” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-৩৩# বিষয়ঃ উচ্চমূল্যের ফসল "নিউটন কচু"” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-৩৩# বিষয়ঃ উচ্চমূল্যের ফসল "নিউটন কচু"

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

কৃষি এখন শুধু খরপোষের কৃষি (Subsistence agriculture) নয়, কৃষিকে এখন দেখতে হবে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে (Commercial view) ।
আর সেই বাণিজ্যিক কৃষির ধারণা থেকে বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তেমনি এক উচ্চমূল্যের ফসল হচ্ছে পানিকচু, জাতের নাম “নিউটন কচু”। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চর মাদারডাংগা গ্রামের কৃষক নিউটন মন্ডলের নামানুসারে পানিকচুর এই জাতের নামকরণ।
নিউটন কচুর বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ
====================
১) রোপণের ৪৫ দিনের মাথায় লতি বিক্রির উপযোগী হয়।
২) কচু ০৭-১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
৩) প্রত্যেকটি কচুর ওজন হয় ২০-৩২ কেজি।
৪) কচুর লতি, কচুর মূল (শলা), কান্ড, পাতা, ফুল সকল অংশই ভক্ষণযোগ্য।
৫) লাগানোর ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই লতি আসা শুরু হয় এবং ৪-৬ মাস পর্যন্ত লতি পাওয়া যায়।
৬) কচু খেলে কোনরূপ গলা ধরে না।
৭) বিদেশে বিশেষ করে কোরিয়ায় এই কচুর যথেষ্ট চাহিদা আছে।
নিউটন কচুর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাঃ
=======================
০১ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করলে যেখানে ২০-২৫ মণ ধান পাওয়া যায়, বর্তমান বাজারমূল্য ধরলে যার দাম ২০-২৫ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি সর্বনিম্ন হলেও ১০ হাজার টাকা। লাভ মাত্র ১০ হাজার টাকা।
© অথচ সেই একই পরিমাণ জমিতে নিউটন কচু আবাদ করলে খরচ বাদে বিঘা প্রতি ৮০-৯০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। উপযুক্ত পরিচর্যা করলে লাভের পরিমাণ ১.৫-২.০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
চারা রোপণের সময়কালঃ
==================
চারা রোপণের উপযুক্ত সময় জানুয়ারি মাস। তবে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত লাগানো যায়। এপ্রিলের পরে লাগালে ফলন কমে যেতে পারে।
জমি তৈরি ও আন্তঃপরিচর্যাঃ
====================
প্রথমে জমি তৈরি করে নিতে হবে। এর জন্য ৭-৮ ইঞ্চি ডিপ করে চাষ দিয়ে জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট, খৈল, জৈব সার দিয়ে ১ সপ্তাহ পঁচাতে হবে। এরপর ১.০-১.৫ মিটার দূরে দূরে চারা রোপন করতে হবে।
© সপ্তাহে একদিন পানি সেচ দিতে হবে এবং চাষকালীন সময়ের মাঝামাঝি একবার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
© রোপন করার ৪৫ দিনের মাথায় কচুর লতি বিক্রি করার উপযুক্ত হয়। তবে এক্ষেত্রে প্রথম বেরুনো লতি বাড়তে না দিয়ে ১ বিঘত পরিমাণ হবার সাথে সাথে কেটে দিতে হবে, যাতে করে পাশ্বকুশি বা লতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
© প্রতিটি কচু উচ্চতায় ০৬-১০ ফুট পর্যন্ত হয় এবং গড় ওজন ২০-৩০ কেজি হয়ে থাকে।
© নবেল করোনা ভাইরাস কভিড-১৯ এর ভয়াবহতায় অনেক নাগরিক চাকরির সুযোগ হারিয়েছেন, অনেক যুবক কর্মহীন হয়ে বাড়িতে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন, তাদের জন্য “নিউটন কচু” চাষ অত্যন্ত লাভজনক হবে।
© এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয় থেকে সার্বিক কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে।
® বিঃদ্রঃ.
=======
যে কোন নতুন ফসল করার পূর্বে অবশ্যই উপজেলা কৃষি অফিস বা অভিজ্ঞ কৃষকের সাথে পরামর্শে সীমিত পরিসরে প্রথম অবস্থায় করলে ঝুঁকি কম থাকে।
® “কৃষি অন্বেষণ” কৃষি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের একটা উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানকার যে কোন লিখার ব্যাপারে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ সাদরে গ্রহনীয়৷

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
বাঘা, রাজশাহী

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *