কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, এ এক আজব নিয়তি। চারিদিকে পৃথিবী যখন করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত, বিদ্ধস্ত, তখনো থেমে নাই অত্যাচারীর রাহুর খড়গ!! সবাই যখন সকল ভেদাভেদ ভুলে, ধর্ম বর্ণ ভুলে একে অপরের পাশে এসে দাড়িয়েছে, ঠিক তখনই ঈদের আনন্দকে ভূলন্ঠিত করে দেয় হিংস্র দানব তার নখের আঁচড় বসিয়েছে ফিলিস্তিনের নীরিহ নারী,শিশু, আবাল, বৃদ্ধ বণিতার উপর।
© কাঁদছে মানবতা!!! এই নির্যাতন শুধু ধর্মীয় নয়, এইটা এক ধরনের আধিপত্যবাদী আগ্রাসন। যে আগ্রাসন কোন ধর্ম চিনেনা, বর্ণ চিনে না,জাত চিনেনা, কুল চিনেনা।
© এই ধ্বংসের ঢামাঢোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “গারকাদ” নামে এক অভিশপ্ত বৃক্ষের আলোচনা অনেকটাই ভাইরাল হয়ে উঠে এসেছে। অনেকটা আগ্রহ নিয়েই গারদাক বৃক্ষ নিয়ে পড়া শুরু করলাম। স্রষ্টার সুন্দর সৃষ্টি, সেইটা আবার অভিশপ্ত হয় কি করে!!!! কারণ, মহান সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির সবকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি। প্রতিটি জিনিসই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানবকল্যাণে লাগবে। তাই, অভিশপ্ত “গারকাদ” বৃক্ষ নিয়ে আজকের পর্বটি সাজানোর চেষ্টা করেছি।
প্রথমেই আসুন “গারকাদ” বৃক্ষ কি, জানার চেষ্টা করিঃ
=====================================
“গারকাদ” মূলত গুল্ম জাতীয় বৃক্ষ। ইংরেজিতে এর নাম Lycium বা Goji berry/ Wolfberry বা dessert-thorn. Solanaceae পরিবারের এই গুল্মের প্রায় ৭০-৮০ টি প্রজাতি রয়েছে। তন্মধ্যে
Lycium barbarum L. প্রজাতিই বেশি দেখা যায়।
© একক কান্ড বিশিষ্ট সোজা এবং ঝোপালো দু ধরনের গাছই দেখা যায়। গায়ে কাঁটা এবং মরুভূমিতেও দেখা যায় বলে এটাকে অনেকে মরুর কাটা বা dessert thorn বলেও চিনে।
© গারকাদ গাছ ১-৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা ছোট, অল্টারনেটভাবে সজ্জিত, অনেক সময় কাটা থাকে, অনেক সময় থাকে না।
© ফুল সাদা, সবুজ বা বেগুনি রঙের হয়। এককভাবে বা গুচ্ছাকারে সজ্জিত থাকে। ফুল মনোসিয়াস অর্থাৎ একই গাছে পুরুষ, স্ত্রী ফুল দুটোই থাকে। কিছু কিছু গাইনোডায়োসিয়াস প্রজাতিরও আছে।
© বেরি জাতীয় গারকাদ ফল ৬-২০ মি.মি. লম্বা ও ৩-১০ মি.মি. ব্যাসার্ধের হয়৷ ফল হলুদ, কমলা, কালো বা গাঢ় লাল রঙের হয়। ভিতরের শাস (পাল্প) নরম রসালো টক মিষ্টি ধাঁচের। একটি বেরিতে ২-১০ টি বীজ থাকে। ফল কাঁচা, পাকা দু অবস্থাতেই খাওয়া যায়। জুস আকারে, চা বা শরাপের সাথে যোগ করেও পান করা যায়। ফল প্রসেসিং করে পাউডার, ট্যাবলেট বা আচার করেও খাওয়া যায়।
“গারকাদ” বৃক্ষ জনপ্রিয়তার কারণ কি?
===========================
গারকাদ বৃক্ষের এমন কিছু ওষুধী গুণ আছে, যা এই গাছের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এই গুণের কারণেই হয়তোবা ইহুদি জাতি একে মহাষৌধ, এমনকি এই ফল খেলে মানুষ কখনো বৃদ্ধ হবে না। দুর্ঘটনা না ঘটলে স্বাভাবিক মৃত্যু হবে না, এমন ধারণা হয়তো এক সময় মানুষের মনে বাসা বাঁধবে। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস হারিয়ে গারকাদ গাছকেই হয়তো জীবন বাঁচানোর একমাত্র অবলম্বন করবে। তাহলে কি সেই উপাদান, যা আছে গারকাদ বৃক্ষে!!!!
© প্রায় ২০০০ হাজার বছর আগে থেকেই চায়নাতে এই গাছের বিভিন্ন অংশ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ, জাপান, কোরিয়াতেও ওষুধী গাছ হিসেবে এই গাছ ব্যবহৃত হয়।
গারকাদ গাছের ওষুধী গূণঃ
===================
গারকাদ ( Lycium barbarum) গাছে প্রচুর পরিমাণে লাইসিয়াম বারবারাম পকিস্যাকারাইডস [ Lycium barbarum polysaccharides (LBPs)],
বিটাইন, ফেনোলিকস, ক্যারোটিনোয়েডস ( জিয়াজ্যান্থিন ও বিটা ক্যারোটিন), সেরেব্রোসাইড, ফ্লাভোনোয়ডস, ভিটামিন ( রিবোফ্লাভিন ২- 2-O-β-d-glucopyranosyl-l-,থিয়ামিন,
এসকরবিক এসিড), বিটা-সিটোস্টেরল থাকে।
© লাইসিয়াম বারবারাম পকিস্যাকারাইডস [ Lycium barbarum polysaccharides (LBPs)], নামে যে উপাদান গারকাদ গাছে থাকে তা anti aging, anti DNA damage এবং anti apoptosis হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ যে কোষ বিভাজনের কারণে মানুষের মধ্যে বয়োবৃদ্ধির ছাপ পড়ে সেগুলোকে বিভাজন হতে দেয় না, ফলে কোষগুলোকে চির সতেজ রেখে মানুষকে চিরযৌবন এ বেধে রাখে।
© গারকাদ বৃক্ষ আরাও কিছু রোগের পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- চোখের ছানি, পেটে ব্যাথা (abdominal pain) বন্ধ্যাত্ত্ব, শুকনো কাশি, Lycium barbarum can treat various স্থুলতা, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, diseases, including blurry vision, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে চমতকার হিসেবে কাজ করে।
© আর একারণেই এই গারকাদ গাছ একসময় ইহুদি জাতির কাছে অহংকার এর প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হবে, এমনকি এই গাছের কারণে মিথ্যা অমরত্ব লাভের কারণে অনেক দুর্বল ইমানদার ব্যক্তিগণও ঈমাণ হারাও হয়ে যেতে পারে। আর এই জন্যই আল্লাহ মানুষকে শিক্ষা দিতে এই গাছকে ধ্বংস করবেন, এইটা বুঝাতে যে সৃষ্টি নয়, স্রষ্টাই জীবন মৃত্যুর মালিক, একমাত্র তিনিই নিরাময় কারী।
গারকাদ গাছ নিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসঃ
=======================
হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামাত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমদের সঙ্গে ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের যুদ্ধ না হবে।মুসলিমগণ তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা গাছের পিছনে লুকিয়ে থাকবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে, ‘ হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইয়াহূদী আমার পিছনে লুকিয়ে আছে। এসো, তাকে হত্যা কর।’ কিন্তু ‘গারকাদ’ নামক গাছ দেখিয়ে দিবে না। কারণ এটা হচ্ছে ইয়াহূদীদের সহায়তাকারী গাছ” – (সহিহ মুসলিম ৭২২৯)
© শেষ জমানায় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সর্বশেষ মরণ-যুদ্ধ সংঘটিত হবে। হযরত ঈসা (আঃ) ও ইমাম মেহেদী হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থান পাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে
মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী
লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর
বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল
বলবেঃ হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী
লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে
গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার
চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ
বলে পরিচিত।
বি.দ্রঃ. এই গাছের ব্যাখ্যা ধর্মীয় অভিজ্ঞ হাদিস বিশারদগণ ভালো দিতে পারবেন, আমি শুধু কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।
** তথ্যসূত্রঃ Lycium Barbarum: A Traditional Chinese Herb and A Promising Anti-Aging Agent
Yanjie Gao, Yifo Wei and Zhigang Chen
® “কৃষি অন্বেষণ” কৃষি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের একটা উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানকার যে কোন লিখার ব্যাপারে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ সাদরে গ্রহনীয়৷
যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
বাঘা, রাজশাহী