” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-২৪# বিষয়ঃ ব্রিনজাল (বেগুন) ফ্রুট ব্যাগিং 🍆🍆” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-২৪# বিষয়ঃ ব্রিনজাল (বেগুন) ফ্রুট ব্যাগিং 🍆🍆

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। জীবনধারনের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। সুস্থ থাকতে খাদ্য প্রয়োজন। কিন্তু যেনতেন খাদ্য খেলেই কি মানুষ সুস্থ থাকবে!! নিশ্চয় বলবেন, না। সুস্থ, সবল, নিরোগ থাকতে হলে অবশ্যই বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য চাই। অন্যথায় যে খাদ্য খেলে জীবন বাঁচে, ঠিক সেই একই খাদ্য মানুষের জীবন হানির কারণও হতে পারে। তাই, বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণবিদ ও বিজ্ঞানীগণ নিরাপদ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে খাদ্য তথা ফসল উৎপাদনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এরকই একটি প্রযুক্তির নাম ” Brinjal Fruit Bagging” বা বেগুনে ফ্রুট ব্যাগিং।
🍆🍆 আমাদের দেশে যতরকম সবজি উৎপাদিত হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বালাইনাশক স্প্রে করা হয় বেগুনে৷ অপ্রিয় হলেও সত্য, বেগুনে চাষী ভাইয়েরা অধিক মুনাফার আশায় অর্ধশতাধিক বারেরও বেশি স্প্রে করে থাকে। আর অনিয়ন্ত্রিত এই বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি বালাইনাশকের রেসিডুয়াল প্রভাবে মানব স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। ক্যানসার, আলসার, পেটের পীড়া, বন্ধ্যাত্বসহ নানাবিধ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
🍆 সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের কৃষক ভাইয়েরা। তারা মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশক স্প্রে করার সময় কোন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ও নির্দেশিকা অনুসরণ করেন না। ফলে কৃষক ভাই ফসল ফলিয়ে যে টাকা আয় করেন, তার সিংহভাগ খরচ হয়ে যায় তার ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা বাবদ।
🍆 বালাইনাশকের এসকল কুফলের কথা চিন্তা করে গবেষকগণ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বের করেছেন। এর মধ্যে ব্যাগিং পদ্ধতি অন্যতম। আম, পেয়ারা, কলার পর এবার সবজি ফসল হিসেবে বেগুনে ব্যাগিং জনপ্রিয় করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বেগুনে ব্যাগিং কেন করবেন?
====================
বেগুনের প্রধান শক্র ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই পোকা দমনের জন্য কৃষকরা মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, এতে বেগুনের উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়।
🍆 দেশে যত সবজি উৎপাদন হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় বেগুন চাষে। যার ফলে শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেগুন নষ্ট হয় পোকার আক্রমণে।
🍆 এছাড়াও, দেখা গেছে বিভিন্ন কীটনাশকের রেসিডিউয়াল উপাদান যেমন, কুইনালফসের উপস্থিতি মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১৪ গুণ বেশি বেগুনে পাওয়া গেছে। এই সমস্যাটি সমাধানে ব্যাগিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বেগুনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
🍆 ব্যাগ ব্যবহারের ফলে যে কোনো পাখি, ইঁদুর ও প্রতিকূল আবহাওয়া থেকেও বেগুন রক্ষা পাবে। ব্যাগের ব্যবহার শেষ হলে ব্যাগগুলো একসঙ্গে পুুড়িয়ে ফেলতে হয়। ব্যাগিং পদ্ধতিতে তুলনামূলক নিরাপদ ও বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করা সম্ভব। যে কেউ চাইলে অন্যান্য ফল-ফসলে ব্যবহার করতে পারবেন।
কখন এবং কিভাবে ব্যাগিং করবেন?
=========================
একটি বেগুনের বয়স দুই থেকে তিন দিন বা মার্বেল আকৃতির সাইজ হলেই ব্যাগটি পরানো উচিৎ।
🍆 বেগুন মার্বেলাকৃতির হলেই এটিকে একটি ১২ ইঞ্চি বাই আট ইঞ্চি স্বচ্ছ পলিথিন ব্যাগে আটকে দিতে হয়। এটি খুব সহজেই বেগুনের বোঁটার সঙ্গে হালকা করে বেঁধে দেওয়া যায়। বেগুন বিক্রির উপযোগী হলে পলিথিন খুলে অন্য বেগুনে আবার ব্যবহার করা যায়।
🍆 বেগুনের বয়স যত বেশি হবে পোকায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা তত বাড়বে। বিভিন্ন জাতের বেগুনকে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে ব্যাগের মধ্যে বেগুনকে থাকতে হয়।
বেগুনে ব্যাগিং করার সুবিধাঃ
====================
ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকের তুলনায় এক-চতুর্থাংশের কম খরচে অনেক বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব।
🍆 এটি ব্যবহার করলে বেগুনে পাখির আক্রমণও হয় না
🍆 বেগুনের রং এবং আকার হয় আগের চেয়ে ভালো হয়।
🍆 নিরাপদ বেগুন আবাদে একটি ব্যাগ ৫ থেকে ৮ বার ব্যবহার করা যায়।
ব্যাগ ব্যবহারে সতর্কতাঃ
=================
১) ব্যাগিং করার পূর্বে কুয়াশার পানি শুকিয়ে নিয়ে অনুমোদিত কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে বেগুনের জমিতে স্প্রে করতে হবে। এরপর পানি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পানি শুকানোর পরই বেগুনে ব্যাগ পরাতে হবে।
২) যদি কোন ব্যাগ ব্যবহারের অনুপোযোগী হয় তাহলে সেটি সংগ্রহ করে গর্ত ফেলে আগুন দিয়ে পুরিয়ে ফেলতে হবে।।
ব্যাগিং এর খরচ কেমনঃ
=================
চীন থেকে আমদানি সাদা ব্যাগের প্রতিটির মূল্য ০৩ (তিন) টাকার মত। যেহেতু এই ব্যাগ ৫-৮ বার ব্যবহার করা যায়, তাই এক কেজি বেগুন উৎপাদনে খরচ মাত্র দেড় থেকে আড়াই টাকা পরে বলে কৃষি বিজ্ঞানী ও চাষীরা দাবি করেন।
🍆 নিরাপদ সবজি উৎপাদনে ব্যাগিং পদ্ধতি জনপ্রিয় করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষক দের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুস্থ সবল আগামী প্রজন্মের জন্য এই প্রযুক্তি ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করবে এই প্রত্যাশাই করে ” কৃষি অন্বেষণ” পরিবার। 🍆
®”কৃষি অন্বেষণ” কৃষি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের একটা উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানে আলোচিত লিখার ব্যাপারে যে কোন গঠনমূলক সমালোচনা সাদরে গ্রহনীয়।

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
বাঘা, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *