এ সময়ের কৃষিঃ(পর্ব-১৮) মালচিং পেপার কি, কোন ধরনের সবজিতে এটাতে ব্যবহার করা হয় এবং এর সুবিধা কি?এ সময়ের কৃষিঃ(পর্ব-১৮) মালচিং পেপার কি, কোন ধরনের সবজিতে এটাতে ব্যবহার করা হয় এবং এর সুবিধা কি?

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

প্রশ্ন-১ মালচিং পেপার কি, কোন ধরনের সবজিতে এটাতে ব্যবহার করা হয় এবং এর সুবিধা কি?
পরামর্শঃ
ধন্যবাদ, স্যার । সুন্দর প্রশ্ন করার জন্য, আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি, আপনি আমার লেখাগুলো পড়েন বলে। আমার জন্য দোয়া করবেন স্যার।
© সবজি চাষে ব্যবহার করতে হয় নানা ধরনের কীটনাশক। এসব কীটনাশক কিংবা ওষুধের ফলে মানবদেহের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এ নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচতে প্রয়োজন কীটনাশকের কম ব্যবহার ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা প্রয়োজন।
© তাই,বিষমুক্ত সবজি চাষে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে সচেতন মানুষ। আর এই ধরনের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির নাম মালিচিং পেপার বা প্লাস্টিক মালচিং বা মালচিং ফ্লিম পদ্ধতি ।
প্রথমেই জানা যাক,
মালচিং কী?
——————
‘মালচিং’ এসেছে ‘মালচ’ শব্দ থেকে। ‘মালচ’ শব্দের অর্থ ‘মাটি ঢেকে দেওয়া’। মৃত অথবা পুরোনো, শুকনো বা কাঁচা পাতা, বিচালি বা খড়, কচুরিপানা প্রভৃতি দিয়ে মাটি ঢেকে চাষ করার প্রথা চালু রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশে। চাষের জমিতে এসব বস্তু দিয়ে যখন ঢেকে দেওয়া হয়, তখন তাকে ‘মালচ’ বলা হয়।
© তবে বর্তমানে চাষাবাদ বাণিজ্যিক ও আধুনিকীকরণ হওয়ায় এ পুরোনো প্রথা বর্জন বা ত্যাগ করে এক ধরনের প্লাস্টিকের পেপার ব্যবহার হচ্ছে, যা ‘মালচিং’ নামে পরিচিত।
প্লাস্টিক মালচিং পেপার বা ফিল্ম কেমন হয়?
—————————————————————
© সাধারণ মালচিং এর চেয়ে প্লাস্টিক মালচিং একটু ভিন্ন। পলিথিন জাতীয় এ সীটের উপরের রঙ সিলভার এবং নিচের রঙ কালো।
© সাধারণত একটি মালচিং ফিল্ম দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার ও প্রস্থ চার ফুট। মালচিং পেপার ২৫ থেকে ৩০ এছাড়াও বিভিন্ন মাইক্রোনের হতে পারে এটির এক পাশে কালো অন্যপাশে সিলভার ছাড়াও বিভিন্ন কালার হয়ে থাকে।
প্লাস্টিক মালচিং ব্যবহার পদ্ধতি:
——————————————–
© সবজি চাষের ক্ষেত্রে এটি উপযোগী পদ্ধতি। বেলে ও দোআঁশ মাটির ক্ষেত্রে এটি উপযোগী পদ্ধতি।
© একটি সারির জন্য পাতলা প্লাস্টিকের থান দূরত্ব অনুযায়ী কেটে নিতে হবে। আর এই থানের উপর ফসল অনুযায়ী এর ফুটো করে নিতে হবে। এর পর ফসল ভিত্তিক প্রয়োজনীয় জৈব সার বেশি পরিমাণে রাখতে হবে, যাতে কোনও নুড়ি, পাথর, ঢেলা না থাকে।
© মালচিং করার আগে মাটির সঙ্গে প্রয়োজন মতো জৈব সার মিশিয়ে বেড তৈরি করতে হবে। এক বেড থেকে আরেক বেডের দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত।
© এর পর একটি করে থান শিট মাটির উপর বিছিয়ে দিতে হবে। শিটের ধারগুলি চার থেকে ছ’ইঞ্চি মাটির গভীরে ঢুকিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে। যা প্লাস্টিকগুলিকে মাটির সঙ্গে ধরে রাখতে সাহায্য করে। এবার ফুটোগুলির ভিতর দিয়ে বীজ বা চারা রোপন করতে হবে।
© মালচিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত হলো ড্রিপ বা বিন্দু সেচ। যদি তার সুযোগ না থাকে তাহলে এক একটি সারির পর ছোট নালা তৈরি করেও সেচ দেওয়া যায়। প্লাস্টিকগুলি ৬-৭ বার একই ধরনের ফসলের চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব।
© মালচিং আধুনিক চাষাবাদের এক উন্নত পদ্ধতি, যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ফসলের দ্রুত বৃদ্ধি হয়। তাছাড়া এ পদ্ধতির মাধ্যমে চাষের অনুকূল পরিবেশও তৈরি করা সম্ভব।
যে ধরনের ফসলে মালচিং ব্যবহার করা হয়ঃ
————————————————————
© সকল ধরনের সবজি চাষের ক্ষেত্রে এটি উপযোগী পদ্ধতি।
© এই পদ্ধতিতে মরিচ, টমেটো,শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, তরমুজ, স্কোয়াশ, বেগুন, ক্যাপসিকাম স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা যায়।
© সাধারণত লাইন শোয়িং এ যে ফসলগুলো আমরা চাষবাদ করে থাকি সেগুলোতেই মালচিং ফিল্ম ব্যবহার করা অনেক সাশ্রয়ী একটি পদ্ধতি।
মালচিং পেপার ব্যবহারের সুবিধা ঃ
————————————————-
বর্তমানে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার জন্য অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎচালিত মোটর ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের বেশ অপচয় হয়। তবে মালচিং পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা হলে পানি ও বিদ্যুতের অপচয় রোধ করা যাবে। এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ কমিয়ে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায়। মালচিং ব্যবহারের কিছু সুবিধা উল্লেখ করা হলো:
পানি সংরক্ষণ:
——————–
ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী। কারণ প্লাস্টিক মালচিং ব্যবহারের ফলে মাটির রসের বাষ্পায়ন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে মাটির উপরিতল থেকে যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়, তা ওই প্লাস্টিকের আবরণে বাধা পেয়ে ঘনীভূত হয়। যা বিন্দু বিন্দু জলকণায় পরিণত হয়ে আবার মাটিতেই ফিরে আসে। এতে জমিতে দু’টি সেচ পর্বের ব্যবধান বাড়ানো সম্ভব হয়। ফলে সেচ কম লাগে অর্থাৎ সেচের খরচ কম হয়। সেচ বা বৃষ্টির পানি শুধুমাত্র প্লাস্টিকের ফুটো করার অংশ দিয়ে শিকড়ের কাছের অংশের মাটিতে প্রবেশ করে। এর মাধ্যমে পানির যথাযথ ব্যাবহার ও সংরক্ষণ সম্ভব হয়। ভিতরের রঙ কালো হওয়ায় পানি ধরে রাখার পাশাপাশি এই রঙের কারণে গাছের শিকড় বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদন হয় বেশি। পদ্ধতিতে ৭০% পর্যন্ত পানির অপচয় কমানো যায়।
আগাছা নিয়ন্ত্রণঃ
————————
মালচিংয়ের ছিদ্র দিয়ে রোপণ করা গাছ বেরিয়ে আসে। আর বাকি অংশটুকু ঢেকে থাকায় আগাছা বের হতে পারে না। অর্থাৎ, প্লাস্টিকে ঢেকে থাকার কারণে সেখানে সূর্যালোক পৌঁছাতে পারে না। ফলে সালোকসংশ্লেষণ সংগ্রহ করতে না পারায় ওই অংশে আগাছা জন্মায় না। এতে মাটির পুরো খাদ্য গাছ একাই পায়। ফলে ভালো হয় ফলন।
পোকা নিয়ন্ত্রণঃ
———————
মালচিংয়ের ফলে পোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিমাটোড বা ফসলে কৃমির আক্রমণ রোধ হয়। পলিথিন-জাতীয় এ শিটের ওপরের রঙ সিলভার, নিচের রঙ কালো। সিলভারে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়। ফলে পোকা বসতে পারে না। গাছে পোকা ধরে কম। এতে গাছ ও ফল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না
সারের ব্যবহার হ্রাসঃ
—————————-
এ পদ্ধতি ব্যবহারে জমি ও গাছে তুলনামূলক কম সার দিতে হয়। এতে চাষির খরচ কমে যায়।
দ্রুত অঙ্কুরোদ্গমঃ
————————-
প্লাস্টিক শিট দিয়ে মাটি ঢেকে রাখার ফলে ঢাকা অংশের উষ্ণতা রাত ও শীতকালে তুলনামূলক তপ্ত থাকে। ফলে বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গম দ্রুত হয়। এছাড়া শীতকালে মালচ ব্যবহার করলে মাটিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব।
ফলের রঙ ধারণঃ
————————
প্লাস্টিক মালচিংয়ের প্রতিফলিত আলো ফলের রঙ ধারণে সহায়তা করে।
© মালচিং পেতে এই নাম্বার গুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন——( অনলাইন শপিং)
01882029404
01723231343
01611329993
( যেহেতু নাম্বার গুলো অনলাইন থেকে সংগৃহিত, তাই কথা বলে সিউর হয়ে বিশ্বস্ত মনে হলে অর্ডার করবেন। এই জন্য লেখক দায়ী থাকবেন না)
® যে কোন কৃষি বিষয়ক জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন

উত্তর প্রদান করেছেন,
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
পুঠিয়া, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *