” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-৪২# বিষয়ঃ অধিক ফলনে ফল গাছে "গার্ডলিং"” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-৪২# বিষয়ঃ অধিক ফলনে ফল গাছে "গার্ডলিং"

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

আমরা প্রায়শই বলে থাকি, গাছে ফল আসেনা, ফুল কম আসে, সাইজ ছোট বা মিষ্টতা কম ইত্যাদি। এরকম অভিযোগ প্রায়শই চাষী ভাইয়েরা করে থাকেন।
© এই সমস্যার সমাধানে ফল গাছে “গার্ডলিং” একটি কার্যকরী পদ্ধতি। সহজ কথায়, যাকে বলে গাছে রিং পরানো, যার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সহজেই করা যায়।
গার্ডলিং কি?
========
গার্ডলিং এমন একটি উন্নত কৌশল যার মাধ্যমে গাছের কান্ডকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় বেঁধে সাময়িকভাবে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি না ঘটিয়ে গাছকে প্রজনন (reproductive) স্তর অর্থাৎ ফুল,ফলের দিকে ধাবিত করা।
গার্ডলিং কেন করা হয়?
===============
গাছের আগাম ফুল বা ফল ধরানো, সঠিক সময়ে ফল আসা, অধিক পরিমাণ ফুল, ফল ধরানো, ফলের সাইজ বাড়ানো, ফলের মিষ্টতা বাড়ানো ইত্যাদি কারণে গার্ডলিং করা হয়।
গার্ডলিং কিভাবে করা হয়ঃ
==================
একটি ধারালো চাকু দিয়ে রিং করে গাছের কান্ডের বাকল তুলে ফেলা, যাতে করে শুধুমাত্র কাষ্ঠল অংশ দেখা যায়। বাকল মানে গাছের ফ্লোয়েম টিস্যু ও ক্যামম্বিয়াম লেয়ার কেটে তুলে ফেলতে হবে, শুধুমাত্র জাইলেম টিস্যু থাকবে।
© কমপক্ষে ২ ইঞ্চি বা ০৫ সেমি. বাকল তুলতে হবে।
গার্ডলিং কিভাবে গাছের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে ফলন বাড়ায়?
===================================
আমরা জানি গাছ পাতার মাধ্যমে খাবার তৈরি করে ফ্লোয়েম টিস্যুর মাধ্যমে বিভিন্ন অংশে পৌছিয়ে দেয়। আবার জাইলেম টিস্যুর মাধ্যমে শিকড়ের সহায়তায় পানি ও পুষ্টি উপাদান বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দেয়। গাছের কোষের বহিরাবণের নিচেই থাকে ফ্লোয়েম টিস্যু, তারপর থাকে ক্যাম্বিয়াম লেয়ার এবং তার নিচের স্তরের নাম জাইলেম। ফ্লোয়েম ও জাইলেম এর মাঝে সেতু বন্ধন তৈরি দেয় এই ক্যাম্বিয়াম লেয়ার, যা দুই টিস্যুর মাঝে সেতু হিসেবে কাজ করে।
© যখন গার্ডলিং করা হয়, তখন পাতায় উতপাদিত খাবার ফ্লোয়েম টিস্যুর মাধ্যমে আর নিচের দিকে প্রবাহিত না হয়ে গার্ডলিং স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ক্যালাস (callus) তৈরি করে এবং ফ্লোয়েম টিস্যুতে অবস্থানরত সুগার, এমাইনো এসিড, হরমোন ও অন্যান্য দ্রবীভূত উপাদান পরিবহনে কর্তিত স্থানের নিচে যেতে বাধা দেয়, ফলে উপরের দিকে তা প্রবাহিত হয়ে তা গাছকে প্রজনন বৃদ্ধির দিকে ধাবিত করে অর্থাৎ মিষ্টতা বৃদ্ধি, অধিক কুশি,ফুল,ফল ধারণে উৎসাহিত করে ( Holmes, 1984).
© বিরুপ হার্ডেনিং (hardening and stress condition) পরিবেশে এ গাছের ক্যানোপিতে অধিক পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট সঞ্চিত করে অধিক ফুল ও ফল ধারণ বৃদ্ধি করে Kramer and Kozlowski, 1960) (Taiz and Zeiger, 2002).
কোন কোন গাছে কি কি উদ্দেশ্যে গার্ডলিং করা হয়ঃ
===================================
প্রায় সব ধরনের ফল গাছেই গার্ডলিং করা যায়, তবে..
১) একান্তরিক স্বভাব সম্পন্ন গাছে নিয়মিত অধিক আম ধারণ
২) লিচু গাছে সময়মত ও নিয়মিত লিচু ধারণ
৩) আংগুর গাছের ফলের মিষ্টিতা বাড়াতে গার্ডলিং চমতকার কার একটি কার্যকর পদ্ধতি
৪) আপেল, এভোকেডো, সাইট্রাস জাতীয় গাছে গার্ডলিং করা হয়।
সতর্কতাঃ
=======
১) চার বা তদুর্ধ বছরের গাছে গার্ডলিং করা উচিত, এর চেয়ে না করাই ভালো ;
২) এপ্রিল -মে মাস গার্ডলিং করার উপযুক্ত সময়; গাছ ভেদে সময় কম বেশি হতে পারে।
৩) অবশ্যই ধারালো ছুড়ি দিয়ে বাকল তুলতে হবে;
৪) বাকল তোলার পর বোর্দ পেস্ট বা জীবাণু নাশক দিয়ে পেইন্টিং করে দিতে হবে;
৫) গার্ডলিং করার পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিবেন।
® “কৃষি অন্বেষণ” কৃষি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের একটা উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানকার যে কোন লিখার ব্যাপারে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ সাদরে গ্রহনীয়৷

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
বাঘা, রাজশাহী

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *