নিউজ ডেস্কঃ
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার খলসি ইউনিয়নের কুমুরিয়া গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী। এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। কিন্তু আকম্মিক পানিতে তলিয়ে গেছে তার সাড়ে তিন বিঘা জমির ধান। অথৈয় পানিতে ডুবে ডুবে তিনি কিছু ধান তুলতে পারলেও বেশির ভাগই পানির নিচেই পচে যাচ্ছে।
ইয়াকুবের মতো একই অবস্থা ওই গ্রামের শতাধিক কৃষকের। পানিতে থৈ থৈ করছে তাদের বোরো ধানের মাঠ। ক্ষেতের পাকা ধান তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা কৃষকরা।
করোনা দুর্যোগে বাইরে কাজ কর্ম বন্ধ। তাই এবার বোরো আবাদের দিকেই সময় দিয়েছেন বেশিরভাগ কৃষক। কারণ এই ধানই তাদের পরিবারের সারা বছরের খাবার যোগায়। অনেকেই আবার নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে ধান বিক্রি করেন। সেই অর্থ দিয়েই চলে সারা বছরের অন্যান্য খরচ।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রচুর বৃষ্টিপাত ও পদ্মা-যমুনায় হঠাৎ পানি বাড়ায় জেলার দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। এ সময় এলাকায় উঠতি বোরো ধান, বাদাম, তিলসহ অনেক ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো ধানের। অনেকে বাধ্য হয়ে আধাপাকা ধান কেটে ফেলতেও বাধ্য হচ্ছেন। আর পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ধান পচে যাচ্ছে। ফলে এ বছর জেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুমুরিয়া গ্রামের আরেক কৃষক আনন্দ হালদার। তাকে দেখা গেল কোমর সমান পানিতে দাঁড়িয়ে ধান কাটছেন। জানান, এনজিও থেকে তার ঋণ নেয়া আছে। ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণও নেয়া আছে। ধান বিক্রি করেই তিনি সব ঋণ পরিশোধ করবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু স্বপ্নের সেই সোনালি ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। এখন পরিবারের খাবার কীভাবে জুটবে, তা ভেবে দিশেহারা তিনি।
আকম্মিক পানিতে জেলায় কী পরিমাণ ধানের ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই কৃষি বিভাগের কাছে। তবে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন- ক্ষতি নিরুপণে কাজ করছেন তারা।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে নদীতে আকম্মিক পানি বাড়ায় বেশ কিছু নিচু এলাকায় বোরো ধান তলিয়ে গেছে। তিনি নিজেও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেছেন।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার কাজ চলছে। এজন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত