" কৃষি অন্বেষণ"পর্ব-১৩ #বিষয়ঃ কৃষিতে নতুন উদ্ভাবন "Blockchain Technology"" কৃষি অন্বেষণ"পর্ব-১৩ #বিষয়ঃ কৃষিতে নতুন উদ্ভাবন "Blockchain Technology"

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

© বিবর্তিত পৃথবী, প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সেই ধারাবাহিকতায় কৃষি সেক্টরেও প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন। আমরা যদি সেই প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন দ্রুত গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলেই টেকসই কৃষির সবুজ স্বপ্ন আলাদিনের চেরাগের মত হাতে ধরা দিবে।
© আজ আপনাদের সামনে এমনই এক নব উদ্ভাবিত ভবিষ্যত কৃষি ব্যবস্থার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। সম্প্রতি এইটা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে, জনপ্রিয় পত্রিকা Financial Times এ ২২ জানুয়ারী, ২০২০ এ একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। আজ সেই আর্টিকেলের আংশিক সারমর্ম তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
© নব সেই কৃষি প্রযুক্তির নাম হচ্ছে ব্লক চেইন প্রযুক্তি ( Blockchain Technology in Agriculture)।
হ্যাঁ, সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ আজ আমরা জানতে চেষ্টা করবো Blockchain Technology আসলে কি, কিভাবে এইটা কাজ করে আর কেনই বা এইটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
Blockchain technology কি?
——————————————
© এইটা আসলে একটা অত্যাধুনিক secured database ভিত্তিক প্রযুক্তি যার মাধ্যমে কৃষির বীজ বপণ থেকে শুরু করে উৎপাদনের প্রতিটি ধাপসহ ফসল সংগ্রহ, পরিবহন, বাজারজাত থেকে ভোক্তা পর্যন্ত তথ্য নিমিষেই (real time) জানা সম্ভব ও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
© এ-ই প্রযুক্তিতে ড্রোনসহ অত্যাধুনিক sensor ও tracking system ব্যবহার করা হবে, Data Analysis ও preserve এর জন্য powerful software ও memory ব্যবহার করা হচ্ছে।
© ইতোমধ্যে IBM, IoT ব্যবহার করে কৃষি ফার্মের সকল পর্যায় যেমন soil factor, irrigation, pest control, harvest indices, stored quality, moisture and temperature control এর জন্য sensor প্রযুক্তির পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।
Blockchain technology কিভাবে কাজ করবে?
——————————————————————-
© এখানে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌছাতে প্রতিটি ধাপের তথ্য একটি শক্তিশালী স্বয়ংক্রিয় রেকর্ড বইয়ে (powerful automated ledger) সংরক্ষণ করা হয়। এ-ই ব্যবস্থায় উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের প্রতিটি পর্যায়ে artificial intelligence সমৃদ্ধ automated sensor ও Tracking system বসানো থাকবে, যা প্রতি মুহূর্তে real time তথ্য সরবরাহ করবে।
© যেমন, কৃষি ফার্মে sensor বসানো থাকবে যার মাধ্যমে আপনি মাটির উর্বরতা, পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি, বালাইয়ের উপস্থিতিসহ করণীয় পরামর্শ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ফসলের আদ্রতা ইত্যাদি আপনি বিশ্বের যেখানে বসে শুধু click করেই real time picture দেখতে পাবেন। ঠিক তেমনি আপনি ফসল সংগ্রহত্তোর গুণাগুণ ঠিক আছে কিনা যাচাই করতে পারবেন, সাইলোতে সংরক্ষিত ফসলের moisture level, CO2 level আপনি জানতে পারবেন।
© আবার পরিবহনের সময় আপনার পণ্য ঠিক আছে কিনা, যাত্রাপথে কখন কোথায় পণ্য অবস্থান করছে, কোথায় কত টাকা টোল দিতে হচ্ছে, কোন বাজারে পণ্য বিক্রি হবে, বিক্রি হবার পর কিভাবে সংরক্ষিত হবে, বাজারদর কত,কোন ভোক্তা কিনছে, কিনার পর ভোক্তার প্রতিক্রিয়া কেমন ইত্যাদি সকল তথ্য একটি automated ledger এ সংরক্ষিত হবে এবং tracking system এ-র মাধ্যমে প্রতিটি ধাপ যে কেউ নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে দেখতে পাবে।
এতে করে একজন ভোক্তাও তার পণ্য কেনা বা খাবার পূর্বে সেই পণ্যের Details তথ্য দেখতে পারবে।
© কৃষিতে যারা বিনিয়োগ করতে চান বিশেষ করে ব্যাংক বা অন্যান্য ফিনানশিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো এই blockchain technology তে যুক্ত হয়ে তথ্য সংগ্রহ করে সম্ভাব্য ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
© নিরাপদ অর্গানিক কৃষিজ পণ্য যারা কিনতে চান, তাদের জন্য এইটা একটা অসাধারণ ব্যবস্থা, কারণ তারা দেশে-বিদেশের যে কোন জায়গায় বসে পণ্যের উৎসের স্থানসহ উৎপাদন কলাকৌশল সহ প্রতিটি ধাপের ছবিসহ তথ্য দেখতে পারবেন। এতে করে পণ্যের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।
© এককথায়, Seed sowing to harvest to transport to marketing to consumer পর্যন্ত সকল কিছু নিয়ন্ত্রিত হয় এই ব্যবস্থায়।
Blockchain Technology এ-র ধারনার সূত্রপাতঃ
——————————————————————–
বিশ্বে প্রথমবারের মত চীনে ২০১৭ সালে Louis Dreyfus Co. (LDC) প্রতিষ্ঠান Blockchain Technology ব্যবহার করে ৬০০০০ টন সয়াবিন বাজারজাত করে সাফল্য লাভ করেছে। এই প্রতিষ্ঠান তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন বলে জানিয়েছে। এ-ই প্রযুক্তিতে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশ কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।
©© সংক্ষেপে বলতে গেলে Blockchain Technology এর সুবিধাসমূহ হচ্ছে…
১) উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সকল তথ্য জানা সম্ভব
২) আর্থিক হিসাব স্বচ্ছতার সাথে রাখা সম্ভব;
৩) এইটা একটি peperless innovation ;
৪) ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম ধারণা পাওয়া সম্ভব;
৫) বিনিয়োগের সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য সেক্টর;
৬) বাজারের সাথে লিংক আপ থাকায় ন্যায্যমূল্য পাওয়া সম্ভব;
৭) নিরাপদ জৈব কৃষি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ;
৮) নিরাপদ পণ্য রপ্তানি সম্ভব।
®® আমাদের মত দেশে কৃষি সেক্টরে Blockchain Technology এর বাস্তবায়ন এখন অলীক স্বপ্ন হলেও, ডিজিটাল পৃথিবীতে তা একদিন অলীক থাকবে না। উন্নত দেশের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি, কৃষিতেও সেই স্বপ্ন অচিরেই বাস্তবায়িত হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ, আমরা স্বপ্নচারী জাতি, স্বপ্ন দেখতে আমরা ভালোবাসি।

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
পুঠিয়া, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *