মুহাম্মদ শফিউজ্জামান

ধারণা করা হয়েছিল ঘরে থাকলে ও খুব করে নিয়ম মানলে করোনা কাছে ঘেঁষতে পারবে না। সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে যাবে। কমবে মহামারির প্রকোপ। আর বিজ্ঞানীদের গবেষণা তো চলছেই। ওষুধ বা টিকা কিছু একটা বেরলে সমস্যা মিটবে পুরোপুরি।কিন্তু ডুব্লিওএইচও’র ভাষ্যমতে সবটাই এখনো অনেক দুরে। তই করোনা সাথে বসবাসের মানসিক ও শাররীক প্রস্তুতি নিতেই হবে এবার আমাদের।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগ ঠেকানোর ৮০ শতাংশ চাবিকাঠি আছে হাত ধোওয়ার মধ্যে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় হাত ধুতে হবে। আপনি যদি এমন জায়গায় হাত দেন যেখানে জীবাণু থাকার আশঙ্কা আছে, যেমন পরিবহণে উঠলে, লিফটের বোতাম-দরজার হাতল বা সিঁড়ির রেলিং ধরলে, পাঁচ জন ব্যবহার করে এমন কিছুতে হাত দিলে, টাকা দেওয়া-নেওয়া করলে ইত্যাদি, সেই হাত নাকে-মুখে-চোখে বা অন্য কোথাও লাগার আগেই ভাল করে ধুয়ে নিতে হয়। ধুতে হয় খাওয়ার আগে, টয়লেট থেকে এসে। কাজেই বাইরে বেরনোর সময় সঙ্গে ছোট একটা সাবান ও ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল আছে এমন স্যানিটাইজার নিন। কিছু টিস্যু পেপার বা পরিষ্কার রুমাল রাখুন। হাত ধোওয়ার সুযোগ থাকলে সাবান পানিতে হাত ধুয়ে নিন। না হলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। সাধারণ সাবান হলেই হবে।
• সাধারণ মানুষের গ্লাভস পরার দরকার নেই। নিয়ম মেনে না পরলে উল্টে বিপদের আশঙ্কা বেশি। তার চেয়ে হাত ধুয়ে নেওয়া অনেক নিরাপদ।
• রাস্তায় বেরলে মাস্ক বাধ্যতামূলক। অফিসেও পরে থাকবেন। কাপড়ের ট্রিপল লেয়ার মাস্ক সবচেয়ে ভাল। তবে গরমে অসুবিধে হলে ডাবল লেয়ারই পরুন। বেশ বড় মাপের। নাকের উপর থেকে চিবুকের নীচ ও কান পর্যন্ত গালের পুরোটাই ঢাকা থাকতে হবে।
• মাস্ক পরছেন বলে মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখবেন না, এমন যেন না হয়। ৬ ফুটের বেশি দূরত্ব রাখতে পারলে সবচেয়ে ভাল। নয়তো কম করে ৩ ফুট।
• চোখে চশমা থাকলে আর কোনও সাবধানতা লাগবে না। না থাকলে রোদচশমা পরেন। কারণ চোখ দিয়েও কিন্তু জীবাণু ঢুকতে পারে।
• নিয়মিত ধোওয়া যায় এমন স্যান্ডেল বা জুতো পরে বেরবেন।
• গয়নাগাটি পরে বেরবেন না। কারণ ধাতুর উপর থেকে যেতে পারে জীবাণু। ঘড়ি পরারও দরকার নেই।
• রাস্তার কিছু খাওয়া এ সময় ঠিক নয়। বড় রেস্তরাঁয় যদি সব নিয়ম মেনে খাবার বানানো হয়, এক-আধ বার খেতে পারেন। তবে সে সবও যত এড়িয়ে যেতে পারবেন তত ভাল।
• জুতো বাইরে খুলে ঘরে ঢুকবেন। এর পর বাথরুমে গিয়ে জামাকাপড়, চশমা সাবান-পানিতে ধুয়ে, তুলোয় স্যানিটাইজার ভিজিয়ে মোবাইল পরিষ্কার করে ভাল করে সাবান মেখে, শ্যাম্পু করে গোসল করবেন।
• বাড়িতে কাজের লোক বা অন্য কেউ এলে ঘরে ঢোকার আগে হাত এবং পা ভাল করে সাবান পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। ধোওয়া মাস্ক পরতে হবে। স্নান করে জামাকাপড় বদলে নিতে পারলে আরও ভাল।
• খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। বাহুল্য বর্জিত হালকা খাবারই ভাল এই সময়। ঘরে বানানো সাধারণ বাঙালি খাবার। ভাজা-মিষ্টি একটু কম খাওয়া ভাল। ফল খাবেন সুবিধেমতো। মাছ-মাংস-ডিম, যাঁর যেমন সুবিধে।
• প্রচুর পানি খাওয়ার কোনও দরকার নেই। শরীর যতটুকু চায় ততটুকু খেলেই হবে।
• ভেষজ উপাদান খেতে ইচ্ছে হলে খাবেন। না খেলেও ক্ষতি নেই। কারণ আদা, ভিনিগার ইত্যাদিরা ভাইরাস মারতে পারে না। পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খেলে, অল্প ব্যায়াম করলে ও ভাল করে ঘুমোলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিই ঠিক থাকবে।
• গায়ে হালকা রোদ লাগানো খুবই দরকার। সকালের দিকে একটু মর্নিং ওয়াকে গেলে ব্যায়ামও হবে, রোদও লাগবে গায়ে।

অফিসে করণীয়ঃ

•অফিস রুম নিজেকেই খুলতে হবে।
•সম্ভব হলে রুমের দরজা খুলে রাখতে হবে। এতে করে সংস্পর্শ কম হবে।
•নিজের টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার, ল্যাপটপ নিজেকেই পরিস্কার করতে হবে।
•অপ্রয়োজনীয় স্বাক্ষাৎ পরিহার করতে হবে। ইন্টারকম, মেসেন্জার, হোয়াটস অ্যাপ, ই-মেইল , ফোন ব্যবহার করে যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ পরিহার করতে হবে।
•অপ্রয়োজনীয় দর্শনার্থী পরিহার করতে হবে।
•আপ্যায়ন করা ও আপ্যায়িত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
•টেবিলের সামনে চেয়ার কমাতে হবে।
•অফিস সহায়ক নির্ভরতা কমাতে হবে।
•প্রয়োজনীয় সভা,সেমিনার, সাক্ষাৎ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে করতে হবে।
• বাসা থেকে অবশ্যই খাবার ও পর্যাপ্ত পানি নিয়ে যেতে হবে। সাথে চামচ নিতে হবে। খাবারের বক্স, চামচ, পানির বোতল বাসায় এসে পরিস্কার করতে হবে।
• একস্ট্রা মাস্ক অবশ্যই সাথে রাখতে হবে।
• জীবানুনাশক রাখতে হবে।

যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন। নিয়ম মানুন। অতিরিক্ত কিছু করার দরকার নেই। করে লাভও নেই। কারণ কিসে ভাইরাস মরবে, তা কেউ জানে না। কাজেই তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সবকিছু সীমিতভাবেই করুন।

লেখক মুহাম্মদ শফিউজ্জামান
অতিরিক্ত উপপরিচালক (পারসোনেল), প্রশাসন ও অর্থ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, অর্থ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ,খামারবাড়ি, ঢাকা
DAE

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *