নিউজ ডেস্কঃ
করোনা ভাইরাসের কারণে সবজি চাষিরা চিন্তিত থাকলেও আগাম জাতের কচু চাষ করে ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কুষ্টিয়ার কৃষকদের মুখে। এ বছর বর্ষার প্রকোপ বেশি থাকায় কচুর সেচ খরচও কম হয়েছে। যেখানে দুই দিনে একবার সেচ আর প্রতি সেচেই সার দিতে হয় সেখান এ বছর খরচও কম হয়েছে। রোগ ও পোকাও তুলনামূলক কম। প্রতি বিঘায় ১০০-১২০ মণ কচু পাচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা স্থানীয় বাজারেই দর পাচ্ছেন কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকা করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি (২০২০-২১) খরিপ-১ মৌসুমে জেলায় এক হাজার ১৪ হেক্টর জমিতে কচুর আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়া সদরে ১৮০ হেক্টর, খোকসায় ৪০ হেক্টর, কুমারখালীতে ৭২ হেক্টর, মিরপুরে ১৭০ হেক্টর, ভেড়ামারায় ১৪৫ হেক্টর, দৌলতপুরে ৪০৭ হেক্টর। গত বছরে আবাদ হয়েছিল ৭৫৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১৯ হাজার ৩২৭ মেট্রিক টন। যার হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২৫ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন। এ বছর কচুর ফলন বেশ ভালো।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপর ইউনিয়নের কাতলামারী এলাকার কৃষক রাজা মিয়া। তিনি এ বছর ১০ কাঠা জমিতে আগাম জাতের কচু চাষ করেছেন। খরচও তুলনামূলক কম হয়েছে।
রাজা মিয়া বলেন, আমি ১০ কাঠা জমিতে কচু চাষ করেছি। এক কাঠা জমি থেকে আমি ৫-৬ মণ করে কচু পাচ্ছি। জমি থেকেই আমি ৫৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করে দিচ্ছি। প্রতিবার তো এমন দাম হয় না, এবার কচুর দাম খুবই ভালো। যদি এমন বাজার থাকে তাহলে কচুতে প্রচুর পয়সা হবে।
একই এলাকার কচু চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কচুতে যতো সার দেওয়া হয় তা অন্য কোনো ফসলে আমরা দেয় না। তাছাড়া একদিন পরপর কচুর জমিতে সেচ দিতে হয়। হাতি পোষা আর কচু চাষ সমান। কিন্তু এ বছর বৃষ্টির কারণে কচুতে বেশি সেচ লাগেনি। তারপরেও ভালোই সেচ দিতে হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে ৩/৪ দিনে একবার সেচ আর সার দিতে হচ্ছে।
আরেক চাষি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পৌষ মাসের শুরুতে জমিতে বীজ রোপণ করেছি। মাঘ মাসে কচু বের হয়েছে। এক বিঘা জমিতে চার মণ করে কচুর বীজ লাগে। মণপ্রতি বীজ তিন হাজার টাকা। এছাড়া জমি চাষ, সার দেওয়া, সেচ দেওয়া, কচুর গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া, নিড়ানী খরচ ভালোই হয়। দুই দিন পরপর সেচ না দিলে মাটি শুকিয়ে যায়। এতে কচু ভালো হয় না। আর প্রতিবার সেচ দেওয়ার পর সার দিতে হয়। এবার কচুর জমিতে সেচ কমই লেগেছে। কারণ বৃষ্টি হয় মাঝে মধ্যেই।
কুষ্টিয়ার সবচেয়ে কচু চাষ বেশি হওয়া দৌলতপুর উপজেলায়। দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুণ্ডি ইউনিয়নের মালিপাড়া এলাকার কৃষক সোহেল রানা জানান, আমি একবিঘা জমিতে কচুর চাষ করেছি। তবে একটু নাবী। এখন মাত্র গুটি গুটি হয়েছে। এক মাস পরে কচু তুলতে পারবো। আগাম জাতের কচুটায় লাভ বেশি। কারণ এ সময় দাম ভালো হয়।
এছাড়া মাঠ থেকে কচু তুলে এনে বাড়িতে পরিষ্কার করেও টাকা পাচ্ছেন কৃষাণীরা। প্রতিমণ কচু পরিষ্কার করে দিলে তারা পায় ২৫-৩০ টাকা। একজন নারী ঘণ্টায় দেড়-দুই মণ কচু পরিষ্কার করে থাকেন।
জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী জিনারুল আলী জানান, কচুর বর্তমান বাজার দর পাইকারি ৪৫-৫০ টাকা কেজি। আমরা ৪০-৪৫ টাকা কেজি কিনছি। খুচরা পর্যায়ে বাজারে ৫০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, এই অঞ্চলের মাটি কচু চাষের জন্য উপযোগী। আর কচু চাষ বেশ লাভজনক। আগাম কচু চাষ করলে, বাজার দর ভালো পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে সবজি হিসেবে কচুর চাহিদা অনেক বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক রঞ্জন কুমার প্রামানিক বলেন, কচু চাষ খুবই লাভজনক। কৃষকরা কচু চাষ করে বেশ ভালো লাভ করছেন। সেই সঙ্গে দিন দিন কচু চাষ এই অঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কচুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টি থাকে। মুখি কচুর পাশাপাশি লতিরাজ কচু চাষ করেও কৃষকরা কম সময়ে লাভবান হচ্ছেন।
বাংলা নিউজ ২৪ডট কম