নিউজ ডেস্কঃ
কাঁচাবাজারে সবজির বিক্রি ও দাম গত এক মাসে বাড়লেও শুঁটকি মাছ বাজারের পরিস্থিতি ছিল উল্টো দিকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আগে শুঁটকি বিক্রির যে হার ছিল, কারোনাকালে এই হার কয়েকগুণ নিম্নমুখী হয়েছে। শুঁটকি ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, স্বাভাবিকভাবে যেসব শুঁটকি করোনার আগে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেসব শুঁটকি পরে বিক্রি হয়েছে ৩-৪শ’ টাকায়। করোনাকালীন এবং বর্তমানে বেশির ভাগ শুঁটকি কোল্ড স্টোরেজে রাখার কারণে বাড়তি ভাড়া গুনেও লসের মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীতে শুঁটকির সবচেয়ে বড় আড়ত কারওয়ান বাজার ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আড়তের প্রতিটি দোকানে সাজানো নানা ধরনের শুঁটকি। ট্রাক থেকে কোনও দোকানে নামছে নতুন শুঁটকি। আবার কেউ ব্যস্ত পুরাতন শুঁটকি সাজাতে। দোকান মহাজনরা কেউ বসে অলস সময় পার করছেন, আবার কেউ ব্যস্ত হিসাব কষতে। তবে এতো কিছুর ভিড়ে যে জিনিসটি নজরে এসেছে, সেটি হচ্ছে পুরো আড়ত ক্রেতা শূন্য। করোনায় শুঁটকির চাহিদা নেই বললেই চলে, জানিয়েছেন আড়তদাররা।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের হাওর-বিল অঞ্চল এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে উৎপাদন হয় এই শুঁটকি মাছ। আর সেসব জায়গা থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। সারা বছর কমবেশি শুঁটকির চাহিদা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে সে ব্যবসায় গত মৌসুমে একেবারেই ভাটা পড়েছে। করোনায় শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ থাকায় অনেকে কাজও হারিয়েছেন।
একমাস যাবত শুঁটকির বাজার আবারও চালু হয়েছে। আবারও শুরু হয়েছে নতুন করে শুঁটকি উৎপাদন। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবের আগে যে পরিমাণ শুঁটকি বিক্রি হতো, তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশে। শুধু তাই নয়, দামও কমেছে অনেক। এই ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে শুঁটকির মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। যার ফলে ক্রেতারা এখন তাজা মাছের দিকে ঝুঁকছে। তাই ব্যবসা অনেকটা মন্দা। মন্দা কাটিয়ে উঠতে আগামী মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
করোনাকালীন সময়ে শুঁটকি উৎপাদন প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ ছিল। ওই সময় ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় ধস নেমেছে এই ব্যবসায় বলে ধারণা করছেন এই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
কারওয়ান বাজারের আড়তদার আলম সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনায় ব্যবসা একবারে পড়ে গেছে। মানুষের স্টকে যে শুঁটকি ছিল, তার অনেকগুলো নষ্টও হচ্ছে। খুব একটা কাস্টমার নাই। এখন এমন একটা অবস্থা, লসে বিক্রি করলেও কাস্টমার নাই।
৪নং শুঁটকি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনায় মানুষজন শুঁটকি কিনতে আসে নাই বাজারে। উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিক্রি না হওয়াতে। অনেকে কাজও হারিয়েছে। এক মাস হলো আবার নতুন করে উৎপাদন শুরু হয়েছে। মূলত আমাদের শুঁটকির সিজনটা চলে গেছে লকডাউনের সময়টাতে। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বিক্রির আগের মতো নাই। এই সিজন পুরাটাই লস’।
কোল্ড স্টোরেজের ভাড়াটা এখন লস জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখন কাঁচা মাছের প্রচুর আমদানি হওয়াতে শুঁটকি মানুষ খেতে চায় না। আবার বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় আছি। কারণ তখন আবার শুঁটকির সিজন শুরু হবে। বিক্রি না হওয়াতে আমাদের শুঁটকি নষ্ট হয়নি, সেগুলো কোল্ড স্টোরেজে রাখা হয়েছিল। শুধু আমাদের এই সমিতিতেই প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া দিতে হয়। তাহলে সারাদেশে আরও যে সমিতি আছে, তাদেরও তো কম-বেশি ভাড়া গুনতে হয়। কোল্ড স্টোরেজের জন্য বর্তমানে যে ভাড়া গুনতে হচ্ছে প্রতি মাসে, ব্যবসায়ীদের জন্য সেটিই এখন বড় লস।’
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সারাদেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। করোনাকালে শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ থাকায় অনেক লোক কাজ হারিয়েছে। তাই, সরকার যদি পুরো বিষয় বিবেচনা করে আমাদের জন্য কোনও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতেন, তবে সারাদেশের আড়তদাররা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতো।’
আড়ত ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় একজন ক্রেতা রাজীবের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটি রাজধানীতে শুঁটকির পাইকারি বাজার। এখানে সবসময় ভালো মানের শুঁটকি পাওয়া যায় বলে এখান থেকেই নিয়মিত শুঁটকি কেনেন তিনি। তিনি আরও জানান করোনায় দাম কমেছে অনেক।
বর্তমান বাজারে শুঁটকি মাছের দাম
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আড়তদারদের তথ্যমতে শুঁটকির মৌসুমে দেশের প্রতিটি আড়তে প্রায় ১০০ ধরনের মাছের শুঁটকি থাকে। তবে মৌসুম শেষ হওয়ায় বর্তমান বাজারে আছে প্রায় ৫০টির মতো আইটেম। উৎপাদন কম থাকলে চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে। কিন্তু বর্তমানে সব স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতা নেই, তাই দাম রয়েছে কিছুটা কম। বর্তমান বাজারে বেশ কয়েকটি শুঁটকি মাছের বেশি চাহিদা রয়েছে। আর সেগুলোর দাম পূর্বের চাইতে অনেক কম। চাহিদার শীর্ষে থাকা মলা মাছের শুঁটকি ৩৫০ টাকা কেজি, লইট্টা মাছের শুঁটকি ৩৮০ টাকা, কাচকি মাছের শুঁটকি ৩২০ টাকা, ঘইন্না মাছের শুঁটকি ৬৫০ টাকা, ফাতরা মাছের শুঁটকি ৪৫০ টাকা এবং নোনা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে।
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন