কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ ( সাঃ) বলেছেন- ” সাদা মানেই সুন্দর নয়, আর কালো মানেই কুতসিত নয়, কাফনের কাপড় সাদা কিন্ত ভয়ানক! কাবাঘর কালো কিন্ত অপরূপ!”
© কালো রঙ সম্পর্কে মনীষী জে. এম. ডাবলু. টার্নারের উক্তি-
“যদি আমি কালো রঙের চেয়ে অধিকতর কালো রঙ খোঁজে পাই, তাহলে আমার উচিত হবে তার ব্যবহার করা।”
© তাইতো কালো উপাদানকে অনেকে ব্লাক গোল্ড বলে থাকেন। ঠিক তেমনি এক কালো জাতের ফসল নিয়ে আজ আলোচনা করবো।
১) ব্ল্যাক রাইস ( কালো ধান)ঃ
====================
সম্প্রতি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ধানের জাত ” ব্লাক রাইস ” নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।
© এই চাল দেখতে গাঢ় কালো এবং সিদ্ধ হয়ে গেলে সাধারণত গাঢ় বেগুনি হয়ে যায়।
ব্ল্যাক রাইসের বিবর্তনিক ইতিহাসঃ
=======================
বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা কম থাকলেও হাজার হাজার বছর ধরে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল খাওয়া হচ্ছে; কিন্তু শত শত বছর ধরে এটি কেবলমাত্র চীনা রাজপরিবারগুলোর জন্য সংরক্ষিত ছিল। সাধারণ জনগণের জন্য নিষিদ্ধ ছিল বলেই “নিষিদ্ধ চাল” নাম পেয়েছে এই ব্ল্যাক রাইস। আজ এই ধরনের চাল আবার জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপ জুড়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের দোকানগুলো থেকে প্রচুর পরিমানে বিক্রি হচ্ছে, কারণ কালো রঙের এই চাল কিছুদিন আগেই সুপারফুড হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে।
কালো চালের পুষ্টি উপাদান ঃ
=====================
কালো চাল সাদা চালের চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর । ক্যানসার রোগ প্রতিরোধে কালো চাল অনন্য। এই চালে শর্করার পরিমাণ সাদা চালের চেয়ে কম, আয়রন ও ভিটামিন বি-এর পরিমাণ বেশি।
© কালো চালে উপস্থিত পুষ্টি উপাদানগুলি হল- ফ্যাট ১.৫ গ্রাম (৩%), কার্বোহাইড্রেট ১১%, আঁশ ৫%, ভিটামিন এ ২%, আয়রণ ৬%।
© এর গাঢ় বেগুনি বর্ণের জন্য মূলত দায়ী অ্যান্থোসায়ানিন উপাদানগুলি, যা অন্যান্য রঙের চালের তুলনায় পরিমাপে বেশি।
© এটি জাউ, মিষ্টান্ন, কালো চালের পিঠা, রুটি এবং নুডলস তৈরির জন্যও উপযুক্ত।
ব্ল্যাক রাইসের উপকারিতা:
=================
প্রতি পরিবেশনায় ক্যালোরি থাকে মাত্র ১৬০, কিন্তু প্রচুর পরিমানে ফ্লাভানয়েড ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস থাকে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইবারের উৎস। এছাড়াও আয়রন, কপার এর মতো খনিজ এবং খুব ভালো মানের উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থাকে। ব্ল্যাক রাইস থেকে নিম্নোক্ত স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়:
১। এন্টিঅক্সিডেন্টস-এ ভরপুর যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২। ধমনী পরিষ্কার রেখে হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে।
৩। দেহকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।
৪। এটি ফাইবারের উত্তম উৎস যা হজমে সাহায্য করে।
৫। রক্তে চিনি শোষণের পরিমান কমিয়ে ডায়াবেটিস রোধে সাহায্য করে।
৭। ক্যালোরি কম থাকার ফলে স্থূলতা প্রতিরোধ করে
২) ব্ল্যাক পটেটো বা কালো আলুঃ
=====================
কালো আলুর বাহিরের ত্বক বেগুনি থেকে কালো রঙের কিন্ত ভিতরে বেগুনি হয়ে থাকে। রান্না করলেও বেগুনি রং থাকে।
এই জাতের আলুর উতপত্তিস্থল দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালা।
© অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধিতে চমতকার কাজ করে এবং সেই সাথে শরীরের বিভিন প্রদাহ প্রশমন করে।
© কালো আলুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) যা মানুষের চোখ ও হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে এবং ক্রনিক ক্যানসারের ঝুঁকি প্রশমনে সাহায্য করে৷
কালো আলুর পুষ্টি উপাদান ঃ
=====================
১০০ গ্রাম কালো আলুতে নিম্নোক্ত পুষ্টি উপাদান থাকে-
ক্যালরি-৮৭ কিলোক্যালরি
প্রোটিন -০২ গ্রাম
কার্বন-৩.৩ গ্রাম
ফাইবার-৩.৩ গ্রাম
ফ্যাট- ০১ গ্রামের নিচে
ম্যাংগানিজ -৬% (DV)
কপার- ২১% (DV)
লৌহ- ২% (DV)
পটাসিয়াম- ৮% (DV)
ভিটামিন বি-৬ঃ ১৮% (DV)
ভিটামিন সি- ১৪% (DV)
** DV ( Daily Value)
৩) কালো টমেটোঃ
============
ধান ও আলুর মত টমেটোর কালো জাত অত্যন্ত পুষ্টিসম্পন্ন৷ এই টমেটো আশ, ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ। সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, এই টমেটোতে “লাইকোপিন” উপাদান থাকে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রাকৃতিক এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
© এই জাতগুলো বাংলাদেশে সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে ট্রায়াল চালিয়ে যাচ্ছে। টেকসই রেজাল্ট আসলেই সেগুলো কৃষক পর্যায়ে শীঘ্রই আসবে বলে আমরা আশা করি।
® “কৃষি অন্বেষণ” কৃষি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের একটা উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানকার যে কোন লিখার ব্যাপারে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ সাদরে গ্রহনীয়৷
যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
বাঘা, রাজশাহী