” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-৩৭# বিষয়ঃ নিরাপদ আম উৎপাদনে "ফ্রুট ব্যাগিং"” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-৩৭# বিষয়ঃ নিরাপদ আম উৎপাদনে "ফ্রুট ব্যাগিং"

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত, আকর্ষনীয় সাইজ ও কালারের আম উৎপাদনে “ফ্রুট ব্যাগিং” অত্যন্ত কার্যকরী ও জনপ্রিয় প্রদ্ধতি। এখনই আমের ব্যাগিং করার উপযুক্ত সময়। তাই, আজকের পর্বটি আমের “ফ্রুট ব্যাগিং” নিয়ে সাজানো।
ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি বলতে কি বুঝায়?
=========================
ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি বলতে ফল গাছে থাকা অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা বয়সে বিশেষ ধরণের ব্যাগ দ্বারা ফলকে আবৃত করাকে বুঝায়। ব্যাগিং করার পর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানো থাকে ব্যাগটি।
ব্যাগিং প্রযুক্তির সুবিধাগুলোঃ
=====================
১. নিরাপদ, বিষমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের একমাত্র উপায় শতভাগ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণমুক্ত আম পাওয়া সম্ভব যে কোন জাতের আমকে রঙিন (হলুদ) করা যায় ফলে বাজারমূল্য বেড়ে যায় এবং আমের সংরক্ষণকাল বাড়ানো যায় (১০-১৪ দিন পর্যন্ত), যেটি রপ্তানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ট্য।
২. আমের ফল ছিদ্রকারী ও মাছি পোকা আমের বর্ধনশীল পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাগিং করা হয় তাহলে কোনো স্প্রে ছাড়াই এ ক্ষতিকর পোকা দুইটির হাত থেকে আম ফলকে রক্ষা করা সম্ভব।
ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের নিয়মকানুনঃ
=======================
১. সঠিক সময়ে (আমের বয়স ৪০-৫৫ দিন) ব্যাগিং করার জন্য সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যাগ সংগ্রহ করা এবং প্রয়োজনীয় শ্রমিকের ব্যবস্থা করা। চেয়ার, টুল বা মই সঙ্গে থাকলে ভাল হয়।
২. ব্যাগিং করার পূর্বে আমগুলিকে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করা (বিকেল বেলায় ব্যাগিং করতে চাইলে সকাল বেলায় স্প্রে করতে হবে অথবা ব্যাগিং করার কমপক্ষে ২ ঘন্টা পূর্বে স্প্রে করতে হবে। তবে স্প্রে করার পরের দিনও ব্যাগিং করা যাবে যদি বৃষ্টিপাত না হয়)।
৩. আম ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা যাবে না অর্থাৎ রৌদ্রোজ্জল দিনে ব্যাগিং করা ভালো।
৪. দুইটি আম একত্রে থাকলে একসাথে ব্যাগিং করা যাবে তবে বড় জাতের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে ব্যাগিং করতে হবে।
৫. আমের গায়ে মরা ও শুকনা আম, উপপত্র, মুকুলের অংশবিশেষ লেগে থাকলে বা ব্যাগিং করতে অসুবিধার সৃষ্টি করলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
৬. ব্যাগের উপরের অংশ দুইপার্শ হতে ভাঁজ করতে করতে মাঝ বরাবর আসতে হবে। এরপর সংযুক্ত তার দ্বারা ভালভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে। কোন অবস্থায় যেন পানি বা অন্যকিছু প্রবেশ করতে না পারে।
৭. ব্যাগ সংগ্রহ করার সময় হাতে কলমে ব্যাগিং করা দেখে নেওয়া ভাল।
৮. রঙিন আমের জন্য একস্তর বিশিষ্ট সাদা ব্যাগ এবং যে কোন আমের জন্য দুইস্তর বিশিষ্ট বাদামি রঙ এর ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে দুইস্তর যুক্ত বাদামি রঙ এর ব্যাগ যে কোন আমকে রঙিন অর্থাৎ হলুদ করতে পারে।
ব্যাগিং করার উপযুক্ত সময়ঃ
===================
প্রত্যেক ফলের জন্য ব্যাগিং করার সময় এশটি নির্দিষ্ট সময় আছে। যেমন আমের ক্ষেত্রে ব্যাগিং করা হয় গুটির বয়স ৪০-৫৫ দিন। এই সময়ে আম মার্বেল বা এরচেয়ে কিছুটা বড় আকারের হয়ে থাকে। তবে আমের নাবী জাত যেমন ফজলি, হাড়িভাঙ্গা এবং আশ্বিনা আমের ক্ষেত্রে গুটির বয়স ৬৫ দিন হলেও ব্যাগিং করা যাবে। ব্যাগিং করার পূর্বে অবশ্যই কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ভালভাবে মিশিয়ে শুধুমাত্র ফলে স্প্রে করতে হবে।
® “কৃষি অন্বেষণ” কৃষি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের একটা উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানকার যে কোন লিখার ব্যাপারে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ সাদরে গ্রহনীয়৷

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
বাঘা, রাজশাহী

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *