কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
প্রশ্নঃ আমার বেগুন গাছ পাতা শুকিয়ে ঢলে পড়ছে, কি দিলে ভালো হবে?
পরামর্শঃ আপনি যে সমস্যার কথা বলেছেন, তাকে বেগুনের ঢলে পড়া (wilting) রোগ বলে। এই ঢলে পড়া রোগ দুভাবে হতে পারে, একটি ছত্রাক দ্বারা যা ছত্রাকজনিত ঢলে পড়া ( Fusarium Wilt) নামে পরিচিত, অন্যটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা যা ব্যাকেরিয়াল ঢলে পড়া ( Bacterial wilt) রোগ হিসেবে পরিচিত।
আসুন ০২ ধরনের ঢলে রোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি……
ছত্রাকজনিত ঢলে পড়া ( Fusarium Wilt)
লক্ষণঃ
বেগুন গাছের নিচের দিকে পাতাগুলো প্রথমে হলুদ হয়ে নিচের দিকে বেঁকে ঢলে পড়ে। তারপর পুরো গাছে একসাথে ঢলে পড়ে। এছাড়াও প্রধান ডগা মরা শুরু করে, তারপর সকল ডগা মরা যায়।
পরামর্শঃ
© পানি জমে থাকলে, তা বের করার ব্যবস্থা করুন।
© অল্প সংখ্যক গাছ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলুন, এতে করে সংক্রমণের হার যেমন কমবে, অন্যদিকে বালাইনাশক প্রয়োগের খরচ সাশ্রয়ী হবে।
© নিরাপদ বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন লক্ষ্য হলে জৈব বালাইনাশক ডিকোপ্রাইমা প্রতি বিঘায় ১০০ গ্রাম হারে স্প্রে করুন।
© কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক ( যেমন অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানির সাথে ০২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ভিজিয়ে ০৭-১০ দিন পর পর ০২-০৩ বার স্প্রে করুন।
© বিঘা প্রতি ০৫ কেজি হারে পটাশ সার প্রয়োগ করুন।
ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলে পড়া ( Bacterial Wilt)
—————————————————————-
লক্ষণঃ
———
বেগুন গাছের পাতা ও ডগা বিকেলের দিকে ঢলে পড়ে, আবার সকালে সতেজ দেখায়। পাতা সবুজই থাকে, কোন পাতা হলুদ হয় না। কান্ডের নিচে চিরলে ভিতরে বাদামি রং এর দাগ দেখা যায়, চাপ দিলে ধূসর বর্ণের আঠালো তরল পদার্থ বের হয়। এছাড়াও আক্রান্ত ডগা বা কান্ড কেটে কাঁচের গ্লাসে পরিস্কার পানিতে ডুবালে দুধের মত সাদা সুতার কষ ( ব্যাকটেরিয়াল ওজ) বের হয়।
পরামর্শঃ
———–
© পানি জমে থাকলে, তা বের করার ব্যবস্থা করুন।
© অল্প সংখ্যক গাছ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলুন, এতে করে সংক্রমণের হার যেমন কমবে, অন্যদিকে বালাইনাশক প্রয়োগের খরচ সাশ্রয়ী হবে।
© নিরাপদ বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন লক্ষ্য হলে জৈব বালাইনাশক ডিকোপ্রাইমা প্রতি বিঘায় ১০০ গ্রাম হারে স্প্রে করুন।
© ব্যাকটেরিয়ানাশক যেমন ক্রোসিন প্রতি লিটার পানির সাথে ০.৮ গ্রাম হারে মিশিয়ে ০৭ দিন পর পর ০২-০৩ বার গাছের গোড়ায় ভিজিয়ে স্প্রে করুন।
© সাথে ট্রাই ব্যাসিক কপার সালফেট যেমন কিউ প্রোক্সাট প্রতি লিটার পানির সাথে ০৫ মিলি হারে
০৭ দিন পর পর ০২-০৩ বার গাছের গোড়ায় ভিজিয়ে স্প্রে করুন।
© এক্ষেত্রে ক্রোসিন ১ম বার করলে ০৭ দিন পর কিউ প্রোক্সাট স্প্রে করুন। তারপর আবার ০৭ দিন পর ক্রোসিন করুন। এভাবে অল্টারনেট করে করে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
® বেগুনের চারা রোপণের পূর্বে কিছু কাজ করে নিলে এ রোগগুলো অনেকাংশেই কমানো যায়। যেমন,
১) বপণ/ রোপণের পূর্বে কপার কপার অক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানির সাথে ০৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিন।
২) প্রতি শতাংশ জমিতে ০১-০২ কেজি হারে ডলোচুন বা পাথরে চুন ব্যবহার করতে পারেন।
৩) নেমাটোড বা কৃমি দমনে দানাদার ফুরাডান বিঘা প্রতি ০৩ কেজি হারে প্রয়োগ করুন।
® আপনার জমিতে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা গেছে, তা মিলিয়ে নিয়ে ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে আপনার ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে জমি পরিদর্শন করিয়ে তার পরামর্শ মোতাবেক ব্যবস্থা নিন।
© কৃষি বিষয়ক যে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন
উত্তর প্রদান করেছেন,
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
পুঠিয়া, রাজশাহী