নিউজ ডেস্কঃ
শাপাশি কৃষি বিষয়ক শিল্প, শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রমের সমন্বয় বাড়ানো, উদ্ভাবন এবং নতুন বাজারের তৈরিতে বেসরকারি খাতে ও বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার আহ্বান জানান হয়।
রোববার (৮ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে ফুড ভ্যালু চেইন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এই পরামর্শ দেন। ওয়েবিনারে কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
কৃষিখাতে আধুনিকায়নে খরচ কমাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং কৃষির যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্য সংযোজন নিশ্চিকরণের মাধ্যমে দেশের কৃষিখাতকে লাভজনক খাতে পরিণত করা সম্ভব। এছাড়া কৃষিখাতে আরও বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন প্রয়োজন।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৬০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদিত হচ্ছে, তবে ভুট্টা থেকে উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে আরও বেশি দামে ভোক্তাদের কাছে এ ধরনের পণ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব, যার মাধ্যমে আমাদের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতকে আরও সম্প্রসারণের জন্য কৃষি প্রক্রিয়াজাত সেন্টার ও আন্তর্জাতিক মানের একটি ল্যাবরেটরি জন্য পূর্বাচলে ২ একর জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং এ কাজে সরকারকে সহযোগিতার করার লক্ষ্যে বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম নিশ্চিত করতে হলে ভ্যালু চেইন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত আমন ধান চাষ হলেও সম্প্রতি সেখানে মাঁচায় তরমুজের চাষ হচ্ছে, যা অত্যন্ত লাভজনক এবং এ ধরনের কৃষি কাজে কৃষকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন ধারা অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকার ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণার পাশাপাশি ৪ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ, বাজেটে কৃষি যন্ত্রের ওপর ভর্তুকি ও ধান কাটা সহজতর করতে বিভিন্ন আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে, যা ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, আমাদের দেশের ফুড ভ্যালু চেইন, আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা, মূলধন স্বল্পতা, পণ্য সংরক্ষণের অভাব, দুর্বল অবকাঠামো, পণ্য বাজারজাতকরণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের দক্ষতার অভাব প্রভৃতি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ সময় কৃষি পণ্যের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, প্রয়োজনীয় আর্থিক ও নীতি প্রণোদনা প্রদান, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা, গুণগত মান রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো, বেসরকারি খাতের কৃষি পণ্য উৎপাদনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং পণ্যের বহুমুখীকরণে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও নতুনবাজারের জন্য বেসরকারিখাতের ও বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার ওপর জোরারোপ করেন।
ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলোজি অ্যান্ড রুরাল ইন্ডাস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম বোরহান উদ্দিন।
তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক ফুড ভ্যালু চেইনে মূলত চারটি বিষয় জড়িত। সেগুলো হলো- ইনপুট, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ভোক্তাদের মধ্যে তা বিতরণ নিশ্চিতকরণ। সারা বিশ্বে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের মৎস্য খাত অন্যতম এবং প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৪২.৭৭ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হচ্ছে, যেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চিংড়ি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ২.৫৪ লাখ মেট্রিক টন।
তিনি আরও বলেন, পোল্ট্রি খাতে গ্রামীণ পর্যায়ে জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তবে এ খাতের বিকাশে আরও প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতি সহায়তা প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি কম খরচে কৃষিভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি, উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ খাদ্যগ্রহণে সবাইকে সচেতনতা বাড়ানো, আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ‘কন্ট্রাক ফার্মিং’ আরও জনপ্রিয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ইউনিমার্ট-ইউনাইটেড গ্রুপের পরিচালক মালিক তালহা ইসমাইল বারী, বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসিং অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মো. ইকতাদুল হক, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী, কারন্যাল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সালেহ আহমেদ এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ প্রমুখ।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, কৃষিখাতের জন্য ফুড ভ্যালু চেইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এজন্য কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে প্রাণ-আরএফএল ‘কাসাবা’ নামক একটি পণ্য উৎপাদন করছে, যেটি চকলেট, ক্যান্ডিসহ বেশকিছু ওষুধ উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি বর্তমানে বিদেশে রফতানিও হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে রফতানি করতে বেশকিছু কাঁচামাল অন্যান্য দেশ হতে আমদানি করতে হয় এবং এ ধরনের পণ্য আমদানিতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। এছাড়াও দেশে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের তথ্যাদি অনলাইনে সন্নিবেশিতকরণের প্রস্তাব করেন।
উজমা চৌধুরী বলেন, কৃষি পণ্য কাঁচামাল হওয়ায় এগুলোর পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন একান্ত অপরিহার্য।
সুত্রঃ জাগো নিউজ