খরার কবলে উত্তরের বৃষ্টিনির্ভর আমনের আবাদ, উৎকণ্ঠায় কৃষকখরার কবলে উত্তরের বৃষ্টিনির্ভর আমনের আবাদ, উৎকণ্ঠায় কৃষক

রংপুর অঞ্চলের প্রধান ফসল বৃষ্টিনির্ভর রোপা আমন ধান খরার কবলে পড়েছে। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমনের আবাদ নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন কৃষকরা। পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে আছে অনেক জমি।

মৌসুমের শেষেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি ৭০ শতাংশ। টানা দাবদাহে পুড়ছে লাগানো চারা। এ অবস্থায় আমনের চারা রোপণে সম্পূরক সেচ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে অল্প করে হলেও বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে দেরিতে আমন লাগালেও ফলনে তেমন বিপর্যয় হবে না।

বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ় বিদায় নিয়েছে, যাই যাই করছে শ্রাবণও। তবু নেই বারিধারা। কয়েকদিন ধরে খরতাপে পুড়ছে রংপুর অঞ্চল। উঁচু জমিতে পানি না থাকায় বড় গৃহস্থরা সেচযন্ত্র বসিয়ে জমি কাদা করে চারা রোপণ করলেও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা বৃষ্টিনির্ভর আমন আবাদে বৃষ্টির অপেক্ষাতেই বসে আছেন।

খরার কবলে পড়তে পারে-এমন আশঙ্কায় সম্পূরক সেচ প্রদানে কৃষকদের সেচযন্ত্র বসানোর পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় তুলনামুলকভাবে এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম। আষাঢ়-শ্রাবণে অঝোর ধারার বৃষ্টিপাত এবার হয়নি। তবে পরিমাণে কম হলেও এলাকাভিত্তিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিচু জমিতে আমনের চারা লাগানোর যেন ধুম পড়েছে। তবে উঁচু ও মাঝারি জমিগুলো পানির অভাবে পড়ে আছে চারা লাগানোর অপেক্ষায়। আগে ক্ষেতের রোপণ করা চারা পানির অভাবে মরে যাচ্ছে। স্বচ্ছল কৃষকরা শ্যালো মেশিন চালিয়ে জমি তৈরি করছেন। অনেকে স্থানীয় পদ্ধতি দোন, সেঁউতি কিংবা বালতি দিয়ে পানি সেচের মাধ্যমে লাগানো চারা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নবনীদাস গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম সেচযন্ত্রে পানি দিয়ে জমি কাদা করছিলেন। তিনি জানান, এ অঞ্চলের প্রধান ফসল আমন ধান এতদিন বৃষ্টিনির্ভর ফসল হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন আবহাওয়ার বিপর্যয়ের কারণে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

বৃষ্টির অভাবে চারা রোপণ করতে দেরি হওয়ায় কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘হামার কৃষকের একটেও ভালো নাই বাহে। আগাম ধান উৎপাদন করবার না পাইলে রবি ফসলও (আলু, গম, শাকসব্জি) দেরি হইবে।’

রংপুর নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা এলাকার কৃষক মোখলেছ আলী, আব্দুর রহমানসহ অনেকেই জানান, এমনিতেই করোনার মহাদুর্যোগে বিধি-নিষেধের কারণে আয়ের উৎস হারিয়েছেন তাঁরা। তার ওপর বৃষ্টির অভাবে প্রধান ফসলের চাষ ব্যহত হলে না খেয়ে মরতে হবে তাদের। বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে আমন চাষ করায় বিঘাপ্রতি সাত থেকে আট হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে বলেও জানান তাঁরা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলা রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় সাড়ে ছয় লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে মাত্র এক লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. মাহবুবর রহমান জানান, আমনের চারা রোপণে বৃষ্টির প্রয়োজন কমপক্ষে ৪০০ মিলিমিটার। কিন্তু গত এক মাসে এই অঞ্চলে গড় বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২২৪ মিলিমিটার। এই পরিস্থিতিতে সম্পূরক সেচ দেওয়ার নির্দেশনার কথাও বলেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ধানের চারা রোপণের এখনও সময় আছে উল্লেখ করে মাহবুবর রহমান বলেন, যারা ব্রিধান-৩৩, বিনা-৭সহ স্বল্পমেয়াদি রোপা আমন ধান কাটার পর আলুসহ আগাম রবি ফসল চাষ করবেন তাদেরকে সেচের মাধ্যমে চারা রোপণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোডের্র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানান, মৌসুমের শুরু থেকে তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পূরক সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে।

রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার ১২ উপজেলায় চারটি প্রধান খালের ১৩০ কিলোমিটারে মজুদ রাখা হয়েছে পানি। এর মধ্যে ২৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৯টি সেকেন্ডারি খাল থেকে কৃষক সরাসরি জমিতে সেচ দিতে পারছেন। আর ৩৫৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১০১টি টারশিয়ারি খালের সঙ্গে মাঠ নালা না থাকায় জমিতে পাানি নিতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের।

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *