কৃষিতে যৌথ উদ্যোগে আগ্রহী ভারত-বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাকৃষিতে যৌথ উদ্যোগে আগ্রহী ভারত-বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা

 

নিউজ ডেস্কঃ
বীজ ব্যবস্থাপনা, কৃষি উৎপাদন, বিপণন ও কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরির বিভিন্ন খাতে যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এফবিসিসিআই ও ভারতীয় শীল্পোদ্যোক্তাদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ড্রাস্ট্রিজ (সিআইআই) আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া বাংলাদেশ ডিজিটাল কনফারেন্স অন এগ্রিকালচার সেক্টর’ শীর্ষক এক সংলাপে যৌথ বিনিয়োগের সম্ভাবনার দিকগুলো উঠে আসে।

পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ঘাটতি কমিয়ে আনতেও দুই দেশের প্রতিনিধিরা গুরুত্ব আরোপ করেন।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “ভারত শুধু আমাদের প্রতিবেশী নয়, ভালো বন্ধুও বটে। ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে বাণিজ্য ভারসাম্য এখনও ভারতের অনুকূলে। এই দূরত্ব ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।”

বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানিযোগ্য পণ্যগুলোর ওপর ওই দেশের আরোপিত এন্টি ডাম্পিং শুল্কের কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “তৈরি পোশাকের পরে পাট হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিপণ্য যা প্রধানত ভারতের বাজারে যায়। কিন্তু এই পণ্যের ওপর এন্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের ফলে গত তিন বছর ধরে ধীরে ধীরে এর রপ্তানি কমছে। এসব দূর না করলে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব নয়।”

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, “বাংলাদেশে অনেক কৃষিপণ্য আাছে যা ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব, আবার ভারতের অনেক কৃষিপণ্য রয়েছে যা বাংলাদেশে আসছে। এসব পণ্যে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা যৌথ বিনিয়োগ করলে তা বিশ্ব বাজারেও স্থান করে নিতে পারে।

“বাংলাদেশে প্রতিবছর যে কৃষি যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয় তার বড় অংশ আসে ভারত থেকে। ভারতীয় কোম্পানিগুলো যদি এই দেশে এসব পণ্য ম্যানুফাকচারিং ও এসেম্বলিংয়ের উদ্যোগ নেয় তাহলে এর বাজার আরও বড় হবে। আবার এই দেশে উৎপাদিত পণ্য ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করা যাবে।”

বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য বিভিন্ন শস্য বীজে ভারতের শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার কথা তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “বিশেষ করে পেঁয়াজ ও ভুট্টার ক্ষেত্রে এমনটি করা হচ্ছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমরা আশা করব এমনটি করা হবে না। আমরা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে আরও সহযোগিতা দেখতে চাই।”

ভারতের কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, রেলওয়েস অ্যান্ড কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার্স, ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিশন বিষয়ক মন্ত্রী পীয়ুশ গয়াল বলেন, “বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। এ অংশীদারিত্ব অন্যদের জন্য রোল মডেল। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে কৃষি হতে পারে গেম চেঞ্জিং ফ্যাক্টর।”

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের মানবিক সাহায্যের কথা স্মরণ করে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, “পৃথিবীতে এমন দুটি দেশ আর নেই, যারা আমাদের মতো ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, নৃতাত্ত্বিক বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলাদেশের বেসরকারি খাত প্রতি বছর ভারত থেকে কয়েকশ কোটি ডলার পণ্য আনে, যা আরও বৃদ্ধির ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

“এটা যৌথ উদ্যোগ, শিল্প বৈচিত্র্যকরণ এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে সম্ভব। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা যে কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।”

বাংলাদেশ নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, কৃষি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় উভয় দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।

সিআইআইয়ের ‘প্রেসিডেন্ট-ডেজিগনেট’ টি ভি নরেন্দ্রন বলেন, রপ্তানি বাড়াতে দুই দেশই যৌথভাবে প্রাচ্যের দিকে নজর দিতে পারে।

মাহিন্দ্রার এমডি পবন গোয়েনকা বলেন, “মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার জন্য বাংলাদেশ তিন শীর্ষ বাজারের একটি। আমরা এই বাজারকে এক নম্বর স্থানে উন্নীত করতে চাই।”

সম্মেলনে দুটি আলাদা সেশনের আলোচনায় দুই দেশের কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী ও খাদ্যপ্রক্রিয়াজাতকরণ খাতের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সিআইআইয়ের ‘প্রেসিডেন্ট-ডেজিগনেট’ এবং টাটা স্টিল লিমিটেডের সিইও টি ভি নরেন্দ্রন, সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি বক্তব্য রাখেন।

সুত্রঃবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *