নিউজ ডেস্কঃ
শহরের মাঝে ডিভাইডার, কবর স্থান, খোলা কোনো জায়গা— যেখানেই সুযোগ আছে তিনি গাছ লাগান। কোথাও-বা বীজ বুনেন। লাগানো গাছের যত্নও নেন। গাছের সঙ্গে তার নিবিড় সখ্য। ছোটবেলা থেকেই। নিজ উদ্যোগে তার সব কর্মকাণ্ড। তার নাম শাহ সিকান্দার শাকির। সিলেট এমসি কলেজে ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্সে পড়ছেন তিনি। পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে একটি অফিসে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন। পরিবারে তিন ভাই, দুই বোন, বাবা আর মা। থাকেন সিলেট শহরেই, তবে আদি বাড়ি চাঁদপুর।
রবীন্দ্রনাথের ‘বলাই’ গল্পটা তার খুবই প্রিয়। বলাইয়ের মতোই প্রকৃতিপ্রেমে মগ্ন সে। ছোটকালে মক্তব থেকে ফেরার সময় খালি জায়গায় চারা গাছ লাগাতেন। চারা গাছ খুঁজে আনতেন। খেলার মাঠের পাশে বড় গাছ ছিল। একদিন শাকির দেখলেন গাছটি নেই। গড়ে উঠেছে বড় দালান! শাকির বললেন, এরপর থেকে কাউকে না জানিয়ে যেখানে খালি জায়গায় পেতাম, সেখানেই চারা গাছ লাগাতাম। এই নেশা থেমে থাকেনি, এখনো আছে। কিন্তু গাছ লাগানোর জায়গায় নেই। থাকলেও এখন অনুমতি নিতে হয়, তার জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়।
সিলেট বুদ্ধিজীবীদের কবরস্থান ছিল ময়লা, আর্বজনা ও জঙ্গলময়। জায়গাটা পরিষ্কার করে সেখানে তিনি বেশ কিছু গাছের চারা লাগিয়ে দেন। আবার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার। সেখানেও শাকির লাগানো গাছ শোভা বাড়াচ্ছে। বৃক্ষের সঙ্গে সখ্যতার প্রভাব তার ব্যক্তি জীবনেও পড়েছে। প্রিয় মানুষের জন্মতারিখ ১৩ নভেম্বর। শাকির একাই ১৩টি গাছ লাগালেন। গাছ লাগানোর মাধ্যমে প্রিয় মানুষের জন্মদিন পালন করেন তিনি। শাকির জানান, এবার ১৩টি নয় ২১৩টি গাছের চারা লাগাবেন। তার ভাষায়—এর চাইতে সুন্দর জন্মদিন পালন আর কী হতে পারে? সারপ্রাইজ হিসাবে এটাও-বা কম কিসে। তাছাড়া গাছ লাগানো যে খাওয়ার চেয়েও সহজ একটা কাজ।
নিজ উগ্যোগে গাছ লাগান শাকির। ২০১৪ সাল থেকে গুরুত্ব দিয়ে এই কাজটি করছেন। সরকারি কলেজ, মসজিদ, মন্দির, সড়কের পাশে, ডিভাইডারে তার লাগানো ওষুধি ও ফলের গাছ শোভা পাচ্ছে। তার লাগানো গাছের সংখ্যা কয়েক হাজার। কিন্তু প্রচার-প্রচারণা থেকে আড়ালে থাকাই তার পছন্দ।
ভবিষ্যতে শাকির প্রতি সপ্তাহে চারা বিতরণ করবেন। ফুল, ফল ও সবুজে ভরে উঠবে প্রিয় বাংলাদেশ। তার মতে, মানুষকে বই বা গাছপ্রেমী করতে পারলে নারী নির্যাতন সহ সামাজিক অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে। ভালো কাজ থেকে ভালো চিন্তার উদয় হবে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক