নিউজ ডেস্কঃ
কুমিল্লায় অবৈধভাবে পেঁয়াজ মজুদ করে চরম বিপাকে পড়েছে অসাধু সিন্ডিকেটগুলো। নগরীসহ জেলার বেশ কিছু বাজারের পাশে অবস্থিত কয়েকশ গুদামে মজুদ করা পেঁয়াজ এখন পচে যাচ্ছে। অধিক মুনাফার আশায় বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজ মজুদ করেছিল বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
মজুদ করা এসব পেঁয়াজে পচন ধরায় অর্ধেক দামে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন এবং দোকান মালিক সমিতির যৌথ উদ্যোগসহ ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের প্রচার-প্রচারণায় এবার হুজুগে পেঁয়াজ ক্রয় করেননি ভোক্তারা।
এতে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা হাতিয়ে নিতে পারেনি সিন্ডিকেটগুলো। ফলে পেঁয়াজ মজুদ করে উল্টো লোকসানের মুখে পড়েছে।
জানা যায়, কুমিল্লার বড় বড় বাজার কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আড়তদার এবং সিন্ডিকেটগুলো সুযোগ পেলেই পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিতে অবৈধ মজুদ কর্মকাণ্ড করে আসছে।
সম্প্রতি ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় মুহূর্তের মধ্যেই হাজার হাজার বস্তা পেঁয়াজ মজুদ করে এ জেলার সিন্ডিকেটগুলো। এতে বাজারে কৃত্তিম সংকট দেখা দেয়।
চাহিদানুসারে বাজারে পেঁয়াজ না থাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম।
সূত্র জানায়, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হলেও তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। ফলে ভারতের পেঁয়াজের ওপরই নির্ভরশীল দেশের ব্যবসায়ীরা ও ভোক্তারা।
সম্প্রতি পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। তবে দেশে চাহিদা অনুসারে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ থাকলেও ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের খবরে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম তিনগুণ বেড়ে যায়। আর এ সুযোগে দেশের বিভিন্ন জেলার ন্যায় কুমিল্লা নগরীসহ জেলার বড় বড় বাজারের আড়তদার এবং সিন্ডিকেটগুলো পেঁয়াজ মজুদ করে রাখে।
নগরীর রাজগঞ্জ, বাদশা মিয়ার বাজার, রানীর বাজার, পদুয়ার বাজার, জেলার ময়নামতি ক্যান্টমেন্ট, দেবিদ্বার, কোম্পানীগঞ্জ, রামচন্দ্রপুর, গৌরীপুর, নিমসার, চান্দিনা, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, মুদাফফরগঞ্জসহ অধিকাংশ বাজারে ব্যবসায়ী এবং আড়তদাররা পেঁয়াজ মজুদ করে রাখেন।
ফলে বাজারে কৃত্তিম সংকট দেখা দেয়। এরই মাঝে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাজার মনিটরিংসহ দোকান মালিক সমিতিকে নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। হুজুগে অতিমাত্রায় পেঁয়াজ ক্রয় না করতে সচেতনমূলক প্রচার চালানো হয়।
এতে হুজুগে পেঁয়াজ ক্রয় করেননি ভোক্তারা। ফলে পেঁয়াজ মজুদ করে চরম বিপাকে পড়ে অবৈধ সিন্ডিকেটগুলো। এসব সিন্ডিকেটের মজুদ করা পেঁয়াজগুলো এখন পচে যাচ্ছে। আর পচে যাওয়া থেকে রক্ষা এবং পুঁজি রক্ষায় এসব মজুজদার সব পেঁয়াজ বাজারে তুলছে। ফলে পেঁয়াজের দাম কমে এসেছে।
এদিকে জেলার শত শত গুদামে মজুদ রাখা অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ পচে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখন অর্ধেক দামেও পেঁয়াজ ক্রয় করছেন না ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। এতে অতিলোভী আড়তদার-পাইকাররা এখন ক্রয়মূল্যের চেয়ে দাম কমিয়ে দিয়েও পেঁয়াজের ক্রেতা পাচ্ছেন না। তাদের পেঁয়াজ গুদামেই পচতে শুরু করেছে।
গত মঙ্গলাবার নগরীসহ জেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ক্রেতাশূন্য, আড়তভর্তি পেঁয়াজ, কোনো লোকজন দেখলেই দোকানিরা বলছেন কয় বস্তা পেঁয়াজ লাগবে?
অপরদিকে ভারত আবারও পেঁয়াজ রফতানি শুরু করেছে, পেঁয়াজ আসছে মিয়ানমার থেকেও; এমন তথ্যে মজুদদারদের মাঝে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে।
নগরীর মামা-ভাগিনা স্টোরের পাইকারি ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম অনিক জানান, গত দুদিন একটা পেঁয়াজও বিক্রি করতে পারিনি। বাজারে ক্রেতা নাই। দোকানে থাকা পেঁয়াজে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। অধিকাংশ বস্তায় পেঁয়াজে পচন ধরেছে। খরচ বাদেই ৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনে এখন ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বড় লোকসানের অশঙ্কায়। তবু ক্রেতা পাচ্ছি না।
জেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, বাজারের বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে, কিন্তু সে তুলনায় ক্রেতা একেবারেই কম, আড়তদারগণও মজুদ করে বিপাকে রয়েছে, অধিকাংশ মজুদদারের পেঁয়াজ অর্ধেকের বেশি পচে গেছে।
জেলার গৌরীপুর বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবদুল হক জানান, অধিক মুনাফার আশায় আমাদের বাজারের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুদ করেছিল, কিন্তু তা হিতে বিপরিত হয়েছে, এখন লাভের চাইতে লোকসানের পরিমাণ বেশি হবে। বিশেষ করে প্রশাসনের নজরদারি জনসচেতনতার কারণেই বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলেন, বাজারে ভোক্তাদের চাহিদা অনুসারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ রয়েছে, কেউ কৃত্তিম সংকট তৈরি করতে পারবে না, আমরা বিষয়টি নিয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছি।
সুত্রঃ যুগান্তর