বাংলাদেশের কৃষি গবেষণার পথিকৃৎ, স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষিবিজ্ঞানী, ন্যাশনাল এমিরেটাস সায়েন্টিস্ট,কাজী পেয়ারার জনক ড. কাজী এম বদরুজ্জোজা স্যার বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন!!!

বাংলাদেশের আজকের কৃষির অগ্রদূত, কৃষি গবেষণার উজ্জ্বল নক্ষত্রের বিদায়।
এই বিখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী সম্পর্কে ০৬ এপ্রিল ২০১৯ খ্রি. দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ:
” ১৯৭৪ সালের কথা। ফার্মগেটের খামারবাড়িতে একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের সব বন্দোবস্ত চূড়ান্ত। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও খামারের ওই জমিতে হোটেল নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়ে গেছে। এই খবর পেয়ে কাজী এম বদরুদ্দোজা ছুটে গেলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। গিয়ে বললেন, কৃষি গবেষণার জমিতে তিনি হোটেল বানাতে দেবেন না। বঙ্গবন্ধু বললেন, কেন? উত্তরে কাজী বদরুদ্দোজা বললেন, ‘এটা হলে কৃষির মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এই জমিতে হতে হবে কৃষি গবেষণার জন্য প্রশাসনিক সমন্বয়ের প্রধান কার্যালয়।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তুই ঠিক কী চাস,আমার কাছে লিখে নিয়ে আয়।’ বঙ্গবন্ধুর সহকারীর কক্ষে গিয়ে কাজী বদরুদ্দোজা বাংলাদেশ ‘কৃষি গবেষণা কাউন্সিল’ (বার্ক)–এর গঠনকাঠামো ও কার্যপরিধি এবং প্রস্তাব লিখে নিয়ে এলেন। বঙ্গবন্ধু তাতেই স্বাক্ষর করে অনুমোদন দিয়ে দিলেন। জন্ম নিল বাংলাদেশের কৃষিবিষয়ক সব সংস্থার সমন্বয়কারী এই প্রতিষ্ঠান।“

“কাজী বদরুদ্দোজার নেতৃত্বে বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের দুগ্ধ খামারিদের সংগঠন মিল্ক ভিটার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।“

“১৯৪৫ সালে উপমহাদেশের প্রথম কৃষি কলেজ তেজগাঁওয়ের বেঙ্গল অ্যাগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি-অ্যাগ্রি ডিগ্রি শেষ করার আগে কাজী ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানে বিভাগীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অনুমোদনে অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে একজন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।

– ‘ফুলব্রাইট’ স্কলারশিপ নিয়ে ১৯৫৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রপ বোটানিতে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।’

– ‘১৯৫৭ সালে ড. বদরুদ্দোজা ইকোনমিক বোটানিস্ট (ফাইবার) পদ লাভ করেন।’

– তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পাকিস্তান অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক ও মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

– ধানের বাইরে বাংলাদেশের প্রধান দুটি দানাদার ফসল চাষ শুরুর ক্ষেত্রেও কাজী বদরুদ্দোজা নেতৃত্ব দেন। দেশে আধুনিক জাতের গম উদ্ভাবন ও চাষ শুরু করা আর ভুট্টার বাণিজ্যিক আবাদ তাঁর হাত দিয়ে শুরু। ভুট্টা থেকে তেল উদ্ভাবন এবং তা পোলট্রিশিল্পের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার শুরুর ধারণাটিও তাঁর কাছ থেকে আসা।

-২০১২ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পান এই বিজ্ঞানী।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *