" কৃষি অন্বেষণ"পর্ব-১০ # বিষয়ঃ ধানে চিটা হওয়ার কারণ" কৃষি অন্বেষণ"পর্ব-১০ # বিষয়ঃ ধানে চিটা হওয়ার কারণ

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

চলছে রোপা আমন মৌসুম। থোড়, ফুল, দুধ বা দানা গঠন পর্যায়ে রয়েছে ধান। তাই, এই সময় ধানের খুবই সংকটকালীন ( critical) পর্যায়। বিশেষ করে ফুল অবস্থা থেকে দুধ পর্যায় খুবই sensitive সময়। এ সময় নানা কারণে ধানে চিটা হতে পারে।
© ধানে স্বাভাবিকভাবে শতকরা ১৫-২০ ভাগ চিটা হয়ে থাকে। চিটার পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হলে ধরে নিতে হবে থোড় থেকে ফুল ফোটা এবং ধান পাকার আগ পর্যন্ত ফসল কোনো না কোনো প্রতিকূলতার শিকার হয়েছে, যেমন- অসহনীয় ঠান্ডা বা গরম, খরা বা অতিবৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা, পোকা ও রোগবালাই।
আসুন আজ কি কি কারণে ধানে চিটা হতে পারে আলোচনা করা যাক…….
১) অতিগরমঃ
——————-
ধানের জন্য অসহনীয় তাপমাত্রা হলো ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি। ফুল ফোটার সময় ১-২ ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়। যারা দেরিতে ধান রোপণ করেন তাদের এ সমস্যা হতে পারে।
২) ঝড়ো বাতাসঃ
———————–
ঝড়ো বাতাসের কারণে গাছ থেকে পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যায়। এতে ফুলের অঙ্গগুলো গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। আবার ঝড়ো বাতাসে পরাগায়ন, গর্ভধারণ ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। এতে ধানের সবুজ খোসা খয়েরি বা কালো রং ধারণ করে। ফলে ধান চিটা হয়ে যেতে পারে।
৩)খরাঃ
———-
খরার কারণে শীষের শাখা বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং বিকৃত ও বন্ধ্যা ধানের জন্ম দেয়ায় চিটা হয়ে যায়।
৪) পানির অভাবেঃ
————————-
কাইচ থোড় থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত ধানের জমিতে ৫-১০ সে.মি. পানি রাখতে হয়। পানির পরিমাণ কম বা অভাব হলে ধান চিটা হয়ে বের হয়।
৫) অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগের ফলেঃ
———————————————————-
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে নাইট্রোজেন এর আধিক্যের কারণে ধান চিটা হয়ে যেতে পারে।
৬) পটাশ সারের অভাবেঃ
———————————-
কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন পূর্বে পটাশ সার প্রয়োগ করতে হয়। এ সময় কোন কারণে পটাশিয়ামের ঘাটতি হলে ধানে চিটা হতে পারে।
৭) অপরিকল্পিত বালাইনাশক প্রয়োগের কারণেঃ
—————————————————————–
ধানের পরাগায়ন ঘটে সকাল ৮.৩০ টা থেকে ১১.০০ টার মধ্যে। এসময় ফুল ফোটে অর্থাৎ পরাগায়নের জন্য ধানের ল্যামা-প্যালিয়া খুলে যায়। কিন্তু এই সময় বালাইনাশক প্রয়োগ করলে বালাইনাশকের উপাদান ল্যামা-প্যালিয়া দিয়ে ধানের ভিতর প্রবেশ করে প্রজনন অংগগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে ধান চিটা হয়ে বের হবে।
৮) পোকার আক্রমণেঃ
================
ক) মাজরা পোকার আক্রমণেঃ
—————————————–
মাজরা পোকার কীড়া কান্ডের ভিতর ঢুকে ভিতরের অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে ধানের শিষ সাদা হয়ে বের হবে এবং হাত দিয়ে টান দিলে সহজে উঠে যাবে।
খ) পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণেঃ
—————————————————-
এ পোকার আক্রমণে পাতায় সাদা সাদা দাগ পড়ে এবং থোড় অবস্থায় আক্রমণ করলে ধানের চিটা বেশি হয়।
গ) গান্ধী পোকার আক্রমণে ঃ
——————————————-
গান্ধী পোকা নরম দানার রস চুষে খায়, ফলে ধান চিটা ও অপুষ্ট হয়ে যায়।
৯) রোগের কারণেঃ
=============
ক) ব্লাস্ট রোগঃ
——————–
নেক বা গিট ব্লাস্ট হলে ধানের শিষ সাদা হয়ে বের হয়। সাধারণত মেঘলা আকাশ, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা এরকম পরিবেশে এ-ই রোগ বেশি হয়।
খ) বিএলবি বা পাতা পোড়া রোগঃ
———————————————-
ব্যাকটেরিয়া জনিত এ রোগে পাতা উপর থেকে নিচের দিকে পুড়ে যায়, এ সময় শীষ বের হলে ধানে চিটা হবে। ঝড়ো হাওয়ার পর এ রোগ বেশি দেখা যায়।
গ) খোল পোড়া বা খোল ঝলসানো রোগঃ
——————————————————–
খোলে গোখরা সাপের চামড়ার মত দাগ পড়ে, পাতা ঝলসে যায় এবং জমির মাঝে মাঝে গোলাকার হয়ে বসে যায়৷ ফলে এ সময় শিষ বের হলে ধানে চিটা হতে পারে।
ঘ) উফরা রোগঃ
———————-
কৃমি দ্বারা সংগঠিত এ রোগে কচি পাতা শুকিয়ে যায় এবং থোড় হতে শিষ বের হতে পারে না। বের হলেও চিটা ও অপুষ্ট দানা নিয়ে বের হয়।
এছাড়াও বোরো মৌসুমে ঠান্ডা জনিত কারণে ধানে চিটা হতে পারে…..
১০) অতি ঠান্ডার কারণেঃ
———————————-
রাতের তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দিনের তাপমাত্রা ২৮-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (কাইচথোড় থেকে থোড় অবস্থা অবধি) ধান চিটা হওয়ার জন্য মোটামুটি সংকট তাপমাত্রার। তবে এই অবস্থা পাঁচ-ছয় দিন শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকলেই কেবল অতিরিক্ত চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাতের তাপমাত্রা সংকট মাত্রায় নেমে এলেও যদি দিনের তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি থাকে তবেই চিটা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। আলোক সংবেদনশীল জাতগুলোর ক্ষেত্রে ক্রিটিক্যাল ডে লেন্থ না থাকাও চিটা হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।
® জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সংঘটিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে থাকে। শৈত্যপ্রবাহ, অসহনীয় উত্তাপ, ঝড়, বন্যা, পোকামাকড়, রোগবালাই এর প্রাদুর্ভাব নির্মূল করা সম্ভব নয়- তবে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা অবলম্বন করে এগুলো এড়ানো বা ক্ষতির মাত্রা কমানো সম্ভব।
® তাই কৃষকদেরই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে এবং সার্বক্ষণিক উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে চাষাবাদ করতে হবে।

® উপজেলা কৃষি অফিস আপনার অফিস, সার্বক্ষণিক সেবা নিন।

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
পুঠিয়া, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *