জুনের শুরুতে সংসদে বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। যদিও চূড়ান্ত বাজেটে উৎপাদন বাড়াতে করণীয় সুনির্দিষ্ট না করায় এর সমালোচনাও হয়েছিল।
তবে তার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে সরকার দেশের কৃষি উৎপাদনের গুরুত্ব স্বীকার করে। তাহলে যাদের শ্রম ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব, সেই কৃষকদের প্রতি সরকার উদাসীন কেন?
কিছুদিন আগেই কৃষককে বন্যার কবলে পড়তে হয়েছিল। এরপরেই প্রচণ্ড দাবদাহ ও বৃষ্টির অভাবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুরো মৌসুমে স্বল্প ফলন হওয়ায় কৃষকের জীবন ও জীবিকাই হুমকির মুখে পড়ে।
এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধাক্কা সামলানোর আগেই আবার ইউরিয়া সারের দাম ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। আর এখন ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে কৃষকরা এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষককে প্রতি হেক্টর বোরো উৎপাদনে সেচের জন্য অতিরিক্ত ৪ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। আমাদের দেশের মোট উৎপাদিত ধানের প্রায় ৫৩ শতাংশই বোরো।
আবার দেশে ব্যবহৃত সেচ সরঞ্জামের প্রায় ৭৫ শতাংশ ডিজেলচালিত। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ব্যবহৃত ৪৬ লাখ টন ডিজেলের ১৫ শতাংশই ব্যবহার হয় ধানের সেচকাজে।
দেশের কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর ৮৪ শতাংশই ক্ষুদ্র কৃষক এবং তারাই সবচেয়ে অসহায়। ক্ষতিগ্রস্ত এই কৃষকদের ওপর বাড়তি খরচের বোঝা কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কি?
কৃষি খাতে ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হলেও তা কীভাবে ব্যবহার করা হবে, আমরা এখনো জানি না।
উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পর ফসলের ন্যায্য দাম না পেলে আশঙ্কা আছে অনেক কৃষকই চাষাবাদ ছেড়ে দেবেন। এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।
বিকল্প হিসেবে বাড়তি খরচের বোঝা ভোক্তাদের ওপর যাওয়াও একই ধরনের ভয়াবহ বিষয়।
করোনা মহামারির পর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ইতোমধ্যে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শহরাঞ্চলে যাওয়া সবজিসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর দামও বাড়তি।
আমরা এখন যা দেখছি, তা সংকটাপন্ন জীবনের থেকে কম কিছু নয় এবং এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ লোকের খাদ্য নিরাপত্তা নেই। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
যে দেশে ‘দ্রুতগতির উন্নয়ন’ চলছে, সেখানে কেন এত বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে? যারা নিজ কাঁধে পুরো জাতিকে খাওয়ানোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহন করছেন, সেই কৃষকদের বাঁচাতে সরকারকে অবশ্যই আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।
সুত্র; ডেইলি স্টার