এ সময়ের কৃষিঃ(পর্ব-১৫) কাজারি মেলন কি?এটি কি আমাদের দেশে চাষাবাদ করা যাবে?এ সময়ের কৃষিঃ(পর্ব-১৫) কাজারি মেলন কি?এটি কি আমাদের দেশে চাষাবাদ করা যাবে?

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

প্রশ্ন-১
কাজারি মেলন সম্পর্কে জানতে চাই, এইটি কি আমাদের দেশে চাষাবাদ করা যাবে, স্যার ?

পরামর্শঃ
———–
ধন্যবাদ, আপনার প্রশ্নের জন্য।
কাজারি মেলন বাংলাদেশে নতুন হলেও পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এইটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। সম্প্রতি আমাদের দেশেও এই কাজারি মেলন চাষাবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাঠের তুলনায় ছাদ বাগানে শৌখিনভাবেও কেউ কেউ লাগিয়ে ভালো রেজাল্ট পেয়েছেন। আসুন কাজারি মেলন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি……

কাজারি মেলন
———————
ভারতবর্ষে কাজারি বা কাজরি মেলন নামে পরিচিত হলেও মূলত এইটা মাস্ক মেলন এর একটা জাত।

বপনের সময়ঃ
——————-
এই বীজ বপনের সঠিক সময় ১) শীত আসার পূর্বে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে, ২) মার্চ থেকে জুন

মাটিঃ
——-
যে কোন ভালো মানের মাটি যেমন -বেলে মাটি, বেলে-দোয়াশ মাটি, দোয়াশ মাটি, লক্ষ্যনীয় বিষয় মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে হতে হবে যাতে তলদেশ পর্যন্ত সেঁচের ব্যবস্থা হয়, মাটির উপরের অংশে কোনভাবেই পানি জমতে দেয়া যাবে না।

বীজ বপণঃ
—————
০২ ফুট দূরে দূরে মাদা তৈরি করে প্রতি মাদায় ২-৩ টি বীজ বপণ করতে হবে।

জমিতে লক্ষণীয় বিষয়ঃ
——————————–
জমিতে চারা অবশ্যই উঁচুতে থাকতে হবে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি না জমে। মাটির উপরের অংশ অবশ্যই মালচিং করতে হবে। প্ল্যাস্টিক কাগজ বা মোটা কাগজ অথবা ভালো গেঞ্জির কাপড় দিয়ে এই মালচিং করা যেতে পারে।

বীজ অঙ্কুরোদগমঃ
————————-
০৫-১০ দিনের মধ্যে, অনেক সময় তাপমাত্রা কম হলে ১২-১৫ দিন সময়ও লাগে।

ফুল এবং ফলঃ
———————
বীজ অংকুরোদ্গমন হবার পর থেকে ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফুল আসে এবং ৩০-৪০ দিনের মধ্যে পরিপূর্ন ফল পাওয়া যায়।

সেচঃ
——
চারা অংকুরোদ্গম হবার পর থেকে ২-৩ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে এবং কোন অবস্থাতেই সেচ এমন দেয়া যাবে না যাতে পাত্রে অথবা চারার নিচে অনেক পানি জমে থাকে। ফুল আসার সাথে সাথে সেচ ব্যবস্থা প্রতি একদিন পর পর দিতে পাড়লে ভালো।

পরাগায়নঃ
————–
খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরাগায়ন। এক্ষেত্রে হাত পরাগায়ন পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখে । এতে করে ফল আকৃতিগত ভাবে গোলাকার হবে এবং এক একটি ফল ওজনে ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম, অনেক ক্ষেত্রে এর চেয়ে ও বেশী ওজন হতে পাড়ে।

পোকামাকড় ও রোগবালাইঃ
————————————–
মাছি পোকা ও ফল ছিদ্র কারী পোকা এই ফসলের প্রধান পোকা এবং ফল পঁচা ও পাতা কুকড়ানো প্রধান রোগ।

© এই জন্য ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারসহ জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে, সাথে ফল ব্যাগিং করতে হবে । যেহেতু সুপারসপে এই ফল বেশি বিক্রি হয় তাই নিরাপদ ভাবে ফল উৎপাদন করতে আক্রমণ দেখা যায়।

অতিরিক্ত পরিচর্যাঃ
————————–
যেহেতু এটি একটি লতা জাতীয় গাছ এবং এর লতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় তাই এর লতা ধারণের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

© ০২ (দুই) ভাবে এই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পাড়ে;
১) মাচা পদ্ধতি, ২) মালচিং পদ্ধতি,
পলিথিন মালচিং সর্বোত্তম, তবে মাটিতে খড়কুটো বিছিয়ে দিলেও হবে।

ফলনঃ
——–
এই ফল গাছের সঠিকভাবে চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন ভালো মত হলে এক একটি গাছ থেকে ৮ থেকে ১২ টি পর্যন্ত ফল পেতে পারেন। এক একটি ফল ওজনে ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রামের হয়, অনেক ক্ষেত্রে এর চেয়ে ও বেশী ওজন হতে পাড়ে।

© পরিপক্কভাবে ফল পাকার ২-৩দিন আগেই ফলটি গাছ থেকে কেটে সংরক্ষণ করতে হবে। তারপর বাজারজাত করতে হবে।

© বর্তমানে আমাদের দেশে এই ফল একদমই নতুন তারপরেও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে – আমাদের দেশের শহুরে সুপারসপ গুলোতে যেমন- এগোরা, মিনাবাজার, স্বপ্ন, ডেইলিশপিং এ এই ফল বিক্রি হতে দেখা যায়।

® এই ফলের সম্প্রসারণের জন্য আরো বেশি গবেষণা করা প্রয়োজন।

® যে কোন কৃষি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার পূর্বে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণের সাথে পরামর্শ করুন

উত্তর প্রদান করেছেন,
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
পুঠিয়া, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *