নিউজ ডেস্কঃ
একটা সময় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পাট ও পাটজাত সামগ্রীর পরের অবস্থান ছিল চামড়া শিল্প। পাটজাত পণ্যের পতনের পর নব্বই দশকে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের উত্থান হয়, তখনও দ্বিতীয় রপ্তানীকারক খাতে দীর্ঘদিন অবস্থান ধরে রেখেছিল চামড়া শিল্প। কিন্তু বছর চারেক হলো চামড়াশিল্পের ধস নেমেছে। এটি এমন পর্যায়ে পৌছায় যে, গতবছর কোরবানির ঈদে এক লাখ টাকার উপরে কেনা গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকায়। একলাখের নিচে কেনা গরুর দাম দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা। এবারও গরুর চামড়া দর না বাড়ার আশঙ্কা করছেন আড়তদাররা।
সরকারের হস্তক্ষেপে ট্যানারি মালিকরা চামড়া সংগ্রহ শুরু করলেও আড়তেরমোটা অংকের বকেয়া পড়ে আছে আগের মতোই। গত বছরের চামড়া বিক্রি বাবদ ট্যানারি মালিকদের দেওয়া চেক আজও ক্যাশ হয়নি। আড়তদারদের হিসাব অনুযায়ী এখনও ২৫০ কোটি টাকা বকেয়া আটকে আছে। চামড়া সংগ্রহের পুঁজি না থাকায় পর্যপ্ত চামড়া সংগ্রহ সম্ভব নয়, আর এই সুযোগ ফড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কারসাজিতে পানির দামে চামড়া কেনার পাঁয়তারা চলছে।
চামড়া বাজারকে এবার করোনা মহামারীও প্রভাবিত করবে। কারণ করোনা দূর্যোগে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক সংকটে পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ টাকা নেই। বকেয়া আর ব্যাংক ঋণ না পেলে তাদের পক্ষে চামড়া সংগ্রহ সম্ভব না। এতে গতবারের চেয়েও চামড়ার দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন তারা।
আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা বাড়ছে বলে বলা হয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক জরিপ প্রতিষ্ঠান জাস্ট স্টাইল। সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশগুলোতে গবাদি পশুর উৎপাদন সেভাবে বাড়ছে না। অন্য ফসল চাষের জন্য সেখানে গবাদিপশু উৎপাদনে পর্যাপ্ত জমি পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পাদুকাশিল্পে চামড়ার চাহিদা বাড়ছে। হ্যান্ড ব্যাগ আর মিনিয়েচার সামগ্রীতে চামড়ার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ চামড়ার চাহিদার মূলস্রোত থেকে ছিটকে গেছে সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে।
তৃণমূল পর্যায়ে বিক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে কাঁচা চামড়ার দাম কমেছে ৭৫ শতাংশ। অথচ চামড়াজাত সব পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তাহলে কাঁচাচামড়ার দাম কমছে কেন, লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়া কেন ২০০ টাকার বেশি দাম বলছে ফড়িয়ারা?
আড়াতদারদের পাওনা পরিশোধ বা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই অচলায়তন ভাঙা সম্ভব নয় বলে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাংক ঋণ আর বকেয়া পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি প্রশাসনের যোগসাজশে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে না পারলে, আগামী কয়েকবছর পানির দামেই ছাড়তে হবে কোরবানির চামড়া ।
সুত্রঃ পূর্বপশ্চিম বিডি