নিউজ ডেস্কঃ
করোনাভাইরাসে প্রতিনিয়তই আক্রান্ত হচ্ছেন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। করোনা মহামারিতে দেশের খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারাও রয়েছেন এই আক্রান্তের তালিকায়। এখন পর্যন্ত তাদের ৩৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। যার মধ্যে রয়েছেন খোদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আব্দুল মুঈদ এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (পিআরএল) ডা. আইনুল হক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শারিরীক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং তাঁর প্রথম রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্টজনরা। গত ১০ মে তাঁকে হাসপাতালে ভর্ত করা হয়। সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হন ড. মুঈদ।
অধিদপ্তরের আক্রান্ত অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকার কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট-এটিআই এর মুখ্য প্রশিক্ষক নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী। এছাড়া ঢাকার বাইরে পাঁচ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবং ছয়জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উিইং।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার কৃষিবিদ মো: নজরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার কৃষিবিদ মো: নাজমুল ইসলাম, সিলেটের জৈন্তাপুরের কৃষিবিদ মো: ফারুক হোসেন, হবিগঞ্জের মাধবপুরের কৃষিবিদ মো: সাইফুল ইসলাম এবং চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কারিমা আক্তার
এছাড়াও সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সুব্রত দেবনাথ আক্রান্ত হয়েছেন।
আক্রান্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের ২জন, কুমিল্লার ২জন, নারায়ণগঞ্জ, জয়পুরহাটের ১ জন। এছাড়া চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া কৃষি অফিসের উচ্চমান সহকারী এবং একজন গাড়িচালকও করোনায় আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সবচে বেশি আক্রান্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরেই রয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ১০ জন কর্মকর্তা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। যার মধ্যে রয়েছেন অধিদপ্তরের এক সহকারী প্রকল্প পরিচালক, তিন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, চার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং দু’জন সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা।
করোনায় আক্রান্ত সহকারী প্রকল্প পরিচালক হলেন অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল প্রকল্পের আব্দুল্লাহ আল হাসান। তিনি ঢাকার মৎস্য ভবনে কর্মরত। বাকী আক্রান্তরা সবাই ঢাকার বাইরের। আক্রান্ত সিনিয়র তিন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরগরের শুভ্র সরকার, মানিকগঞ্জেরে ঘিওড়ের মো: জসিম উদ্দিন ও ঢাকার কেরানীগঞ্জের মো: সেলিম রেজা। আক্রান্ত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা হলেন, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার আসলাম হোসেন শেখ, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার স্বপন চন্দ্র দে এবং নেত্রকোণার পূর্বধলার মোঃ সরোয়ার হোসাইন এবং কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার লিসমা হাসান ।
এছাড়া ঝালকাঠির রাজাপুরের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো: আবুল বাশার এবং একই জেলার নলছটি উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা রমনী কুমার মিস্ত্রী কোভিড-১৯ আক্রান্ত।
আক্রান্তদের সবাই নিজ নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মৎস্য অধিদপ্তর ও বিসিএস (ফিশারিজ) এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিভাগীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নভেল করোনভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ও সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার সময় তারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে নয়জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। অবসরকালীন ছুটিতে থাকা সাবেক মহাপরিচালক ড. আইনুল হকসহ আক্রান্ত হয়েছেন অধিদপ্তরটির পাঁচ কর্মকর্তা ও চার কর্মচারী।
ড. আইনুল ছাড়াও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের ইপিডেমিওলজিস্ট ডা. মো: ওসমান গণি করোনায় আক্রান্ত। বাকী তিন কর্মকর্তা চট্গ্রাম ও রাজশাহীর বলে নিশ্চিত করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র।
আক্রান্তদের সহযোগিতায় কী ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বিসিএস কৃষি ক্যাডার এসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষিবিদ মো: মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা যেন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেবে সরকারি সহযোগিতা পায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। করোনাকালীন সময়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সুরক্ষায় কৃষিমন্ত্রীর কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন।