কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা ৭.৬ বিলিয়ন, যা
২০৩০ সালে ৮.৬ বিলিয়ন, ২০৫০ সালে ৯.৮ বিলিয়ন এবং ২১০০ সালে ১১.২ বিলিয়নে দাড়াবে (FAO & WB)। ক্রমবর্ধিঞ্চু এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এক মিরাক্যালি চ্যালেঞ্জ এর ব্যাপার ৷ কারণ এর জন্য এক খাদ্য, পানি এবং শক্তি (food, water and energy) এর ত্রিমাত্রিক সমন্বয়ে এক ইডিওটাইপিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আর এই ইডিওটাইপিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রযুক্তি এক আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
© আজ এমনি এক প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করবো আপনাদের সামনে, যার নাম প্লান্ট ন্যানোবায়োনিকস্ (Plant Nanobionics).
প্লান্ট ন্যানোবায়োনিকস্ (Plant Nanobionics)
================================
প্লান্ট ন্যানো বায়োনিকস্ হচ্ছে উদ্ভিদে ন্যানোটেকনোজির প্রয়োগ, যার মাধ্যমে ফসলের শারীরবৃত্তীয় ও বাহ্যিক কাঠামোতে পরিবর্তন এনে ফসলের গুণগত মানসহ উৎপাদন বাড়ানো।
© সাধারণত উদ্ভিদের অতিক্ষুদ্রাতি আণবিক পর্যায়ের ( ১-১০০ ন্যানোমিটার) লেভেলে এই প্রযুক্তিতে কাজ করা হয়।
© ফসলের physiological activity নিয়ন্ত্রণ, এনজাইমেটিক কার্যক্রম, কোষের গাঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন, বয়সবৃদ্ধি (Aging) নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হয় plant nano bionics প্রযুক্তিতে।
© ধরুন, আপনি চাচ্ছেন একটি ভালো জাতের ফল, ফলন ভালো, সুমিষ্ট ফল, বাজারমূল্য বেশি কিন্তু জীবনকাল কম। কিন্তু আপনি চাচ্ছেন আর ১০-১৫ দিন যদি এই ফল গাছে থাকতো তাহলে আপনি আর্থিকভাবে আরো লাভবান হতেন। ইচ্ছা থাকলেই আপনি তা পারছেনা, কিন্তু plant nano bionics আপনাকে এই অসম্ভবকে সম্ভব করবে। গাছের কোষের আণবিক পর্যায়ে ছোট্ট পরিবর্তন ঘটিয়ে বয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ (aging control) করে আপনাকে ১০-১৫ দিন গাছের জীবনকাল বাড়িয়ে দিবে। আর এই ব্যবস্থার নামই হচ্ছে plant nano bionics.
Plant Nanobionics কিভাবে কাজ করে?
=============================
© বর্তমানে ইডিওটাইপিক এই প্রযুক্তি যে সব ক্ষেত্রে কাজ করছে———-
১) C3 উদ্ভিদকে C4 উদ্ভিদের Photosynthetic pathway ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়;
২) রুবিস্কো এনজাইম এর কার্যকরিতা বাড়িয়ে সালোকসংশ্লেষণের হার বৃদ্ধি করে;
৩) ক্লোরোপ্লাস্ট এ অবস্থিত ক্লোরোফিল অ্যানটেনার আকার মডিফাই করে;
৪) ফটোসিনথেটিক তরংগ দৈর্ঘ্য প্রশস্ত করে সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ প্রক্রিয়া বিলম্ব করে।
Plant Nanobionics কার্যক্রমের কাজের কিছু অগ্রগতি ঃ
=================================
১) Aging নিয়ন্ত্রণঃ
————————–
Titanium oxide nanoparticles (nTiO2) ব্যবহারের ফলে উদ্ভিদের পাতার সূর্যালোক (Sunlight wavelength) ব্যবহারের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, যা সালোকসংশ্লেষণের হার বাড়িয়ে দেয়, অন্যদিকে ফটো ক্যামিক্যালের অভিঘাত (photochemical stress) এর কারণে ক্লোরোপ্লাস্টের যে বয়সবৃদ্ধি (aging) হয়, তা রোধ করে। ফলে গাছের জীবনকাল ও ফল প্রদানের সময় বেড়ে যায়।
২) সালোকসংশ্লেষণের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে আয়ুস্কাল বাড়ানোঃ
————————————————————
Massachusetts Institute of Technology (MIT)এর গবেষকগণ Single walled carbon nanotubes (SWCNTs) ব্যবহার করে ইতোমধ্যে Arabidopsis thaliana এবং Spinacia oleracea এর আয়ুস্কাল (Shelf life) ২ ঘন্টা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
৩) ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করে চারার সতেজতা ও সজীবতা (vigour and viability) এবং অংকুরোদগম বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে৷ ইতোমধ্যে Aromatic and medicinal ০৫ টি line এই পদ্ধতিতে উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।
৪) water uptake capacity বৃদ্ধিতেও ন্যানো পার্টিকেল আশানুরূপ ফলাফল দিয়েছে।
৫) এছাড়াও Drought ও Water Stress এ ন্যানো পার্টিকেল (NiO2) ব্যবহার করে পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে, যা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
৬) ক্যানসার প্রতিরোধক ফসল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও Plant Nano bionics যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে।
প্রযুক্তির কল্যাণে কৃষি একদিন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। কৃষিই হবে আগামীর ভবিষ্যৎ।
যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
পুঠিয়া, রাজশাহী