নিউজ ডেস্কঃ
করোনা পরিস্থিতিতে গভীর সংকটে পড়েছে দেশের চা শিল্প। এদিকে চা শিল্পের সংকট ছাড়াও সংকট দেখা দিয়েছে চা-শ্রমিকসহ শিল্প সংশ্লিষ্টরা। করোনার প্রভাবে কমেছে চায়ের উৎপাদন পাশপাশি চায়ের বিক্রি কমেছে প্রায় চারগুণ। এমনটাই দাবি জানিয়েছেন চা বাগান মালিকরা।
শ্রমিকদের দাবি, দিনে মাত্র ১০২ টাকা মুজুরির বিনিময়ে তারা কঠোর পরিশ্রম করে এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রেখেছে। সর্বনিম্ন মুজুুরি ৩০০-৪০০ টাকা করার দাবিও তাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু যখনই শ্রমিকরা জোর দাবি জানায়, তখনই শ্রমিকদের কণ্ঠরোধ করার জন্য মালিকরা দমন-পীড়ন শুরু করেন। এসব আন্দোলন ঠেকাতেই মালিকরা বাগান বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে অন্তত ৭-৮ টি চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জের রেমাক চা বাগান, কালিটি, রেমাক ও ইমাম চা বাগানসহ আরো কয়েকটি চা বাগান।
চা শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা শফিকুল ইসলাম জানান, করোনাকালে শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। এতে অন্তত ২৩জন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫ জন। তারপরও শ্রমিকরা তাদের শ্রমের সঠিক মূল্য পান না। শ্রমিকরা এজন্য আন্দোলন শুরু করলে তাদের থামাতে বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। চা শ্রমিকরা এমনিতেই নানা বৈষম্যের শিকার। তাদের ভূমির অধিকার নেই। শ্রমের সঠিক মুজুরি পান না। গত ১৭০ বছররের ইতিহাসে শ্রমিকরা নানা বঞ্চনার শিকার।
চা বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি গৌরাঙ্গ নায়েক বলেন, শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্তপক্ষের সঙ্গে দেন দরবার চলছিল। তাই শ্রমিকদের কণ্ঠরোধ করার জন্য দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে। এই দাবিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলন ঠেকাতে বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনের অপপ্রয়োগ করে বাগান বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ওদিকে এবার করোনার প্রভাবে চা উৎপাদন এবং বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ চা সংসদ। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি। কিন্তু জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই ৫ মাসে উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ২৮ লাখ ৪৬ হাজার কেজি। আর গত বছর প্রথম ৫ মাসে উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৬২ লাখ ৮১ হাজার কেজি।
বাগান মালিকদের সংগঠন চা সংসদ বলছে, দেশের বাজারে বছরে প্রায় ৯ কোটি কেজি চায়ের চাহিদা রয়েছে। এর বড় অংশ টং দোকান-হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোয় ব্যবহার হয়। গত মার্চ থেকে দীর্ঘদিন টং দোকান-হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। বর্তমানে সীমিত আকারে খুললেও ব্যবসা কমেছে। সামগ্রিকভাবে ব্যবহার ও বেচাকেনা কমে যাওয়ায় দেশে নিলামগুলোয় সরবরাহ করা বেশির ভাগ চা অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমেদ বলেন, কয়েক বছরে দেশের চা শিল্প আমদানিনির্ভরতা কমে রপ্তানিমুখী হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। এবার শিল্পটি বড় ধাক্কা খেয়েছে। মহামারি পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকলে এবং সরকারি সহায়তা না পেলে সংকট আরো ঘনিভূত হবে।
সুত্রঃ আধুনিক কৃষি খামার