কুমড়াক্ষেতে বন্যার পর এবার মোজাইক ভাইরাসের আক্রমণে জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন রংপুরের গঙ্গাচড়ায় চরাঞ্চলের চাষিরা।
বাজারে প্রচলিত কীটনাশক দিয়ে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাদের ভাষ্য।
চাষিরা বলছেন, গাছে ফুল আসার পর, কখনও ফল ধরার পর এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্ত হলে কুমড়ায় ও পাতায় ছোপ ছোপ হলদেটে দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত পাতার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
তিস্তার চর ছালাপাক এলাকার কৃষক সহিদার রহমান বলেন, “মুই এবার ফকির হয়্যা গেনু। আড়াই একর জমির কুমড়া এক দিনের বন্যাত ভাসি গেইছে। ফের ধারদেনা করি ওই জমিত কুমড়া নাগাছনু। গাছ দেখি মনে হছলো এবার ভালো লাভ হইবো। কিন্তু ফল ধরার সময় রোগ ধরি গাছে পাতা কোঁকড়া নাগি শুঁকি যাওছে। ওষুধ দিয়াও কাম হওচে না।”
গংগাচড়া উপজেলার বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, দিগন্তজুড়ে কুমড়ার ক্ষেত। কয়েক বছর কুমড়া চাষে ভালো লাভ হওয়ায় এ বছরও কুমড়া চাষ করেছেন প্রায় সাবাই। কিন্তু কুমড়া ধরতেই তাদের আশার আলো যেন ক্রমশ নিভে আসছে মোজাইক ভাইরাসের ক্রমাগত আক্রমণে।
গান্নারপার চরের বর্গাচাষি ইউসুফ আলী বলেন, তার তিন একর জমির মিষ্টি কুমড়ার খেত বন্যায় বালুচাপা পড়ে। নদীর পানি নেমে গেলে পোষা দুটি গরু বিক্রি করে এক লাখ টাকায় সেই জমিতে ফের কুমড়ার চাষ শুরু করেন। ক্ষেতের অধিকাংশ গাছেই কুমড়া ধরে। সেই কুমড়ার ক্ষেতজুড়ে এখন মোজাইক ভাইরাসের হানা। কয়েক দফা কীটনাশক প্রয়োগ করেও এ রোগ দমন করতে পারছেন না তিনি।
মোজাইক ভাইরাসের আক্রমণে পাতার আকার ধীরে ধীরে ছোট ও অনিয়মিত হয়ে যায়। কচিপাতা সরু হয়ে কুঁকড়ে যায়। খসখসে হয়ে যায় বলে চাষিরা জানান।
গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, রোগ দমনে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ ও আক্রান্ত গাছ খেত থেকে তুলে ফেললে এ রোগ অনেকটাই দমন হয়। এটি ভাইরাসজনিত রোগ। কৃষি শ্রমিক, খেতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম দ্বারাও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই কৃষকদের সচেতন থাকতে হবে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মোজাইক ভাইরাসটি সাধারণত বীজ থেকে ছড়ায়। লিফ হপারস বা ছোট আকৃতির ফড়িং এই রোগ ছড়াতে সাহায্য করে। জাব পোকা এ রোগের অন্যতম বাহক।
উপজেলার চর ছালাপাক, নোহালী, কোলকন্দ, সিংগীমারী, গান্নারপার চর, লক্ষ্মীটারীসহ বেশ কয়েকটি চরে মোট ১১৫ হেক্টর জমিতে এ বছর মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সুত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম