” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-২৪# বিষয়ঃ এসডিজির লক্ষ্যপূরণে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন জিংক সমৃদ্ধ ফসলের জাত উদ্ভাবন” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-২৪# বিষয়ঃ এসডিজির লক্ষ্যপূরণে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন জিংক সমৃদ্ধ ফসলের জাত উদ্ভাবন

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি)-২০৩০ এর ২ নং এজেন্ডা হচ্ছে ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বায়োফর্টিফাইড ফসলের জাত উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ পুষ্টিগুন সম্পন্ন জিংক সমৃদ্ধ ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন।
© দেশে পাঁচ বছরের নিচে এমন বয়সী ৪৪ শতাংশ শিশু জিংক স্বল্পতায় ভুগছে। আবার বিভিন্ন বয়সী ৫৭ শতাংশ নারীর রয়েছে জিংক স্বল্পতা। ১৫ থেকে ১৯ বছরের শতকরা ৪৪ ভাগ মেয়ে জিংকের অভাবে খাটো হয়ে যাচ্ছে।
তাই আসুন আগে জেনে নেওয়া যাক, মানবদেহে জিংকের গুরুত্বের কথাঃ
মানবদেহে জিংকের গুরুত্ব ঃ
===================
জিংক মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। মানব শরীরে তিন শর বেশি এনজাইমের সঠিক পরিচালনের জন্য জিংক বা দস্তার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
💪একজন সুস্থ সবল মানুষের স্বাভাবিক বিকাশ ও কাজকর্ম পরিচালনার জন্য প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন হয়। শিশুদের দৈনিক ৩-৫ মিলিগ্রাম এবং নারীদের ৮-৯ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন হয়।
🙇‍♂️কিন্তু সামান্য এই জিংকের অভাবজনিত সমস্যা নানা শারীরবৃত্তীয় উপসর্গের জন্ম দেয়। যেমন, গর্ভকালীন জিংকের ঘাটতি জন্মগত ত্রুটি,
কম ওজনের শিশু জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়; দেহের বৃদ্ধি রোধ, দৈহিক অপরিপক্বতা বা বামনত্ব হতে পারে;
🥶 জিংকের অভাবে ডায়রিয়া বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
😴 এছাড়াও কনজাংকটিভার প্রদাহ, পায়ে বা জিহ্বায় ক্ষত, মুখের চারপাশে ক্ষত, একজিমা, ব্রণ বা সোরিয়াসিসজাতীয় ত্বকের সমস্যা, ছত্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণজনিত অসুস্থতা এবং শরীরের ক্ষত শুকাতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়;
👴 এর অভাবে চুল পড়ে যায়, পুরুষের প্রজননক্ষমতাও কমে যায়; মানসিক দুর্বলতা, আচরণগত অস্বাভাবিকতা, অমনোযোগিতা, বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়া, ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়।
👴শরীরে জিংকের অভাবের কারণ
পুষ্টিহীনতা, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ, কিডনি সমস্যা, অতিরিক্ত মদ্যপান, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি।
© মানবদেহে জিংকের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বিজ্ঞানীরা জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত ৮টি, জিংক সমৃদ্ধ মসুরের জাত ২টি, জিংকসমৃদ্ধ গমের ০১ টি জাত উদ্ভাবন করেছেন।
© আসুন কোন ফসলের জাতে কতটুকু জিংক আছ, তা জানার চেষ্টা করি….
জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত সমূহঃ
=====================
১) ব্রি ধান৬২ঃ জিংকের পরিমাণ ২০ পিপিএম,
রোপা আমন মওসুমের জাত এইটি।
২) ব্রি ধান৭২ঃ জিংকের পরিমাণ ২২.৮ পিপিএম,
রোপা আমন মওসুমের জাত এইটি।
৩) ব্রি ধান৬৪ঃ জিংকের পরিমাণ ২৫.৫ পিপিএম,
বোরো মওসুমের জাত এইটি।
৪) ব্রি ধান৭৪ঃ জিংকের পরিমাণ ২৪.২ পিপিএম,
বোরো মওসুমের জাত এইটি।
৫) ব্রি ধান৮৪ঃ জিংকের পরিমাণ ২৭.৬ পিপিএম,
বোরো মওসুমের জাত এইটি।
৬) ব্রি ধান-১০০ঃ জিংকের পরিমাণ ২৫.৭ মিলিগ্রাম/কেজি, বোরো মওসুমের জাত।
৭) বিনা ধান-২০ঃ জিংকের পরিমাণ ২৬.৫ পিপিএম ।
৮) বিইউ হাইব্রিড ধান-১ঃ জিংকের পরিমাণ ২২ মিলিগ্রাম/কেজি। আমন মওসুমের জাত।
জিংক সমৃদ্ধ গমের জাতঃ
===================
১) বারি গম-৩৩ঃ জিংকের মাত্রা ৫০-৫৫ পিপিএম। তাপসহনশীল ও ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত এইটি।
জিংক সমৃদ্ধ মসুর জাতঃ
=================
১) বারি মসুর-৬ঃ জিংকের মাত্রা ৬৩ মিলিগ্রাম/কেজি।
২) বারি মসুর-৮ঃ জিংকের মাত্রা ৫৮-৬০ মিলিগ্রাম/কেজি। স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট সহনশীল জাত এইটি।
®® “কৃষি অন্বেষণ” কৃষি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানকার যে কোন লিখার ব্যাপারে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত, পরামর্শ বা গঠনমূলক সমালোচনা আশা করছি।

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
বাঘা, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *