নিউজ ডেস্কঃ
৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠন করা হলো ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিপরিষদ। বাংলাদেশের ইতিহাসে কৃষিবিদরা এই প্রথম পেলেন তাদের ঘরানার কৃষিমন্ত্রী তাদেরই নিজ ঘরের দেখভাল করার দায়িত্বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি হলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় কৃষি মন্ত্রী। কৃষিবিদদের আনন্দ সেদিন ছিলো যেন আত্মহারা। ১৯৭৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করার পর কৃষিবিদরা যে পরিমান আনন্দিত ও উদ্দিপ্ত হয়েছিল, এরপর এটিই ছিলো কৃষিবিদের জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের ও আশার আলো সঞ্চারনের নবযাত্রা। বহুদিনের না পাওয়া স্বপ্নগুলো যেন আবার ডানা মেলতে শুরু করেছিল। সেই আশার আলো জাগানীয়া মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের মন্ত্রণালয় পরিচালনার একটি বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো যেন দেখতে দেখতেই। কেমন গেলো তাঁর বিগত দেড়টি বছর? কেমন কাটালেন তিনি তাঁর নিজ গৃহে? একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে আম্ফান ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায়ই বা তিনি কতটুকু সফল হলেন? চলুন জেনে নেই, আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের বিবেচনায় তাঁর এই কর্মব্যস্ত জীবনের কিছুতা সালতামামি করতে পারি কি না!
# স্যারকে নিয়ে আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তা অনেকটা এমন:
পিতা জালাল উদ্দিন ও মাতা রেজিয়া খাতুনের দাম্পত্য জীবনের ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন আমাদের বর্তমান কৃষিমন্ত্রী জনাব ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। গ্রামের বাড়ী টাংগাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রাম।
# ছাত্র থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক
১৯৭১ সাল , যখন দেশ জুড়ে মুক্তিযুদ্ধে উত্তাল গোটা বাংলাদেশ, ঠিক তখন একদিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সর্বাত্মক অংশগ্রহণ, অন্যদিকে স্নাতোক ডিগ্রি (বিএসসি এজি) অর্জন, এই হচ্ছেন জনাব ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক । একদিকে যেমন মনযোগী পড়ার টেবিলে স্নাতোকত্তর (কৃষিতত্ত্ব) ডিগ্রি অর্জনের লক্ষে, অন্যদিকে দেখছিলেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার বিনিদ্র স্বপ্নরাশি। এখানেই থেমে নেই তাঁর পথ চলা। দূরদর্ষী এই মানুষটি এবার পাড়ি জমালেন দেশের বাইরে একেবারে অনেকের স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৮২ সালে অর্জন করলেন পিএইচডি ডিগ্রি । পরবর্তীতে আবার যুক্তরাজ্যে উচ্চ শিক্ষা চলমান রাখা একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক স্যার একজন উচ্চশিক্ষিত ভদ্রলোক নি:সন্দেহে। “মেথডলজিক্যাল গাইড লাইন্স ফর ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ” নামে একটি বইও যেমন লিখেছেন, ২৫ টিরও অধিক গবেষনা প্রবন্ধ ও তেমনি করেছেন প্রকাশিত, যা আমি কিংবা আরো অনেক বড় বড় গবেষকদের কাছে স্বপ্নময় চিন্তা ছাড়া আর কিছু না।
# রাজনৈতিক ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক
ছাত্রজীবন থেকেই ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক রাজনীতিতে জড়িত হন। ২০০১ সালে কর্মজীবন শেষ করে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কৃষিবিদ ও রাজনীতিবিদ ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাংগাইল-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
# কর্মজীবনের ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক
এবার আসুন তাঁর চাকুরি অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) দিয়ে চাকুরিজীবন শুরু করে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তিতে ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনের পর মন্ত্রণালয় ভাগ হলে ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দ্বায়িত্ব পান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। তৎকালীন মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন বললে বলতে হয়:
খোলা বাজারে খাদ্য শস্য বিক্রয় কার্যক্রম
২০১২ সালে তাঁর আমল থেকেই সরকার বিদেশ থেকে কোনো ধরনের চাল আমদানি বন্ধ করেন
শুরু করেন আভ্যন্তরীণ উৎস হতে খাদ্যশস্য সংগ্রহ
২০১০ সালে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খাদ্য গুদাম নির্মাণ কার্যক্রম-২০০৯ গ্রহন
নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রনয়ণ
# কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক
সবকিছুকে ছাপিয়ে এবার পেলেন তাঁরই নিজেস্ব আঙিনার প্রধানের দায়িত্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৮ সময়ের সবচেয়ে সফল মন্ত্রণালয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বড় আশা করেই ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপির হাতে তুলে দেন সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখার আশায়। সেই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় হাতে নিয়ে কৃষি ও কৃষকের ভাগ্যন্নয়নের পথে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টার সাহস বুকে বেধেঁ যাত্রা শুরু করেন ৭ই জানুয়ারী, ২০১৯ সালে। দেখতে দেখতে পার করলেন প্রায় দেড়টি বছর। সীমাহীন কর্মযজ্ঞ ও ব্যস্ত পদচারণায় মূখরিত কৃষি মন্ত্রণালয় ও তার ১৮টি সংস্থাসমূহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ক্রমাগত কমতে থাকা কৃষিজমি ও বিপরীতমূখি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিকে বলিষ্ঠ হাতে মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের ভূমিকা আজ বিশ্বে রোল মডেল। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন ( ৪৩২.১১ লাখ মেট্রিক টন) লক্ষ্যমাত্রা (৪১৫.৭৪ লাখ মেট্রিক টন) ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত; ধান উৎপাদনে এখন বিশ্বে তৃতীয় । ভুট্টা উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪৬ লক্ষ মে: টন। নিবিড় চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সবজি উৎপাদন বেড়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত এবং বিশ্বে সপ্তম; ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯ লক্ষ মেট্রিক টন এবং উদ্বৃত্তের পরিমান ৩০ থেকে ৪০ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম এবং পেয়ারায় অষ্টম। আম উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে (সূত্র: কৃষি মন্ত্রণালয়)। উল্লেখিত অগ্রগতির মূল রূপকার যদিও বরাবরই বাংলার কৃষক, তথাপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগীতায় ও আমাদের বর্তমান সুযোগ্য কৃষিমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেত্রীত্বেই কৃষি ক্ষেত্রের উত্তর উত্তর উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে গত বছরের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি গুলো হলো:
বিগত সরকারের আমলে যেখানে সার নিয়ে মারামারিতে প্রাণ হারায় বাংলার কৃষক, সেখানে বর্তমান কৃষি-বান্ধব সরকার ফসলের উৎপাদন খরচ হ্রাস করার লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সারের মূল্য ৪ দফা কমিয়ে প্রতি কেজি টিএসপি ৮০ টাকা থেকে কমিয়ে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ২৫ টাকায় নির্ধারণ করেছিলো। এবার ড. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি কৃষি মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব নেবার পর তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করেছেন কৃষকদের জন্য। এটা ছিল গত বছরে বাংলার কৃষকদরে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেরা উপহার;
উন্নত দেশের আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার আদলে এবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরে স্থাপন করা হয়েছে কৃষকের বাজার। যেখানে কৃষকের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি ও নিরাপদ সবজি/ফল সহজলভ্য করার নিমিত্ত কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারজাত করছে। ক্রমান্বয়ে এই ব্যবস্থা জেলা-উপজেলা শহরে সম্প্রসারিত হবে;
বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় আলুসহ বিভিন্ন সবজি, ফল ও ফুল রপ্তানির বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে এসব ফসলের সম্প্রসারণের নিমিত্ত উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নসহ কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। সেই লক্ষ্যে যশোরের গদখালির পলিহাউসে গড়ে ওঠা রপ্তানীযোগ্য ফুল এবং নিরাপদ সবজি উৎপাদনের উদ্যোগ দেশি-বিদেশি মহলে প্রশংসিত হয়েছে;
বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কর্তৃক গৃহীত কৃষি প্রণোদনা/পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে এ পর্যন্ত ৯৬০ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন, যার মাধ্যমে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি ১৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়;
২০১৮-১৯ সনে অবমুক্তকৃত উদ্ভাবিত জাত ১২ টি, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ৯৫ টি, এবং নিবন্ধিত জাত ২৬ টি;
গম ও ভূট্টা চাষকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গম ও ভুট্টার গবেষণা সম্প্রসারণের জন্য সরকার ২০১৮ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ইতোমধ্যেই গমের ১টি জাত উদ্ভাবন, গম ও ভুট্টার ৪ হাজার ৫শ টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ এবং রোগবালাই ব্যবস্থাপনার উপর ১টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে;
এছাড়াও চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮০২ নারিকেল, তাল, খেজুর ও সুপারি চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। মাল্টা, রামবুতান, ড্রাগন প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত ও বিদেশি ফল চাষে উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রেখেছে মন্ত্রণালয়টি| 2018-2019 অর্থবছরে কেস্যুনাটের উন্নত জাতের ৪ (চার) হাজার চারা বিদেশ হতে আমদানি করে কেস্যুনাট চাষিদের মধ্যে বিতরণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়;
কৃষিক যান্ত্রীকিকরণের বিষয়টিকে অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়ে কৃষি শ্রমের দূস্প্রাপ্যতাকে লাঘবের উদ্দেশ্যে, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে দেশের হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় কৃষকের জন্য ৭০% এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৫০% হারে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ভর্তুকি প্রদান করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত ৩ শ ২২ কোটি ৮০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এজন্য নতুন প্রকল্পও হাতে নিয়েছেন মন্ত্রণালয়টি।
জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা ২০১৯ চূড়ান্ত করা হয়েছে, যাতে বিনা সুদে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ঋণের ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সংহত করার লক্ষ্যে Synchronized Farming চালু করা হয়েছে। উল্লেখ্য মাননীয় কৃষি মন্ত্রী নিজেও এই বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ ও জ্ঞান সম্পন্ন একজন টেকনিক্যাল পার্সন হওয়ায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বিষয়টি বর্তমান সরকারের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ও আগামীতে আরো হবে বলে সকলের বিশ্বাস।
২০১৮-১৯ সনে সম্প্রসারিত সেচ এলাকা ২২ হাজার ৮ শ ৪০ হেক্টর। সরবরাহকৃত সেচ যন্ত্র ৫ k ৪৭টি এবং স্থাপিত সোলার প্যানেলযুক্ত সেচযন্ত্র ৯৫ টি। ৪ শ ৮০টি সেচ অবকাঠামো, ৫ শ ৮১ কিলোমিটার খাল-নালা খনন/পুনখনন, ৬৮২ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ (বারিড পাইপ) সেচনালা এবং ৮ কিলোমিটার ভূ-উপরিস্থ সেচনালা, ২৪ কিলোমিটার গাইড/ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থার আওতায় সৌরবিদ্যুৎ চালিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুপেয় পানির ব্যবস্থাকরণ ও সেচ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১শ টি পাতকুয়া (Dugwell) স্থাপন করেছে এই মন্ত্র্রণালয়টি;
কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নীতিমালা ২০১৯ প্রণীত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কৃষিতে অবদানের জন্য ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি সংহত/সম্প্রসারিত হবে;
সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৯৯, ২০১৩ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় কৃষিনীতি প্রণয়ন করেছে। জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০১৯ চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্রসেচ নীতিমালা, জৈব কৃষিনীতি প্রণয়নসহ কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকরি ও সময়োপযোগী আইন প্রণয়নের কাজও করে চলেছে সরকারের অত্যন্ত সফল এই মন্ত্রণালয়টি;
# করোনাকালীন মহামারী ও আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় কৃষিমন্ত্রী:
বাংলাদেশে দিনে দিনে মৃত্যুর মিছিল যখন বাড়ছে, ঠিক তখন এই রোগ হতে মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে ঢালরূপে আবির্ভূত হয়েছে বাংলার কৃষি। সেই ঢাল হাতে নিপুন সৈনিক বাংলার কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। আর এই পুরো কর্মযজ্ঞের সফল পরিচালক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত মন্ত্রণালয় কৃষি মন্ত্রণালয়, যার মূল চালিকা আসনে বসে আছেন এই কৃষি পরিবারেরই একজন খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব মাননীয় মন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি বান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ “এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে” কে পালনের জন্য দেশের এই মহামারীতে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবেলায় মাননীয় কৃষি মন্ত্রীর পদক্ষেপগুলো রীতিমত বিশ্ব নজির হিসেবে ইতোমধ্যেই সমাদৃত হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে খেটে খাওয়া, হতদরিদ্র ও ভাসমান মানুষেরা। এদের কথা মাথায় রেখে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। সারাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষদের ১০ টাকা কেজি দরে ৯০ হাজার টন চাল দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সারা দেশে অতিরিক্ত সাড়ে ৬ কোটি টাকা ও ১৩ হাজার টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এসব চাল ও টাকা ত্রাণ হিসেবে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬৪ জেলায় ১২ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা এবং প্রায় ৪৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। সরকারী এই সমস্ত কার্যক্রমে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করোনার বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষনা করেছে।
সমসাময়িককালে করোনাকালীন মহামারী ও আম্ফান ঝড়ের কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে কৃষি মন্ত্রণালয় সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ যে পদক্ষেপটি নিয়েছে সেটি হলো,তার আওতাধীন সকল দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শক্রমে দশটি (১০) সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রদান করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, পরিবহণের সময় যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর মাধ্যমে কোনরূপ হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহারে উদ্যোগ গ্রহণ, স্থানীয়ভাবে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো, পার্সেল ট্রেনে মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণের আওতা বাড়ানো, হিমায়িত ওয়াগন ব্যবহার করা যায় কিনা তা নির্ধারন, ফিরতি ট্রাকের বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল হ্রাস, ত্রাণ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল অন্তর্ভূক্ত করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিকট অনুরোধ জানানো, অনলাইনে এবং ভ্যানযোগে ছোট ছোট পরিসরে কেনাবেচার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ, প্রাণ,একমি, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যারা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে জুস, ম্যাঙ্গোবার,আচার, চাটনি প্রভৃতি তৈরি করে,তাদেরকে এবছর বেশি বেশি আম-লিচু কেনার অনুরোধ জানানো ও মৌসুমি ফলে যেন কেমিক্যাল ব্যবহার করা না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসন,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করাসহ আম্ফান ঝড়ে ঝরে পড়া আমকে রক্ষা করতে স্টীপিং পদ্ধতিতে কাঁচা আম সংরক্ষণ বিষয় সচেতনতা বৃদ্ধি ও এ সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ। সুপারিশগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ইতোমধ্যেই বাস্তবায়নের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পত্রজারীসহ আদেশ প্রদান সম্পন্ন করেছেন। আশা করা যায়, ধানের মতো আমাদের আরেক প্রধান কৃষি পণ্য মৌসুমী ফল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণেও কৃষি মন্ত্রণালয় সফল
এই হলো বিগত দড়ে বছরে কৃষিবিদ হিসেবে একজন কৃষিমন্ত্রী জনাব ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপির কর্মযঙ্গের সার-সংক্ষেপ। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত কৃষিবিদদের যত আশা-আকাঙ্খা, চাওয়া-পাওয়া ছিল বা আছে, তার সবগুলোই পূরণ হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর একান্ত নিজস্ব চাওয়া থেকে এবং পরবর্তিতে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের প্রধান তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃষিবিদের দীর্ধদিনের একটি দাবী ছিলো কৃষি মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্বে একজন কৃষিবিদের জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার সরকার গঠনের পর কৃষিবিদদের সেই আশাকে বাস্তবায়নের জন্য দ্বায়িত্ব তুলে দেন তাঁরই অত্যন্ত আস্থাভাজন জনাব ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপির হাতে। সেই থেকে অক্লান্ত পথ চলা তাঁর। মন্ত্রণালয়ে আজ কৃষিবিদরা চলে যান হাসতে হাসতে মন্ত্রীর সান্নিধ্য পেতে। এযেন নিজ গৃহেই পদচারণা কৃষিবিদদের। এতোটা সুযোগ তৈরি হয়েছে আজ কৃষিবিদদের জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো কৃষিবিদরা কি পারছেন সেই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে? তাঁরা কি পারছেন কৃষিবিদদের ন্যায্য অধিকার গুলো আদায় করতে? আমরা কি পারছি মাননীয় মন্ত্রীকে সঠিকভাবে সহযোগীতা করতে? পারছি কি তাকে বোঝাতে আমরা কি চাই? না-কি আমরা সেটা পারছি না? আমরা আমাদের ঘরের মানুষটিকে আবার বিব্রত করছিনাতো?
বিষয়টি নিয়ে ভাববার সময় এসে গেছে। কৃষি তথা কৃষিবিদ ও এই সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতেই আগামীর সম্ভাবনাগুলো লুকায়িত, যেটা বর্তমান সরকার খুব ভালো ভাবেই অনুধাবন করেছে। আর তাই বর্তমান সরকার এই খাতটির উন্নয়নে সদা সচেষ্ট। এখন পর্যন্ত কৃষির অগ্রগতিতে অগ্রগামী বাংলার কৃষক। সেই ক্ষেত্রে কৃষিবিদরা কৃষকের পাশে দাড়াঁতে সক্ষম হলেও কৃষকদের নিরলস সেবা প্রদানের জন্য অপরিহার্য কিছু সুযোগ সুবিধা এখনো সম্পূর্ণরূপে আদায় কার সম্ভব হয়নি। কৃষির আধুনিকায়ন, কৃষক প্রশিক্ষণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, কৃষকের দোঢ় গোড়ায় কৃষি উপকরণ ও সেবা পৌছাতে যানবাহন সরবরাহ, কৃষি বাজারজাতকরণে জেলা ও উপজেলায় স্থায়ী বাজার ব্যবস্থাপনা ও কৃষি ঋণের সফল ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যদিও এবার বোরো ধান কর্তনে ভর্তূকি মূল্যে রিপার ধান কাটা মেশিন বিতরণ করেছেন সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়। এখনো কৃষির সম্মিলিত উন্নয়নের বহু পথ অতিক্রমের বাকি রয়েছে। তাই একজন কৃষিবিদ হিসেবে আমি মনে করি, যেকোন ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে থেকে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে আমাদেরই ঘরের মানুষ কৃষিবিদ ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপির হাতকে আরো অধিক শক্তিশালী করার কোন বিকল্প নেই।
লেখক: ড. শামীম আহমেদ
অতিরিক্ত উপপরিচালক
(কন্দাল, সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল)
হর্টিকালচার উইং
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)