে লাগাতে পারছেন। শিক্ষকের বাসায় গবেষণা কাজ চালার সুবাদে তারা বিভাগের শিক্ষককে যেকোনো সময়ই পাশে পান।
সুত্রঃআর টি ভি