কৃষকদের চাহিদায় উচ্চফলনশীল ৩৪১ ধানের জাতকৃষকদের চাহিদায় উচ্চফলনশীল ৩৪১ ধানের জাত

 

২০৫০ সালে বাংলাদেশকে আনুমানিক ২১ কোটি ৫৪ লাখ মানুষের খাবারের যোগান দিতে হবে। বর্তমান চালের বার্ষিক ব্যবহার জন প্রতি ১৪৮ কেজি। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের অন্যতম খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে সরকার। দেশে সরকারি-বেসরকারি এবং বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে দেশে কয়েক হাজার ধান চাষাবাদ হলেও ৩৪১ ধরণের ধান বেশি চাষাবাদ করা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। বিশেষ করে দেশের প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে উচ্চফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধান। ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিআরআরআই ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। তবে চাহিদা পূরণে হাইব্রিড জাতগুলোর অবদান অনেক বেশি। সরকারি-বেসরকারি মিলে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৩৪১টি ধানের জাত রিলিজ হয়েছে। এর মধ্যে ২০৮টিই হাইব্রিড জাত।

তবে বিআরআরআই উদ্ভাবিত ধানের জাত ১৪৩টি, বিনার-২৪টি বাকিগুলো বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে দেশে যেখানে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল এক কোটি ১৮ লাখ টন, সেখানে ২০২১ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে সোয়া ৪ কোটি টন।

এ বিষয়ে বিআরআরআই পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছি দেশ ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে ধানের জাত উৎপাদনে। যাতে করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করেই নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির জাতের সঙ্গে উচ্চফলনশীলের সমন্বয়ে আসছে নতুন প্রজাতি। ইতোমধ্যে আমরা এবিষয়ে বেশ সফলও হয়েছি।

তিনি বলেন, বিআরআরআই এ পর্যন্ত আউশ ধানের জাত ২৩টি, বোরো-৪৮টি, আমন ৪৫টি, অল্প জিআই সম্পন্ন জাত ৩টি, হাইব্রিড ৭টি, জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত ৬টি, খরা সহিষ্ণু জাত ৭টি, জলমগ্নতা সহিষ্ণুজাত ৩টি, এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জাত ১টি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

হারিয়ে যাওয়া বা বিলুপ্ত প্রায় জাত সংগ্রহ প্রসঙ্গে ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশ থেকে কোনো দেশি জাতই বিলুপ্ত হয়নি। যাকে বিলুপ্ত প্রায় বলা যেতে পারে। তারপরেও আমারা দেখেছি আমাদের সমতল এলাকায় তেমন বিলুপ্ত প্রায় জাত নেই যা আমাদের সংগ্রহে নেই। তবে বরেন্দ্র এবং পাহাড়ী এলাকায় কিছু ধানের জাত রয়েছে। যা আমরা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। গত বছর এ রকম প্রায় ১০০টি জাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। পরে দেখা গেছে, সে জাতগুলো আমাদের কাছে অনেক আগ থেকেই সংরক্ষিত ছিল। এখন পর্যন্ত আমাদের জার্ম প্লাজম সেন্টারে ৮ হাজার ৬৬০টির বেশি জাত সংরক্ষিত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের যে নিজস্ব কিছু ভ্যারাইটি রয়েছে সেগুলোর উৎপাদন অনেক কম। এগুলো চাষাবাদ হয়তো সৌখিনতা থেকে করা গেলেও চাহিদ পূরণে কম গুরুত্ব বহণ করে। এ কারণে চাষাবাদ কমে গেছে। অধিক লাভ ও উৎপাদনের কথা চিন্তা করেই কৃষকরা হাইব্রিড ধান চাষে বেশি মনোযোগী।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. আব্দুল মালেক বার্তা২৪.কমকে বলেন, যে কোনো দেশের জন্যই তাদের ঐতিহ্য রক্ষা করা প্রয়োজন। এ কারণে যে সব প্রজাতি আমাদের নিজেদের সেগুলো রক্ষা করেই নতুন জাত তৈরি করা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশীয় জাতগুলো বেশিরভাগই, বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয়। এ কারণে গবেষণার মাধ্যমে আমাদের দেশীয় জাতের সংমিশ্রণে নতুন জাত তৈরির কাজ চলছে। যা দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা করেন।

সুত্রঃ বার্তা২৪.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *