এ সময়ের কৃষিঃ(পর্ব-১৬) কোরআনিক ফল ' তীন' ফল চাষ পরামর্শ?এ সময়ের কৃষিঃ(পর্ব-১৬) কোরআনিক ফল ' তীন' ফল চাষ পরামর্শ?

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

প্রশ্ন-১ কোরআনিক ফল ‘ তীন’ সম্পর্কে জানতে চাই, আবার মিশরীয় ডুমুর বলে আমাদের দেশে যে ফলের চারা বিক্রি হচ্ছে, সেইটাই কি ‘তীন’ ফলের গাছ, আর এ গাছের চারা কোথায় পাবো স্যার?
পরামর্শঃ
———–
ধন্যবাদ, আপনাকে সুন্দর প্রশ্ন করার জন্য। যতটুকু জানতে পারছি ২০১১ সালে বাংলাদেশে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ‘ তীন ফল’ প্রথম চাষ শুরু হয়। বর্তমানে দেশের তা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশেষ করে টবে লাগানোর জন্য ছাদ বাগানীদের কাছে এই ফলের চারার চাহিদা ঈর্ষনীয়। আসুন ” তীন ” ফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক……
“তীন” ফল
————-
তীন বা ডুমুর মূলত মধ্যপ্রাচ্যের ফল। ডুমুরকে আরবিতে তীন বলা হয়। যার ইংরেজি নাম Fig এবং বৈজ্ঞানিক নাম Fiscus carica.।
© কোরআনে বর্ণিত তীন ফলের বাংলা নাম ডুমুর।
© তীনের বাংলা অর্থ আঞ্জীর বা ডুমুর। মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় এ ফলের উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে করা হয়।
© সৌদি আরব , কুয়েত, মিসরসহ আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে।
তীন ফলের জাতঃ
————————
তীন ফলের প্রায় ৮০০ প্রজাতির গাছ বিশ্বে পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও দেশি ডুমুর বলে পরিচিত ফল তম্মধ্যে একটি।
© আমাদের দেশে ডুমুরের অনুমোদিত কোনো জাত নাই। তবে গ্রামে গঞ্জে ডুমুরের যে গাছগুলো হয় সে ডুমুরগুলো “জগ ডুমুর ” নামে পরিচিত।
© তবে সাম্প্রতিক কালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ‘ তীন ফল’ বলে পরিচিত লাভ করা প্রজাতি হচ্ছে ‘ মিশরীয় ডুমুর’ (Egyptian Ficus) । এটি খুব রসালো ফল ও অনেক বড় হয়। এটি দু’ভাবে খাওয়া যায়। একটি হলো কাঁচায় সরাসরি খাওয়া। অন্যটি হলো রোদে শুকিয়ে কাঁচের কন্টেইনারে রেখে সারা বছর খাওয়া। অনেকে একে মিষ্টি ডুমুর বলেও অভিহিত করে।
© বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে মিশরীয় ডুমুরের পাঁচটি জাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে একটি নিউইয়র্কের ভ্যারাইটি, একটি ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যারাইটি ও দু’টি পাকিস্তানের ভ্যারাইটি।
তীন বা মিশরীয় বা মিষ্টি ডুমুরের বংশবিস্তারঃ
————————————————————-
ডুমুরের বংশবিস্তার করার সবচেয়ে সহজ ও ভালো পদ্ধতি হলো কাটিং । কাটিং পদ্ধতিতে বংশবিস্তারে সফলতার হার বেশি থাকে। কেননা কাটিং করার এক মাসের মধ্যেই চারা মূল টবে লাগানোর উপযুক্ত হয় । ডুমুরের কাটিং করা চারা টবে লাগানোর ৪-৫ মাসের মধ্যেই ফল ধরে।
চাষ পদ্ধতিঃ
—————–
টবে মাটি তৈরি ও সার প্রয়োগঃ
—————————————–
টবে চারা লাগানোর জন্য অন্ততপক্ষে ১২ থেকে ২০ ইঞ্চি মাটির টব অথবা ড্রাম ব্যবহার করতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে এই জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
© টবের মাটি তৈরি করার সময় দুই ভাগ দোআঁশ মাটি ও এক ভাগ পঁচা গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে এবং এই মাটিতে আপনাকে কিছু রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
© টিএসপি ৩০ গ্রাম, পটাশ ৩০ গ্রাম এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া সার একত্রে টবের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। প্রথমদিকে গাছে কম পরিমাণে পানি দিতে হবে, আস্তে আস্তে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হয়।
ডুমুর ফলের ব্যবহারঃ
—————————–
ডুমুর ফলের উপরের অংশ খুবই পাতলা হয় ফলটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং মিষ্টি পাকা ফলের আবরণ সহ পুরোটাই খেয়ে ফেলা যায়।
© পাকা ডুমুর রোদে শুকিয়েও খাওয়া যায়। তরকারি হিসেবে অনেকে আবার কাঁচা ডুমুর খেয়ে থাকেন।
© এছাড়া বিভিন্ন জ্যাম জেলি ও চাটনি তৈরিতে ডুমুর ফল ব্যবহৃত হয়।
পুষ্টি উপাদানঃ
——————-
ডুমুরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ছাড়াও প্রায় সব রকমের জরুরি নিউট্রিশনস যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম ইত্যাদি আছে।
© ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাবজনিত রোগে এটি বেশ কার্যকরী।
© কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফ্যাট,প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডুমুর ।
© পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ডুমুরের অনেক ঔষধী গুণও রয়েছে ।
রোগ নিরাময়ে ডুমুরঃ
—————————–
© ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে।
© ডুমুর দেহের ওজন কমানো, পেটের সমস্যা দূর করা এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখাসহ নানা উপকার করে থাকে।
© মৃগীরোগ, প্যারালাইসিস, হৃদরোগ, ডিপথেরিয়া, প্লীহা বৃদ্ধি ও বুকের ব্যথায় ডুমুর কার্যকরী।
© ডুমুর শরীরে এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। শরীরে পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
© ডুমুর পাতা ডায়াবেটিক রোগীদের ইনসুলিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালের নাশতার সঙ্গে ডুমুরের পাতার রস খেতে হবে।
© ডুমুর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
© এছাড়াও ডুমুর গাছের কষ পোকার কামড় বা হুল ফুটানো ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী।
ডুমুর প্রজাতি গাছের ধর্মীয় গুরুত্বঃ
———————————————–
পবিত্র কোরআনের ৩০তম পারার ৯৫ নম্বর সূরার প্রথম আয়াত وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ ‘ওয়াত্তীনি ওয়াযাইতূনি। বর্ণিত সূরায় আল্লাহতায়ালা তীন গাছের নামে শপথ করেছেন। সূরার প্রথম শব্দ তীন অনুসারে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে- সূরা আত-তীন।
© হিন্দুদের ক্ষেত্রে অশ্বত্থ একটি ধর্মীয় গাছ, যা ডুমুর প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ।
© বাইবেলে এই ফলের উল্লেখ আছে [৬]; সেখানে বলা হয়েছে, ক্ষুধার্ত যীশু একটি ডুমুর (আঞ্জির) গাছ দেখলেন কিন্তু সেখানে কোনো ফল ছিল না, তাই তিনি গাছকে অভিশাপ দিলেন।
© বৌদ্ধ ধর্মেও এই গাছ পবিত্র হিসেবে গণ্য। গৌতম বুদ্ধ যে বোধিবৃক্ষতলে মোক্ষ লাভ করেন তা ছিল অশ্বত্থ গাছ, যা একটা ডুমুর জাতীয় গাছ (Ficus religiosa বা Pipal)।
তীন বা মিশরীয় বা মিষ্টি ডুমুরের চারা প্রাপ্তির স্থানঃ
—————————————————————
সরকারী হর্টিকালচার সেন্টার ও নার্সারি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত যে কোন বেসরকারী নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারেন।
®® তবে অনলাইনে চারা কেনার আগে অবশ্যই নার্সারির নিবন্ধন ও বিশ্বস্ততা আছে কিনা, তা জেনে নিন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিন। রশিদের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করুন, প্রতারিত হলে উপজেলা কৃষি অফিসে লিখিত অভিযোগ করুন।

® কৃষি বিষয়ক যে কোন বিষয়ে জানতে কমেন্ট করুন

উত্তর প্রদান করেছেন,
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
পুঠিয়া, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *