ড. মনসুর আলম খান
কোভিড ১৯-এর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জীবন ও জীবিকা উভয়ই পড়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’র মতে, যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে করোনা-পরবর্তী সময়ে সারাবিশ্বে অপুষ্টি-অনাহারে প্রায় তিন কোটি লোকের প্রাণহানি হতে পারে। তাই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারক’দের আগাম সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আসন্ন এই খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে’ এরূপ নির্দেশনা দিয়েছেন।
এমনই প্রেক্ষাপটে মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কৃষি খাতকে চিহ্নিত করেছেন সার্বিক ‘অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভিত্তি’ হিসেবে।
বাজেটে কৃষি খাতকে স্বাস্থ্য খাতের পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্যনিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা, বর্তমান অর্থবছরের জন্য যা আছে ২১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। আর ভূমি, বন ও পরিবেশ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সার্বিক কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বর্তমান অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা বেশি।
আমরা জানি যে, বর্তমানে বিদ্যমান উন্নয়ন দলিলগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ভিশন-২০২১ ও ২০৪১, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮, জাতীয় মৎস্যনীতি-১৯৯৮, জাতীয় পোলট্রি উন্নয়ন নীতিমালা-২০০৮, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮, আইপিওএ ইত্যাদি। এসব নীতিদলিলে বর্ণিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংসদে উপস্থাপিত বাজেট মূলত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রাক্কলন এবং ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রক্ষেপণ। অর্থাং বাজেট মূলত একটি তিন বছরের পরিকল্পনা। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে এবং অবধারিতভাবে পরিবর্তন এসেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তথা কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দে।
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছরের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৫ হাজার ৪৪১ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বর্তমান অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৪৮৪ দশমিক ৮৭৭৬ কোটি টাকা বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৮৯৭ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ (এডিপি) উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৪৩ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মাঝে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে ভর্তুকি বাবদ। ওই বরাদ্দপ্রাপ্তিতে কৃষিমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘করোনার বাস্তবতা মেনে নিয়ে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তার মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেট।’
কৃষি খাতের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ৩ হাজার ১৯১ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৬৬১ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা বেশি। এর মাঝে পরিচালন ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৫৮০ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ১ হাজার ৬১১ দশমিক ৮০ কোটি টাকা। কৃষি খাতভুক্ত অপরাপর মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা (পরিচালন ৬৪৮ ও উন্নয়ন ৫৯৯ কোটি টাকা), ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা (পরিচালন ১ হাজার ১৭১ ও উন্নয়ন ৮৪৪ কোটি টাকা) এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৮ হাজার ৮৯ কোটি টাকা (পরিচালন ১ হাজার ৮২০ ও উন্নয়ন ৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা) বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভিশন হলো ‘টেকসই, নিরাপদ ও লাভজনক কৃষি’। কোভিড-১৯ এর অভিঘাতসহ বিভিন্ন আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, কৃষি বিপণনব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রণয়ন করেছে ‘কর্মপরিকল্পনা-২০২০’। ওই কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের জন্য কৃষিমন্ত্রী পরামর্শ করেছেন এ খাতে অভিজ্ঞজনের সঙ্গে। শ্রমিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি মোকাবিলা করে শস্যনিবিড়তা বৃদ্ধি এবং নষ্ট ও অপচয় কমানোর জন্য ‘কর্মপরিকল্পনা-২০২০’তে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে। লকডাউনের ফলে এ বছর বোরো ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট প্রকট হলে প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক নির্দেশনায় চলমান অর্থবছরে যান্ত্রিকীকরণ খাতে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় করা হচ্ছে ২০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে হারভেস্টার, রিপার, ট্রান্সপ্লান্টার, ট্রাক্টর ইত্যাদি কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি দেওয়ার জন্য এডিপির আওতায় ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। ওই প্রকল্প থেকে কৃষি যন্ত্রপাতি কেনায় হাওরাঞ্চলের জন্য সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হবে। তা ছাড়া দেশীয় পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উপকরণে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ইউরিয়া ২৪ দশমিক ৫০ লাখ টন, টিএসপি পাঁচ লাখ টন, এমওপি ৭ দশমিক ৫০ লাখ টন ও ডিএপি ১৩ লাখ টন সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব সারের আমদানি খরচ ও কৃষক পর্যায়ে বিক্রয় মূল্যের পার্থক্য সরকার কর্তৃক ভর্তুকি হিসেবে বিএডিসি, বিসিআইসি ও বেসরকারি আমদানিকারকদের ঋণপত্র স্থাপনকারী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ বিভাগ থেকে পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ প্রতি কেজি সার প্রয়োগের ক্ষেত্রেই কৃষক সরাসরি এই ভর্তুকি সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেমন ডিএপি সারের আমদানি খরচ পড়ে কেজিপ্রতি প্রায় ৩০ টাকা, কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হয় ১৬ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ডিএপি সার প্রয়োগে কৃষক ১৪ টাকা প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। আগামী অর্থবছরে সারের ভর্তুকি বাবাদ ৬-৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে মর্মে হিসাব করা হচ্ছে।
আম্পান, আইলার মতো দুর্যোগ প্রতিকূলতায় কৃষকের পাশে থেকে তাদের মনোবল সুদৃঢ় রাখার লক্ষ্যে কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা হিসেবে সার, বীজ, চারা ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে করোনা মহামারীর সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং মানুষের জীবন-জীবিকার পাশাপাশি কৃষকদের সবল ও উৎপাদনসক্ষম রাখার লক্ষ্যে কৃষি পুনর্বাসন খাতে বর্তমান বছরের ১২০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবের কারণে খরা, বন্যা, দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদার বিপরীতে হ্রাস পাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গবেষণা সংস্থাগুলোর অনুকূলে প্রস্তাবিত পরিচালন ও উন্নয়ন বরাদ্দের সিংহভাগই ব্যয় হবে শস্যনিবিড়তা বৃদ্ধিসহ স্বল্প জীবনকালীন ও ঘাতসহনশীল নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রচেষ্টায়। কৃষি খাতের বাজেটের অংশ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও অভিযোজনের সক্ষমতা অর্জনে আগামী অর্থবছরে ব্যয় হবে প্রায় ৫ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ প্রধানমন্ত্রীর এরূপ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক আগামী অর্থবছরব্যাপী বাস্তবায়িত হবে বিশেষ প্রকল্প। বসতবাড়ি ও শহরাঞ্চলের বাড়িতে পুষ্টিবাগান সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কালিকাপুর মডেলের আদলে ১৭৮ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে বীজ, চারা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ।
কৃষিপণ্যের যথাযথ বাজারজাত করার মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুদীর্ঘকালের চ্যালেঞ্জ। সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, বিশেষায়িত ফসল সংরক্ষণাগার সম্প্রসারণ, বাজার অবকাঠামো আধুনিকায়ন, ই-কৃষি বিপণনব্যবস্থা চালুকরণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে আগামী অর্থবছরে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে চলমান অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ৬৭ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ১৩১ দশমিক ৯৫ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
করোনা মহামারীর প্রভাবে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতিতে গম আমদানির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ বিদেশি অর্থসহায়তা এবং নিজস্ব তহবিল থেকে আগামী অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকার গম এবং ১০৫ কোটি টাকার চাল আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে। তা ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা হবে ২ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকার চাল এবং ১৫০ কোটি টাকার গম। কৃষকের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান, চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বর্তমান অর্থবছরের তুলানায় প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।
‘সকলের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণ’ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভিশন। মাছ ও মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মিঠা পানির মাছের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে গবেষণা জোরদার করা এবং গভীর সমুদ্রের মৎস্যসম্পদ আহরণে প্রযুক্তি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৯৪ কোটি টাকা।
‘সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০২০’ চূড়ান্ত অনুমোদন এবং সে মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করাই হবে আগামী অর্থবছরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ, পশুখাদ্য সংরক্ষণের ডোল পদ্ধতি সম্প্রসারণ, সুনীল অর্থনীতির অপার সম্ভাবনা কাজে লাগানো ইত্যাদি উদ্দেশ্যে আগামী অর্থবছরে তিনটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন, তিনটি প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কমবেশি ৪০টি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। দেশীয় পোলট্রি, ডেইরি, মৎস্যশিল্পকে উৎসাহ জোগাতে একদিকে এ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল যেমন সোয়া তেল, প্রোটিন কেক ইত্যাদির আমদানি শুল্ক পরিহার করা, অন্যদিকে এসব শিল্পের প্রতিরক্ষণে কতিপয় বিদেশি প্রোটিনজাত পণ্যের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিগত বছরগুলোয় কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে কৃষি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তথাপি, কৃষিপণ্যের মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে আছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। যেখানে অদূরবর্তী থাইল্যান্ডের এ খাত থেকে বার্ষিক আয় প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার। কৃষিজ জিডিপির পরিধি বাড়ানোর জন্য এখন দরকার উচ্চমূল্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অধিক মূল্য সংযোজন করে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বাড়ানো। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রবেশের জন্য নিশ্চিত করতে হবে উত্তম কৃষি পদ্ধতির প্রয়োগ। এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটের আওতায় কৃষক, বেসরকারি কৃষি উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় কৃষি ব্যবসায়ীদের কম সুদে (৪ শতাংশ হারে) ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা।
নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ উভয় প্রকার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষণীয় হারে। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বিগত দিনের সফলতাকে ধারণ করে জনগণের করের টাকা শতভাগ আন্তরিকতা দিয়ে ব্যয় করাই এখন একান্ত জরুরি। কোভিড-১৯ অভিঘাতের বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার সফল হবে, জাতি এ প্রত্যাশাই করছে।
ড. মনসুর আলম খান : মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব কৃষি মন্ত্রণালয়
সুত্রঃ আমাদের সময়