এক রাতের বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৮০ কোটি টাকার মাছ!এক রাতের বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৮০ কোটি টাকার মাছ!

নিউজ ডেস্ক :
পড়ালেখা শেষ করে চাকরি না পাওয়ায় ঋণ নিয়ে মাছের খামার গড়ে তুলেছিলেন সাদিকুল ইসলাম। নিজ বাড়ির দুটি পুকুর ছাড়াও লিজ নেয়া আরও চার পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন।

ছয় পুকুরে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মাছ ছেড়েছিলেন সাদিকুল। মাছকে ঘিরে স্বাবলম্বী হবার স্বপ্ন দেখছিলেন উদ্যোক্তা সাদিকুল। কিন্তু সেই স্বপ্নে গুড়েবালি। মাত্র দশ ঘণ্টার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির পানিতে পুকুর উপচে ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। এক রাতের ভারী বর্ষণে ভেসে গেছে তার স্বাবলম্বী হবার স্বপ্নটা। এখন মাছ শূন্য পুকুরের দিকে চেয়ে ফেলছেন দীর্ঘ নিঃশ্বাস। পথে বসার উপক্রমে সাদিকুলের চোখ জলে টলমল।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের জয়রামপুর এলাকার সাদিকুলের মতো এ জেলার অনেক মৎসচাষির নিঃস্ব হবার গল্প তৈরি হয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বৃষ্টিপাতে। তাদের অনেকের দাবি, রংপুরে এক রাতের প্রবল বৃষ্টিতে প্রায় ৮০ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এমন ক্ষতিতে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা মৎসচাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) রংপুরে শতাব্দীর সর্বোচ্চ ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টির পানিতে শত শত পুকুল, খাল আর বিল থেকে বেড়িয়ে যায় কয়েক’শ কোটি টাকার মাছ। শনিবার রাতভর বৃষ্টির কারণে মাছ রক্ষার কোনো সুযোগই পাননি চাষিরা। জেলার প্রায় ৭ হাজার ৫৫৩টি পুকুর থেকে ৩ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এতে মৎসচাষিদের ক্ষতির পরিমাণ ৮০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাওয়া মাছ ধরছে জেলেরা।
রংপুর মহানগরীর বোতলা এলাকার কাজল হোসেন জানান, দশ ঘণ্টার প্রবল বৃষ্টিতে সেখানকার বেশ কয়েকটি মাছের খামারসহ এক ডজন পুকুর এক সঙ্গে ভেসে গেছে । একই অবস্থা কামাল কাছনা, কুকরুল, জলকর, ধাপ, চিকলি, বড়বাড়ি, বাবুখাঁ, নজিরেরহাট, মরিচটারি, ভুরারঘাট, বারো আউলিয়া, নগর মীরগঞ্জ, হোসেন নগরসহ নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা মৎস্য খামার ও পুকুরের।

পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের পরানের মৎস চাষি হেদায়েত জানান, তাদের ৫ বিঘার তিনটি পুকুর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে সব মাছ ভেসে গেছে। এতে করে তাদের কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

একই কথা জানান পবিত্রঝাড় গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা সাকিব ইসলাম। তার মাছের পোনার হ্যাচারিসহ পুকুরের কয়েক লক্ষাধিক টাকার মাছ বৃষ্টির পানিতে বের হয়ে গেছে। এখন লাভ তো দূরের কথা পুঁজি নিয়ে চিন্তিত তিনি।

নগরীর বোতলা এলাকার মৎসচাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, কিছু টাকা ঋণ করে পুকুর লিজ নিয়ে মাছের চাষ শুরু করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি আমার সব কেড়ে নিল। পুকুর উপচে সব মাছ ভেসে গেছে। প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

নাছনিয়া বিল লিজ নেয়া আজমল মিয়া জানান, এমন বৃষ্টি জীবনে কখনো দেখেননি। এক রাতেই সব কিছু শেষ করে দিল। বিলের মাছ পানি উপচে ভেসে গেছে। ৮০ লাখ মাছ ছেড়েছিলেন তিনি। অনেক মাছ বড়ও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে বেশির ভাগ মাছ ভেসে গেছে।

মাছ চাষের জন্য বিল উপযোগী করা, প্রতিদিন মাছের খাবার যোগান, পরিচর্যা ও বিলের নিরাপত্তার জন্য লোকবল নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কোটি টাকার মতো আজমল মিয়ার ব্যয় হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে পানি উপচে মাছ ভেসে যাওয়ায় এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে তার।

শুধু নাছনিয়ার বিলই নয়। নগরীর কুকরুল, চিকলী, চকচকার বিলসহ অসংখ্য পুকুর, ছোট খাল ও জলাশয়ের মাছ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। এতে করে শত শত মৎসচাষি পুঁজি হারিয়ে চোখে মুখে এখন অন্ধকার দেখছেন। অনেকেই ভর্তুকি ছাড়া জীবন বাঁচবে না বলে মনে করছেন।

এদিকে বৃষ্টির এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখনো রংপুর মহানগরীর প্রায় অর্ধশত পাড়া-মহল্লা পানিবন্দী হয়ে আছে। আবার কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন ও স্থানীয়দের ব্যক্তি উদ্যোগে চেষ্টা করা হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনের। সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে গত বৃহস্পতিবার নগরীর নিউ জুম্মাপাড়া সংলগ্ন দোলাপাড়ায় পানিতে ডুবে মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ধীরগতিতে পানি নেমে যাওয়াতে এখনো অনেক জায়গায় তলিয়ে আছে পুকুর, ডোবা, খাল, বিলসহ ফসলি জমি।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, গত শনিবার রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত রংপুরে ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা শতাব্দীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এমন ভারী বর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চলসহ বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক ও মৎসচাষিরা।

রংপুর বিভাগীয় মৎস উপ-পরিচালক সাইদার আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে মৎস কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুত্রঃ বার্তা ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *