" কৃষি অন্বেষণ"পর্ব-১৮#বিষয়ঃ বোরো ধানের আদর্শ বীজতলা" কৃষি অন্বেষণ"পর্ব-১৮#বিষয়ঃ বোরো ধানের আদর্শ বীজতলা

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

একটি বাচ্চাকে ছোট বেলায় যত্ন নিলে, পুষ্টিকর খাবার প্রদান এবং ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে, বড় হয়ে সে যেমন তার মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারে, পরিবার,সমাজ ও দেশের মুখ উজ্জ্বল কর‍তে পারে; অর্থাৎ ছোটবেলার যত্নই তাকে বড় হয়ে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সহায়তা করে। ঠিক তেমনি ধান ফসলেও কাংখিত ফলন পেতে বীজতলায় চারার যত্ন, সুষম খাবার ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। এই জন্যই ধানের জন্য আদর্শ বীজতলা তৈরি করা প্রয়োজন।
আদর্শ বীজতলা কি?
===============
বেড আকারে তৈরি বীজতলা, যার প্রস্থ ১.২৫-১.৫০ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ১০ মিটার কিংবা জমির দৈর্ঘ্য বরাবর লম্বা হতে পারে। যার দুই বেডের মাঝে ৫০ সেন্টিমিটার ফাঁকা থাকবে। ফাঁকা স্থানের মাটি পাশের দুই বেডে দিয়ে ১৫ সে.মি. গভীর নালা তৈরি করতে হবে এবং চারিদিকে আইল থেকে ২৫ সে.মি. ফাঁকা রেখে নালা তৈরি করতে হবে। এই নালার মাধ্যমে সেচ, নিষ্কাশন ও পরিচর্যা করা সহজ হবে।
® তবে আদর্শ বীজতলায় বীজ ফেলার আগে আরো কিছু কাজ করতে হয়, যেমন……
বীজতলায় বীজ হারঃ
===============
© প্রতি বর্গমিটার বীজতলায় ৮০-১০০ গ্রাম অংকুরিত বীজ বপণ করতে হয়।
© মোটা ধান হলে ১০০ গ্রাম এবং চিকন ধান হলে ৮০ গ্রাম বীজ লাগে।
© সেই হিসেবে প্রতি শতক বীজতলায় ০৩ কেজি এবং প্রতি কাঠায় ০৫ কেজি বীজ লাগবে।
© ০১ কাঠা বীজতলার চারা দিয়ে ০১ বিঘা জমি রোপণ করা যায়।
বীজ বাছাইঃ
========
বীজতলায় বীজ ফেলার পূর্বে অবশ্যই বীজ বাছাই ও শোধন করে নিতে হবে।
© বীজ বাছাইয়ের জন্য ১০ লিটার পানিতে ৩৭৫ গ্রাম ইউরিয়া সার ভালোভাবে মিশিয়ে ১০ কেজি বীজ ছেড়ে হাতদিয়ে নেড়েচেড়ে দিলে পুষ্ট বীজ নিচে জমা হবে এবং অপুষ্ট, হালকা বীজ ভেসে উঠবে।
© পুষ্ট বীজ বাছাই করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ০৩-০৪ বার ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে।
বীজ শোধনঃ
========
প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫-৩.০ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কার্বক্সিল + থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক ০১ লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজের পোটলা ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর তুলে পরিষ্কার পানিতে আবার ০৬ ঘন্টা বীজের পোটলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পানি ঝেড়ে নিয়ে ২-৩ দিন জাগ দিতে হবে।
® বীজ অংকুরিত হবার পর বীজতলায় বীজ ফেলতে হবে।
® তারপর বীজতলায় চারার নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। সেক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে…….
বীজতলার পরিচর্যা :
==============
© বোরো ধানের বীজতলায় সবসময় নালা ভর্তি পানি রাখা উচিত।
© বোরো মৌসুমে শীতের জন্য চারার বাড়বাড়তি ব্যহত হয়, চারা হলুদ হয়ে যায় আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যায়। এ কারণে শৈত প্রবাহের সময় বীজতলা সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। তখন বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে।
© সকালে রাতের পানি বের করে নতুন করে পানি দিতে হবে তার জন্য নলকূপের পানি প্রয়োগ করা সবচেয়ে ভালো।
© প্রতিদিন ভোর বেলায় কাঠি দিয়ে কুয়াশা ঝরিয়ে দিতে হবে।
© বীজতলার চারা গাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম (প্রতি শতকে ২৮০ গ্রাম) করে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করলেই চলে।
© ইউরিয়া প্রয়োগের পর চারা সবুজ না হলে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম (প্রতি শতকে ৪০০ গ্রাম) করে জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় বীজতলায় ছিপছিপে পানি রাখা উচিত।
***সতর্কতাঃ***
===========
চারা তোলার সময় অনেকেই আমরা চারা শিকড়ের মাটি ছড়ানোর জন্য একটি শক্ত কাঠির সাথে চারা কান্ড বা মাজায় বাড়ি দিয়ে থাকি। এইটা মোটেও করা যাবে না। কারণ এতে করে চারার মাজা ভেংগে যায় বা চারার মাজায় ছোট্ট ক্ষত (infection) সৃষ্টি হয়, যার ফলে ওই ক্ষত স্থান দিয়ে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে ক্রিসেক রোগ সৃষ্টি করে। ফলে চারা রোপণের পর, গড়া ও শিকড় পঁচে যায় এবং চারার বাড়, বাড়তি দেরিতে হয়।
‌©© আদর্শ বীজতলায় বীজ বপণ করলে চারা সুস্থ, সবল, সতেজ থাকে। নতুবা চারা লিকলিকে, দুর্বল, অসম আকৃতির হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই, ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই আদর্শ বীজতলায় বীজ বপণ করতে হবে।

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
পুঠিয়া, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *