নিউজ ডেস্কঃ
বনভূমির জায়গা দখলসহ আবাদিজমি হাতছাড়া হওয়ার কারণে ক্ষুদ্র পানচাষিরা বিপাকে পড়েছেন। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ায় জমিজমার দাম বেড়ে যাওয়ায় দুর্বৃত্তরা জমি দখলে তৎপরর হয়ে উঠেছে, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। পানের বরজের জায়গা দখল করে স্থাপন নির্মাণ এবং টাকার বিনিময়ে হাতবদল করার ঘটনায় ভূমিহীন পানচাষিরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
দোছরী গ্রামের ক্ষুদ্র পানচাষি উমর হাকিম, ছৈয়দ নুর, আশরাফ আলী জানান, দোছরী বনবিটের আওতাধীন বিশাল বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। এখানে স্থানীয় একটি জবর দখলকারী চক্র ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বনভূমির জায়গা দখল করে স্থাপনা তৈরি করছে। আবার এসব স্থাপনা মোটা অঙ্কের টাকায় হাতবদল করছে।
জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালী চাকমাপাড়া গ্রামের তৈপুচিং চাকমা সাংবাদিকদের জানান, তার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম পানের বরজের জায়গাটি বনবাগান করার বাহানা দিয়ে কেড়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তিনি বলেন, মূলত আমরা জুম চাষ ও পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। বেশ কিছুদিন ধরে পরিবেশগত কারণে বন বিভাগ জুম চাষ বন্ধ করে দেওয়ায় পান চাষের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পান চাষের জায়গাটুকু হারিয়ে বিপাকে আছি।
পালংখালী ইউনিয়নের তেলখোলা গ্রামে কামাল উদ্দিনের পানের বরজের জায়গা দখলের জন্য আগুন দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকার পান নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কামাল উদ্দিন জানান, বিভিন্ন শাকসবজি ও পান আবাদ করে জীবনধারণ করে আসছে এখানকার পরিবারগুলো। প্রভাবশালীরা বনভূমি দখল করে রোহিঙ্গাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করায় স্থানীয়রা পান চাষের জন্য জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শাহজাহান বলেন, পান চাষের জায়গা হারিয়ে চাষিদের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। হাজীরপাড়া গ্রামের মানবাধিকারকর্মী বেলাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, পানচাষিদের আর্থিক-সামাজিক উন্নয়ন ও রপ্তানিযোগ্য পান চাষ বাঁচিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং বনভূমির পরিত্যক্ত জায়গা বরাদ্দের দাবি জানাই। রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, উখিয়ার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০ কোটি টাকার পান দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে থাকে। ভূমিহীনদের অনূকূলে বনভূমির পরিত্যক্ত জায়গাসমূহ বরাদ্দ দেওয়া হলে পান চাষে উত্সাহী হয়ে এ পেশায় হতদরিদ্ররা এগিয়ে আসবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিত্ তালকুদার জানান, এ উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে পানের বরজ হয়ে থাকে। জবর দখল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পানচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, রপ্তানিযোগ্য পান উত্পাদনে এ উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের কৃষকরা দৃশ্যমান ভূমিকা রাখছেন। তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চেষ্টা চলছে। উপজেলা বনরেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মো. শফিউল আলম বলেন, বন বিভাগের আওতাধীন পাহাড়ি এলাকায় পানের বরজ স্থাপন ও পান উত্পাদনপূর্বক বাজারজাতকরণে ৫ হাজারেরও অধিক পানচাষি রয়েছেন। রোহিঙ্গা আসার কারণে এসব পানচাষিদের পূর্বনির্ধারিত জায়গাসমূহ বেদখল হয়ে পড়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বনকর্মী কর্তৃক জায়গা হস্তান্তর করে উেকাচ নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
সুত্রঃ ইত্তেফাক