গুণগত মানের পাট বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের গুরুত্বগুণগত মানের পাট বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের গুরুত্ব

 

কৃষিবিদ মোঃ আবুল বাশার

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ফসলগুলোর মধ্যে পাট অন্যতম। পাট ও পাট জাত পণ্য রপ্তানী করে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ৫-৬ % বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। পাট বর্তমানে শুধু বস্তা বা চটেই সীমাবদ্ধ নয় বরং পাটের বহুবিধ ব্যবহার তাকে সোনালী অতীতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পাটের ব্যবহার ম্যান্ডেটরী প্যাকেজিং এ্যাক্ট হওয়ায় বর্তমানে পাট ও পাট জাতীয় পণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব সোনালী আঁশ ও রূপালী কাঠি তার সোনালী অতীত ফিরে পাবে এবং ডায়মন্ড ফাইবারে পরিণত হবে বলে আশাবাদী গবেষকরা এবং সেই লক্ষ্যেই নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী কৃষকরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং মাননীয় কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ডঃ আব্দুর রাজ্জাক মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় বর্তমান কৃষকবান্ধব সরকারের আমলে পাট শিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কিছু সাফল্য চিত্র নিম্নরূপ-
১। জীব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বে সর্বপ্রথম দেশী ও তোষা পাটের জীবন রহস্য (Genome sequencing) উন্মোচন।
২। পাটসহ ৫ শতাধিক ফসলের ক্ষতিকারক ছত্রাক (Macrophomina phaseolina) এর জীবন রহস্য উন্মোচন।
৩। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) কর্তৃক উচ্চ ফলনশীল ও উন্নতমানের পাট (দেশী ও তোষা) ও আঁশ জাতীয় (কেনাফ ও মেস্তা) ফসলের মোট ৫০ টি জাত উদ্ভাবন।
৪। পাট পচনের আপদ কালীন প্রযুক্তি হিসেবে পাওয়ার রিবনার, স্বয়ংক্রিয় জুট রিবনার প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
৫। স্বল্প মূল্যের হালকা শপিং ব্যাগ উদ্ভাবন যা সোনালি ব্যাগ নামে পরিচিত।
৬। রূপালী কাঠি থেকে উচ্চ মূল্যের এ্যাক্টিভেটেড চারকোল উৎপাদন।
৭। জুট জিও টেক্সটাইল যার বাজার মূল্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
৮। পাট পাতার অর্গাণিক চা উদ্ভাবন যা বর্তমানে জার্মানিতে রপ্তানী হচ্ছে।
৯। পরিবেশ বান্ধব পাটের পলিব্যাগ আবিষ্কার যা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
১০। পাট ও পাট জাতীয় পণ্য উৎপাদন, প্রসার, গবেষণা, পাট চাষে উদ্ধুদ্বকরণে পাট আইন ২০১৭ মহান জাতীয় সংসদে
পাস হয়েছে।
১১। পাট বীজের আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে পাট বীজ উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে।
১২। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ প্রণীত হয়েছে এবং বর্তমান সরকার পাটের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি চাহিদা বাড়ানোর লক্ষ্যে ৬ ই মার্চ জাতীয় পাট দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে ।
১৩। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার যা প্রায় ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সমান।
১৪। পাটের জিন্স (ডেনিম), পাট ও তুলার মিশ্রণে তৈরী হচ্ছে বিশেষ সুতা ভেসিকল।
১৫। পাট থেকে তৈরী হচ্ছে শাড়ী, লুঙ্গি, সেলোয়ার, কামিজ, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, জুতা, স্যান্ডেল, জায়নামাজসহ প্রায় ২৮৫ ধরনের পণ্য

জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বাস্তবতায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাট চাষের উন্নয়ন ও পাট আঁশের বহুমুখী ব্যবহার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তসহ পাট চাষের সাথে সম্পৃক্ত সকলের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

১। পাট বীজ উৎপাদনের গুরুত্ব অপরিসীম।
শুধুমাত্র ভাল মানের বীজ ব্যবহার করে শতকরা প্রায় ২৫-৩০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি করা যায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর পাট মৌসুমে প্রায় ৫-৬ হাজার মেট্রিক টন পাট বীজের প্রয়োজন হয় যার মধ্যে ১২-১৫% বীজ বিএডিসি সরবরাহ করে এবং বাকী বীজ স্থানীয় বাজার ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানী করা হয়। তাই কৃষকরা যাতে নিজের বীজ নিজেই উৎপাদন করতে পারেন সেজন্য উন্নতমানের পাট বীজ উৎপাদনের কলাকৌশল সম্পর্কে তাদের জানা দরকার।
পাট বীজ ফসল দুভাবে উৎপাদন করা যায়-
ক) আঁশ ফসলের সময় পাট বীজ উৎপাদন :-
সাধারনত কৃষক পাট আঁশ ফসলের ক্ষেতের এক কোণায় কিছু পাট গাছ বীজ উৎপাদনের জন্য বেঁধে রাখেন যা থেকে পরবর্তীতে পাট বীজ সংগ্রহ করে থাকেন।

খ) নাবী পাট বীজ উৎপাদন – নাবী শব্দের অর্থ দেরীতে বীজ বপন করে পাট গাছের দৈহিক পর্যায়ের বৃদ্ধির সময় কমিয়ে, জনন পর্যায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এর ফলে পাট গাছের বৃদ্ধি কম হলেও অধিক সংখ্যক ডালপালাসহ সুপুষ্ট ফল ও উন্নতমানের অধিক সংখ্যক বীজ উৎপাদন করা যায়।

৩। আঁশ ফসলের সময় পাট বীজ উৎপাদন করতে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়-

তোষা পাটের জমিতে বন্যার পানি উঠলে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে গাছ মরতে শুরু করে এবং তাতে প্রায় সমগ্র গাছ মারা যায়, ফলে বীজ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে তোষা পাট বীজের সংকট দেখা দেয়। আবার, দেশী পাটের জমিতে বন্যার পানি উঠলেও বেশ কিছু বীজ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আঁশ ফসলের গাছ দীর্ঘদিন মাঠে থাকার ফলে ঝড়, শিলাবৃষ্টি, বন্যা, রোগ, পোকা-মাকড়ের আক্রমনে গাছ অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সেই গাছ থেকে মানসম্মত বীজ পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায় ।

৪। নাবী পাট বীজ উৎপাদন পদ্ধতিগুলো কি কি?

মোটামুটিভাবে তিনটি পদ্ধতিতে নাবী পাট বীজ উৎপাদন করা যায়। পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-
ক) সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি
খ) কান্ড ও ডগা রোপন পদ্ধতি গ) চারা রোপন পদ্ধতি

৫। সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি সম্পর্কে বলুন-
 এ পদ্ধতিতে দেশী, তোষা পাট ও কেনাফ জাতের বীজ উৎপাদন করা হয়।
 শ্রাবণ মাসের প্রথম থেকে ভাদ্র মাসের শেষ সময় (মধ্য জুলাই- সেপ্টেম্বর) এর মধ্যে পাট বীজ বপন করতে হয়।
 দেশী পাটের বেলায় সারিতে প্রতি শতাংশ জমিতে ২০ গ্রাম বীজ অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে ৫ কেজি বীজ এবং একরে ২ কেজি বীজ বপন করতে হয় এবং কেনাফ প্রতি শতাংশে ৫০ গ্রাম বীজ অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে ১২ কেজি এবং একরে ৫ কেজি বীজ বপন করতে হয়।

৬। কান্ড ও ডগা রোপন পদ্ধতিতে ডগা নির্বাচনের উপর্যুক্ত সময় এবং ডগা রোপন সম্পর্কে বলুন?

পাট বীজ ফসল দুভাবে উৎপাদন করা যায়-
ক) আঁশ ফসলের সময় পাট বীজ উৎপাদন :-
সাধারনত কৃষক পাট আঁশ ফসলের ক্ষেতের এক কোণায় কিছু পাট গাছ বীজ উৎপাদনের জন্য বেঁধে রাখেন যা থেকে পরবর্তীতে পাট বীজ সংগ্রহ করে থাকেন।

খ) নাবী পাট বীজ উৎপাদন – নাবী শব্দের অর্থ দেরীতে বীজ বপন করে পাট গাছের দৈহিক পর্যায়ের বৃদ্ধির সময় কমিয়ে, জনন পর্যায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এর ফলে পাট গাছের বৃদ্ধি কম হলেও অধিক সংখ্যক ডালপালাসহ সুপুষ্ট ফল ও উন্নতমানের অধিক সংখ্যক বীজ উৎপাদন করা যায়।

৩। আঁশ ফসলের সময় পাট বীজ উৎপাদন করতে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়-

তোষা পাটের জমিতে বন্যার পানি উঠলে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে গাছ মরতে শুরু করে এবং তাতে প্রায় সমগ্র গাছ মারা যায়, ফলে বীজ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে তোষা পাট বীজের সংকট দেখা দেয়। আবার, দেশী পাটের জমিতে বন্যার পানি উঠলেও বেশ কিছু বীজ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আঁশ ফসলের গাছ দীর্ঘদিন মাঠে থাকার ফলে ঝড়, শিলাবৃষ্টি, বন্যা, রোগ, পোকা-মাকড়ের আক্রমনে গাছ অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সেই গাছ থেকে মানসম্মত বীজ পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায় ।

৪। নাবী পাট বীজ উৎপাদন পদ্ধতিগুলো কি কি?

মোটামুটিভাবে তিনটি পদ্ধতিতে নাবী পাট বীজ উৎপাদন করা যায়। পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-
ক) সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি
খ) কান্ড ও ডগা রোপন পদ্ধতি গ) চারা রোপন পদ্ধতি

৫। সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি সম্পর্কে বলুন-
 এ পদ্ধতিতে দেশী, তোষা পাট ও কেনাফ জাতের বীজ উৎপাদন করা হয়।
 শ্রাবণ মাসের প্রথম থেকে ভাদ্র মাসের শেষ সময় (মধ্য জুলাই- সেপ্টেম্বর) এর মধ্যে পাট বীজ বপন করতে হয়।
 দেশী পাটের বেলায় সারিতে প্রতি শতাংশ জমিতে ২০ গ্রাম বীজ অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে ৫ কেজি বীজ এবং একরে ২ কেজি বীজ বপন করতে হয় এবং কেনাফ প্রতি শতাংশে ৫০ গ্রাম বীজ অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে ১২ কেজি এবং একরে ৫ কেজি বীজ বপন করতে হয়।

৬। কান্ড ও ডগা রোপন পদ্ধতিতে ডগা নির্বাচনের উপর্যুক্ত সময় এবং ডগা রোপন সম্পর্কে বলুন?

এ পদ্ধতিতে শ্রাবণ মাসে (মধ্য জুলাই) গাছের বয়স যখন ১০০-১২০ দিন তখন আঁশ ফসলের জমি থেকে সুস্থ ও সবল সতেজ গাছের কান্ড ও ডগা বেছে নিতে হবে। তবে যে সব মাতৃগাছে ফুল ধরেনি কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে ফুল আসবে, সেসব গাছের কান্ড ও ডগা নির্বাচন করতে হবে। গাছ নির্বাচনের পর ডগাগুলো ধারালো চাকু বা ব্লেডের সাহায্যে তেরচা বা ৪৫ ডিগ্রি কোণে কেটে নিতে হবে। প্রতিটি ডগার দৈর্ঘ্য ২০-২৫ সেঃ মিঃ হতে হবে। ডগা কাটার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কাটা জায়গা থেতলে না যায় এবং ডগা সংগ্রহ করার সাথে সাথেই রোপন করতে হবে। তবে মেঘলা দিনে বা পড়ন্ত বিকাল বেলা ডগা রোপন করা উত্তম। ডগা/কান্ড সারি করে রোপন করতে হবে। লাইন থেকে লাইন এর দুরত্ব ৩০ সেঃ মিঃ এবং ডগা থেকে ডগার দুরত্ব ১০ সেঃ মিঃ হতে হবে। প্রতিটি ডগার প্রায় ৫ সেঃ মিঃ পরিমাণ অংশ ৪৫ ডিগ্রী কোণে অর্থাৎ তীর্যকভাবে মাটির নীচে পুতে দিতে হবে।

৭। চারা রোপন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে বলুন?

চারা রোপন পদ্ধতিতে আষাঢ়ের শেষ থেকে শ্রাবণ মাসের (জুনের শেষ থেকে জুলাইয়ে মাঝামাঝি) সময়ের মধ্যে ৩ মিঃ দৈর্ঘ্য ও ১ মিঃ প্রস্থ আকারের বীজতলায় ৫০-১০০ গ্রাম বীজ বপন করে চারা উৎপাদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আষাঢ় -শ্রাবণ (১৫ জুন-১৫ জুলাই) মাসে বপনকৃত বীজতলার চারার বয়স ২৫-৪০ দিন হলে চারাগুলো ভাদ্র মাস থেকে আশ্বিনের মাঝামাঝি ( জুলায়ের শেষ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত রোপন করা যায়। বীজতলা থেকে চারা তুলে নিয়ে ছায়ায় রাখতে হবে। প্রতিটি চারার ডগার ২/৩ টি পাতা রেখে অন্যান্য সব পাতার বোটা বাদে বাকী অংশ কাঁচি দিয়ে কেটে দিতে হবে। বীজতলা থেকে যেদিন চারা তুলা হবে ঐদিনই মূল জমিতে চারা রোপন করা ভাল। মূল জমিতে সারি থেকে সারির দুরত্ব হবে ৩০ সেঃ মিঃ বা ১ ফুট এবং চারা থেকে চারার দুরত্ব ১০ সেঃ মিঃ বা প্রায় ৪ ইঞ্চি করে চারা রোপন করতে হবে। মেঘলা দিনে অথবা সন্ধ্যার আগে যখন রোদ থাকে না তখন চারা রোপন করার সঠিক সময়।

৮। বীজ ফসলের পরিচর্যা, আগাছা দমন, সার প্রয়োগ ও রোগ দমন সম্পর্কে বলুন-

মাঝে মাঝে আঁচড়া বা নিড়ি দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরে রাখতে হবে।যদিও অনেক সময় বৃষ্টি থাকায় জমিতে কিছুটা পানি জমে থাকে তখন কাঁচি দিয়ে আগাছা অথবা অনেক এলাকায় এক ধরনের আগাছা কাটার অল্প মূল্যের যন্ত্র পাওয়া যায় যা দিয়ে আগাছাকে দমিয়ে রাখা যায়। ২য় কিস্তির সার প্রয়োগের ২/১ দিন পূর্বে নিড়ানী দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। শেষ বা ৩য় কিস্তির সার প্রয়োগের পূর্বে আরও একবার নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। জমিতে আগাছা বেশী হলে সানরাইজ ১০৫ ডব্লিউ জি ৫ শতক জমির জন্য ৪ গ্রাম, ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে এবং হুইপ সুপার ৯ ইসি ৫ শতকের জন্য ১৩ মিলিমিটার, ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করে মূথা,ক্ষুদে শ্যামা, আঙ্গুলী ঘাসসহ অন্যান্য আগাছা দমন করা যায়। তোষা পাটের বীজ উৎপাদনের জন্য প্রতি শতকে জমিতে ইউরিয়া ২৭০ গ্রাম, টিএসপি ৩০০-৪০০ গ্রাম, এমপি ১৬০ গ্রাম

গ্রাম, জিপসাম ৩০০-৪০০ গ্রাম শেষ চাষে প্রয়োগ করতে হবে। কেনাফ ও মেস্তার ক্ষেত্রে শেষ চাষে প্রতি শতক জমিতে ইউরিয়া ৩৪০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমপি ১২৫ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। গাছে রোগ দেখা দিলে ডাইথেন এম-৪৫, ৯ গ্রাম প্রতি ৫ লিঃ পানিতে মিশিয়ে প্রতি শতাংশ জমিতে দুদিন পর পর কমপক্ষে দুবার ছিটিয়ে দিতে হবে। মাঝে মাঝে মাঠ পরিদর্শন করে রোগাক্রান্ত গাছ শিকড়সহ উঠিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

৯। ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময় ও বীজের ফলন বিষয় যদি বলতেন

দেশী ও তোষা পাট এবং কেনাফসহ সকল জাতের গাছের শতকরা ৭০-৮০ ভাগ ফল বাদামী রং ধারণ করলে গাছের গোড়া সহ কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হয়। মেঘলা বা বৃষ্টির দিনে পাকা ফল সংগ্রহ না করাই উত্তম। পাট, কেনাফ ও মেস্তার ক্ষেত্রে বীজের ফলন ক্ষেত্র বিশেষে প্রতি শতকে ২-৩ কেজি এবং প্রতি একরে প্রায় ২৫০-৪০০ কেজি হয়ে থাকে।

১০। পাট বীজ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ?

দেখুন, আমাদের দেশের চাষ যোগ্য জমির পরিমান কিন্তু দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে পাটের জমি অন্যান্য ফসলের আওতায় চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অল্প জমিতে উৎপাদিত পাট বীজ দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করতে না পারলে বপনের সময় পাট বীজের প্রকট সংকট দেখা দেয়। তাই পাট বীজ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরী। কারণঃ-
• পাট বীজের আর্দ্রতা বেড়ে গেলে সহজেই বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, রোগ, পোকা -মাকড় সহজেই বীজকে আক্রমণ করে।
• প্রাকৃতিক দুর্যোগে বীজ ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আপদ কালীন মজুদ হিসাবে বীজের সংকট দেখা দিবে।
• পরবর্তী বপন মৌসুমে ভাল বীজ পাওয়ার জন্য বীজ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
• বীজে সুপ্তাবস্থা দীর্ঘায়িত করার জন্য সংরক্ষণ প্রয়োজন।

১১। কৃষক পর্যায়ে পাট বীজ কিভাবে সংরক্ষণ করা যাবে ?

আমাদের দেশের বেশীর ভাগ পাটচাষিই মূলতঃ ক্ষুদ্র চাষী এবং তাদের বীজের পরিমাণও কম লাগে। তাই বীজ সংরক্ষণের পূর্বে সংগ্রহকৃত বীজের মধ্যে গাছের ডাল-পালা, ফলের খোসা, মাটির কণা, চিটা বা অর্ধ পুষ্ট, রোগাক্রান্ত বীজ এবং অন্যান্য আবর্জনা থাকলে তা ভাল করে ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ভালভাবে শুকানোর পর শুকনো বীজকে দুই দাঁতের ফাঁকে নিয়ে চাপ দিলে যদি কট করে বীজটি ভেঙ্গে যায়, তাহলে বুঝতে হবে বীজ ভাল ভাবে শুকানো হয়েছে। শুকানোর পর বীজের আর্দ্রতা যখন শতকরা ৮-৯ এর কাছাকাছি কিন্তু কোন অবস্থায় ই ১০% এর বেশি নয়, তখন তখন টিনের কৌটা, প্লাষ্টিকের ক্যান, প্লাষ্টিক ড্রাম ইত্যাদি বায়ুরোধী পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করা ভাল। যদি বায়ুরোধী পাত্র না পাওয়া যায় তখন মাটির কলসী, হাড়ি বা মটকায় বীজ রাখা যেতে পারে। তবে এসব পাত্রে বীজ রাখার পূর্বে মাটির কলসী, হাড়ি বা মটকায় আলকাতরা বা রংয়ের প্রলেপ দিতে হবে অথবা বীজ রাখার পুর্বে মোটা পলিথিন দিয়ে ভালভাবে ঐ পাত্র মুড়ে দিতে হবে যাতে মাটির পাত্রটি বায়ুরোধী হয়। বড় পাত্রে কম পরিমান বীজ রাখা ঠিক হবে না। কারণ এতে করে পাত্রের খালি অংশের আর্দ্রতা বীজের গুনগত মানকে নষ্ট করে দিতে পারে। সঠিক আর্দ্রতায়, সাধারণ তাপমাত্রায় লেমোফয়েল ব্যাগে বীজ সংরক্ষণ করলে প্রায় ৩ বছর পর্যন্ত বীজ ভাল থাকে। বায়ুরোধী প্লাষ্টিক বা টিনের পাত্রে সংরক্ষণকৃত বীজ প্রায় ২ বছর পর্যন্ত ভাল থাকে। আর অন্যান্য পাত্র যেমন- পাতলা পলিথিন ব্যাগ, কাপড়/ছালা বা কাগজের ব্যাগ অথবা সরাসরি মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করলে তা ৩-৪ মাস পর্যন্ত ভাল থাকে।
ধন্যবাদ আপনাকে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই পাট বীজ করার সঠিক মৌসুম চলে আসবে। যেসব এলাকায় আমনের বীজতলা আছে তারা পাট বীজ করতে পারেন। আর যাদের ১মাস পর জমিতে বীজ ছিটিয়ে বীজ করা সম্ভব নয় তারা এই মাসের মধ্যেই পাটের বীজতলা করতে পারেন যা পরবর্তীতে চারা রোপণ পদ্ধতিতে আপনি বীজ করতে পারেন।

কৃষিবিদ মোঃ আবুল বাশার
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কেন্দ্র কিশোরগঞ্জ।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *