" কৃষি অন্বেষণ"পর্ব-২২# বিষয়ঃ ''মুজিব শতবর্ষের উপহার, শততম ব্রি ধান-১০০ এর সমাহার"" কৃষি অন্বেষণ"পর্ব-২২# বিষয়ঃ ''মুজিব শতবর্ষের উপহার, শততম ব্রি ধান-১০০ এর সমাহার"

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি) মুজিববর্ষ সামনে রেখে দেশবাসীর সামনে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ নতুন জাতের ধান নিয়ে আসতে যাচ্ছে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি)-২০৩০ এজেন্ডা হচ্ছে ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার। দারিদ্র্য নিরসনের পরই দ্বিতীয় এজেন্ডা হিসেবে এটি কর্মপরিকল্পনায় সংযুক্ত করা হয়েছে।
🌾সেই অভীষ্টকে সামনে রেখেই জিংক সমৃদ্ধ নতুন জাতের ধান ব্রি ধান-১০০ উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে ব্রি এর গবেষকগণ। নতুন উদ্ভাবিত এই জাতে জিংকের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম/কেজি এবং দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
এই জাত সম্পর্কে জানার আগে জেনে আসা যাক মানবদেহে জিংকের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু বা কেনই বা জিংকের এত গুরুত্ব ঃ
==================================
মানব শরীরে তিন শর বেশি এনজাইমের সঠিক পরিচালনের জন্য জিংক বা দস্তার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
💪একজন সুস্থ সবল মানুষের স্বাভাবিক বিকাশ ও কাজকর্ম পরিচালনার জন্য প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন হয়।
🙇‍♂️কিন্তু সামান্য এই জিংকের অভাবজনিত সমস্যা নানা শারীরবৃত্তীয় উপসর্গের জন্ম দেয়। যেমন, গর্ভকালীন জিংকের ঘাটতি জন্মগত ত্রুটি,
কম ওজনের শিশু জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়; দেহের বৃদ্ধি রোধ, দৈহিক অপরিপক্বতা বা বামনত্ব হতে পারে;
🥶 জিংকের অভাবে ডায়রিয়া বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
😴 এছাড়াও কনজাংকটিভার প্রদাহ, পায়ে বা জিহ্বায় ক্ষত, মুখের চারপাশে ক্ষত, একজিমা, ব্রণ বা সোরিয়াসিসজাতীয় ত্বকের সমস্যা, ছত্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণজনিত অসুস্থতা এবং শরীরের ক্ষত শুকাতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়;
👴 এর অভাবে চুল পড়ে যায়, পুরুষের প্রজননক্ষমতাও কমে যায়; মানসিক দুর্বলতা, আচরণগত অস্বাভাবিকতা, অমনোযোগিতা, বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়া, ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়।
👴শরীরে জিংকের অভাবের কারণ
পুষ্টিহীনতা, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ, কিডনি সমস্যা, অতিরিক্ত মদ্যপান, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি।
ব্রি ধান-১০০ এর বিশেষত্ব কি?
=====================
এই জাতে জিংকের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম/কেজি, দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়াও প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
🌾ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ধানবিজ্ঞানী ড. মো. আব্দুল কাদের বলেন, উচ্চমাত্রায় জিংকের অভাবে মানুষ খাটো হয়। এছাড়া ক্ষুধামন্দা, ডায়রিয়া হয়। তাই বাংলাদেশে মানুষের এসব সমস্যা সমাধানে এই চাল ভূমিকা রাখবে। এই চালের ভাত খেলে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।
ব্রি ধান-১০০ এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যঃ
=======================
ব্রি ধান-১০০ তে আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়া অঙ্গজ অবস্থায় গাছের আকার ও আকৃতি ব্রি ধান-৭৪-এর মতো। এই জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা, পাতার রং সবুজ।
🌾পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০০ সেন্টিমিটার। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৮ দিন। ১ হাজার পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৬ দশমিক ৭ গ্রাম। চালের আকার-আকৃতি মাঝারি চিকন এবং রং সাদা।
🌾 ব্রি ধান-৮৪-এর চেয়ে এ জাতের ফলন প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি।
🌾ব্রি ধান-১০০-এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
🌾ব্রি ধান-১০০-এ রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়।
ব্রি ধান-১০০ এর চাষাবাদ পদ্ধতিঃ
=======================
এই ধানের চাষাবাদ পদ্ধতি ও সারের মাত্রা অন্যান্য উচ্চফলনশীল ধানের মতোই। ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর, অর্থাৎ অগ্রহায়ণের ০১ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে। মাঝারি উঁচু থেকে উঁচু জমি এই ধান চাষের জন্য উপযুক্ত। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট প্রয়োগ করতে হয়।
🌾 সারা দেশেই বোরো মৌসুমে এই জাতের ধান আবাদ করা যাবে বলে ব্রির গবেষকরা জানান।
ব্রি ধান-১০০ এর অবমুক্তকরণের প্রক্রিয়াসমূহঃ
================================
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা ২০০৬ সাল থেকে এই ধানের জন্য গবেষণা শুরু করেন। ৫ বছর ফলন পরীক্ষার পর ২০১৭ সালে ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর গবেষণা মাঠে এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষক মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে ২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়।
🌾 জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দলের সুপারিশের পর জাত হিসেবে ছাড়করণের জন্য আবেদন করা হয়। অনুমোদন পেলেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দেশব্যাপী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সূত্রঃ ইত্তেফাক, প্রথম আলো,, মাসিক কৃষিকথা ও ব্রি এর ওয়েবসাইট।

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
বাঘা, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *