কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
প্রশ্ন- বেবি কর্ণ আবাদ করতে চাই, এই ফসল সম্পর্কে বিস্তারিত বলবেন
পরামর্শঃ
————
ধন্যবাদ, আপনার সুন্দর প্রশ্নের জন্য।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে কৃষিকে বাণিজ্যিক ভাবে নিতে হবে। আর বাণিজ্যিক কৃষির জন্য প্রয়োজন নতুন জাত ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ। সেরকমই একটা জাত হচ্ছে বেবি কর্ণ। ভূট্টাকে ম্যাচিউর না করে প্রিম্যাচিউর অবস্থায় সংগ্রহ করা, অনেকটা এরকম, এতে করে অল্প সময়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।
আসুন বেবি কর্ণ সম্পর্কে জানি……
বেবি কর্ণ
————
বেবী কর্ণ এক ধরনের ভুট্টা। ইহা অত্যন্ত কচি অবস্থায় সবজি, সুপ,সালাদ, নুডুলস এর সাথে অথবা কাঁচা অবস্থায় রান্না ছাড়াই খাওয়া যায়। ভুট্টার মোচা দানা হওয়ার পূর্বেই সবুজ খোসা অপসারণ করে ব্যবহার করতে হয়।
জাতঃ
——–
বারি বেবি কর্ণ-১, এ জাতের বৈশিষ্ট্য—–
© গাছের গড় উচ্চতা ১৪২ সেমি।
© মোচার অগ্রভাগ সুচালো এবং মোচাতে সারির বিন্যাস সামঞ্জস্যপূর্ণ।
© প্রতিটি গাছে ২টি করে মোচা উৎপন্ন হয়। জাতটি টারসিকাম লিফ ব্লাইট (TLB) প্রতিরোধী।
© হেক্টরপ্রতি ১৫-২০ টন পশু খাদ্য পাওয়া যায়।
© রবি মৌসুমে গড় ফলন ১.২৭-১.৩০ টন/হেক্টার।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির বীজ পাওয়া যায়।
জীবন কাল:
—————-
গ্রীষ্মকাল : ৫০-৬০ দিন, শীতকাল : ৭০-৮০ দিন।
মাটি:
——
উঁচু ও মাঝারী উঁচু ঊর্বর বেলে দোআঁশ মাটি অথবা পানি দাঁড়ায় না এমন এঁটেল মাটিতে বেবী কর্ণ চাষ করা যায়।
জমি তৈরি:
————–
মাটির ‘জো’ থাকা অবস্থায় জমির প্রকারভেদে প্রমে ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
বপনের সময়:
——————
সারা বছর বেরী কর্ণ চাষ করা যায় (বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস ছাড়া)।
বীজের হার:
—————-
হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি।
বীজের বপন পদ্ধতি:
—————————
সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০-৫০ সেমি, গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২০-২৫ সেমি।
সারের পরিমাণ:
———————
গোবর প্রতি বিঘাতে ৫০ কেজি, ইউরিয়া ৭৫কেজি, টিএসপি ৪০ কেজি, এমপি ৪০কেজি, জিপসাম ২৫ কেজি দিতে হবে।
সারের প্রয়োগ পদ্ধতি:
——————————
জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে ইউরিয়া ১/৩ অংশ ও অন্যান্য সারের সবটুকুই জমিতে ছিটিয়ে চাষ দিয়ে মাটির সাথ ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান ২ ভাগ করে চারা গজানার ১৫-২০ দিন এবং ৩৫-৪০ দিনের মাথায় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ঊর্বরতাভেদে সারের তারতম্য হতে পারে।
আগাছা দমন:
——————-
গাছের বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন:
——————————
রবি মৌসুমে সাধারণত ২ বার সেচের প্রয়োজন হয় এবং ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় দিলে ভালো হয়। খরিফ মৌসুমে খরা দেখা দিলে সেচ দিতে হবে। খরিফ মৌসুমে অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
**পুরুষ ফুল ভাঙ্গা:**
—————————–
বেবিকর্ন চাষের প্রধান কাজ হল পুরুষ ফুল ভাঙ্গা। সব ফসলের বেলায় যেমন পরাগায়ণ দরকার হয় কিন্তু বেবিকর্নের বেলায় সেটা দরকার হয় না।
© গাছের বয়স যখন ৪০-৪৫ দিন বয়স হবে তখন প্রতি গাছে পুরুষ ফুল আসে অর্থাৎ শীর্ষ পাতার মাঝ বরাবর পুরুষ ফুলের মোচা দেখা যায়। এই মোচাগুলো ফুল ফোটার আগেই তুলে দিতে হয়। পুরুষ ফুল তোলা না হলে এটা ছোট ছোট ভু্ট্টায় পরিনত হয়ে যাবে। তাই বেবিকর্নের জমিতে কোন অবস্থাতেই পুরুষ ফুল থাকতে পারবে না।
রোগ-বালাই দমন:
————————
© বেবিকর্ন চাষে তেমন কোন রোগ-বালাই দেখা যায় না।
© তবে কখনও কখনও এই গাছের পাতা জলসে যেতে পারে। আর এই জলসানো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আক্রান্ত গাছ, ঝরা পাতা সংগ্রহ করে পুড়ে ফলতে হবে।
© আক্রান্ত ক্ষেতে প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি/ প্রাউড ২৫ ইসি ২ মিলি/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
——————
© বীজ বপনের ৬০-৭০ দিন পর ফসল সংগ্রহ শুরু হয় তবে এই সময়ের একটু বেশিও লাগতে পারে। সব ফসল সংগ্রহ করতে ১২-১৫ দিন সময় লাগতে পারে।
© বেবিকর্নের মোচার সিল্কা যখন ২ ইঞ্চি পরিমাণ লম্ব হবে তখনই এটা ধারালো চাকু বা কাচি দ্বারা কেটে মোচাটি গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে, তা না হলে বেবিকর্নের মান নষ্ট হতে পারে।
ফলন:
———
হেক্টর প্রতি ফলন ৪-৫ টন। গো-খাদ্য হিসেবে (গাছ) ২০-২৫ টন।
আর্থিক হিসাবঃ
———————
প্রতিবিঘা জমিতে যদি ১ টন থেকে ১২০০ কেজি বেবিকর্ন উৎপাদন হয়। প্রতিটি বেবিকর্নের মূল্য দুই টাকা হলে এবং প্রতি কেজিতে বেবিকর্নের সংখ্যা ১৫-২০টি হলে, বিঘাপ্রতি ৩০,০০০ টাকা বেবিকর্ন বিক্রি করা সম্ভব। সব খরচ বাদ দিয়েও আড়াই মাসে ১ বিঘা জমি থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এ ফসল দুই মাসের মধ্যেই শেষ হয়। ফসলের অবশিষ্ট অংশ জ্বালানী এবং পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
© কৃষি বিষয়ক যে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন
উত্তর প্রদান করেছেন,
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
পুঠিয়া, রাজশাহী