করতে পারেন হরিণের খামার, অনুমতি দেবে সরকারকরতে পারেন হরিণের খামার, অনুমতি দেবে সরকার

বাংলাদেশেই বৈধভাবে কিছু কিছু বন্যপ্রাণী পালন করার সুযোগ রয়েছে। চাইলে আপনিও হরিণের খামার গড়ে তুলতে পারেন। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি মিলবে।

চারটি বন্যপ্রাণী পালন করতে পারেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অনুমতি নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ কয়েক রকমের বন্যপ্রাণী পালন করতে পারেন।

এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, হাতি, হরিণ, কুমির আর ময়ূর, এই চারটি প্রাণী পালন করার জন্য আমরা অনুমতি দিয়ে থাকি। এর বাইরে আর কোনো বন্যপ্রাণী খাঁচায় বা আটকে রেখে পালন করলে সেটি পুরোপুরি অবৈধ হবে।

এর বাইরে অনুমতি নিয়ে পোষাপাখির খামার ও সাপের খামার তৈরির সুযোগ রয়েছে। পোষা পাখির মধ্যে ময়ূরের খামার তৈরির জন্যও উৎসাহিত করছেন কর্মকর্তারা। এসব প্রাণী বা পাখি লালন-পালন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের বিধিমালা রয়েছে।

বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে খামার আকারে হরিণ ও হাতি পালনের সুযোগ রয়েছে। ১০টি হরিণ বা একটি হাতি থাকলেই তাকে খামার হিসেবে গণ্য করা হবে। শখের বশে অথবা জীবন্ত বিক্রির উদ্দেশ্যে হরিণ বা হাতি পালন করা যাবে। কিন্তু মাংস খাওয়া বা বিক্রির উদ্দেশ্যে হরিণ জবাই করা যাবে না।

হরিণ ও হাতি লালন-পালন বিধিমালা-২০১৭ অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া হরিণ ও হাতি পালন করা হলে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। সেজন্য এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

সিটি করপোরেশন এলাকায় এ ধরনের খামারের জন্য লাইসেন্স ফি ২০ হাজার টাকা, সিটি করপোরেশনের বাইরে ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি হরিণের জন্য পজেশন ফি এক হাজার টাকা দিতে হবে।

যে এলাকায় খামার তৈরি করা হবে, সেই এলাকার বন কর্মকর্তার কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। খামার মালিকের নিজের, ভাড়ায় বা সরকারি জমির দীর্ঘমেয়াদি দখল থাকতে হবে।

খামারে প্রতিটি হরিণের জন্য অন্তত ১০০ বর্গফুট আয়তন এবং ১০ ফুট উঁচু শেড থাকতে হবে। সেখানে দানাদার খাবার, খনিজ লবণ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। খামারের চারদিকে ১০ ফুট উঁচু নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকতে হবে।

যেসব বনে প্রাকৃতিকভাবে হরিণ পাওয়া যায়, সেখান থেকে এসব খামার অন্তত ৩০ কিলোমিটার দূরে হতে হবে। যারা শখের বশে হরিণ লালন-পালন করবেন, সেই খামারে হরিণের সংখ্যা ১০টির বেশি হলে খামারি হিসেবে আবেদন করতে হবে।

হরিণ বা হাতির সংখ্যা বেড়ে গেলে, বিক্রি করার প্রয়োজন হলে বা পজেশন সার্টিফিকেট বাতিল হলে বন কর্মকর্তার লিখিত অনুমতিতে হরিণ বা হাতি বিক্রি, বিনিময় বা দান করতে পারবেন। তবে যার কাছে হরিণ হস্তান্তর করা হবে, তারও হরিণ পালনের লাইসেন্স বা অনুমতি থাকতে হবে।

বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, মাংসের জন্য খাওয়া বা মাংস, চামড়া বিক্রির জন্য হরিণ জবাই করতে পারবেন না। হরিণ মারা গেলেও সেটির চামড়া, মাথা বা হাড় কাউকে দিতে বা বিক্রি করতে পারবেন না। সেগুলো বন বিভাগে জমা দিতে হবে।

 

হাতি বা হরিণ বাচ্চা দিলে, হরিণ বা হাতির মৃত্যু হলে ১৫ দিনের মধ্যে ভেটেরিনারি সার্জন কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটসহ সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের দপ্তরকে অবহিত করবেন। হাতির বাচ্চা হলে ৯০ দিনের মধ্যে সেটির কানে ট্যাগ করে চিহ্নিত করতে হবে। এসবের ব্যত্যয় ঘটলে কারাদণ্ডসহ জরিমানার বিধান রয়েছে বিধিমালায়।

সম্প্রতি বাগেরহাটের একটি রিসোর্ট থেকে কুমির, বানর, গুই সাপ, মেছো বিড়াল, বনবিড়াল, সাপ-এসব মিলিয়ে ১৪টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে অবমুক্ত করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগের অভিযোগ, দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির এসব বন্যপ্রাণী অবৈধভাবে আটকে রেখেছিল ওই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত মাসের শুরুতে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের কয়েকটি ইকোপার্ক থেকে ১০ প্রজাতির ২৬টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছিল বন বিভাগ।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *