গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নওগাঁর খামারি ও কৃষকরা। ফলে জেলার হাজার হাজার খামারি তাদের গবাদিপশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। পর্যাপ্ত খাবারের যোগান দিতে না পেরে কেউ কেউ আবার গবাদিপশুই বিক্রি করে ফেলছেন।
খামারিরা বলছেন- পশুখাদ্যের দাম বাড়লেও বাড়ছে না দুধের দাম। খাবারের সঙ্গে দুধের দামের সামঞ্জস্য না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। পশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেলেও সরকার কমানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ দিনের ব্যবধানে গো-খাদ্যের নারিশ ফিড বর্তমানে ২৫ কেজি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৯৫ টাকা। যা আগে ছিল ১ হাজার ২৩০ টাকা। বস্তায় বেড়েছে ৬৫ টাকা।
ভুসি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আগে ছিল ৫০ টাকা। মাসকলায়ের খুদি ও খৈল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৪০ টাকা। প্রতি কেজি চালের খুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়, আগে ছিল ৩০ টাকা। আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি, আগে ছিল ৩৮-৪০ টাকা। ধানের গুড়া ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, আগে ছিল ৬০০ টাকা। রাইস পালিস বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা কেজি। এছাড়া ভুট্টার আটা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৩০ টাকা।
খামারি ও কৃষকরা বলছেন, সংসারে সচ্ছলতা আনতে ও পরিবারের দুধের চাহিদা মেটাতে গবাদিপশু লালনপালন করেন তারা। খড় ও ঘাসের পাশাপাশি দানাদার খাবার হিসেবে ভুসি, খৈল, আটা ও ফিড দেওয়া হয়। গত ২০ দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। দফায় দফায় দাম বেড়েই চলেছে। খাবার জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খাবারের দাম বাড়ায় দুধ উৎপাদন ও গরু মোটাতাজাকরণ ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে পশুখাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকবে না।
বদলগাছী উপজেলার চাকরাইল গ্রামের দুগ্ধ খামারি রুস্তম আলী। তিনি পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে ২০১০ সালে পাঁচটি গাভী দিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে বেড়ে তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে গুরুর সংখ্যা এখন ২৩টি। এরমধ্যে ১৫টি গাভী এবং আটটি বাচ্চা।
রুস্তম আলী বলেন, আমার খামার থেকে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লিটার দুধ পাওয়া যায়। এ পরিমাণ দুধের দাম পাওয়া যায় ১ হাজার ২০০ টাকা। বাড়ির খড় ও ঘাস ছাড়াও এতগুলো গরুর পেছনে দানাদার খাবারের খরচ পড়ে প্রায় ১ হাজার ৮০০ টাকার মতো। গত একমাস থেকে দানাদার খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মতো খামারিদের জন্য পশুপালন কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, গো-খাদ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি দুধের দাম। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
একই উপজেলার পয়নারি গ্রামের খামারি শাহিনুর রহমান বলেন, দেশি-বিদেশি মিলে সাতটি গরু আছে। ৪৫ টাকা কেজির খৈল এখন ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পশু খাবারের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে আমাদের মতো ছোট খামারিদের পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না। গরু পালন বাদ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। খাবারের দাম বাড়ার কারণে ২০ দিন আগে পাঁচটি গরু বিক্রি করে দিয়েছি। এখন গরুর দাম বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, পশুখাদ্যের দাম কমানো নিয়ে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখছি না। প্রান্তিক খামারিদের রক্ষা করতে দ্রুত সরকারি নজরদারি বাড়ানো দরকার। খাবারের দাম বেড়ে গেলে পশুর দামও বেড়ে যাবে। মাংসের দামও বৃদ্ধি পাবে। এতে করে অনেকের পক্ষে গরুর মাংস কিনে খাওয়া সম্ভব হবে না।
একই গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, আমরা কৃষক মানুষ। সংসারের উন্নয়নে গরু-ছাগল পালন করে থাকি। বাড়িতে পাঁচটি গরু আছে। বাড়ির খড় খাওয়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবান রাখতে দানাদার কিছু খাবার দিয়ে থাকি। যেভাবে খাবারের দাম বাড়ছে এতে করে কেনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই যে পরিমাণ দানাদার খাবার দেওয়া দরকার তুলনামূলক কম করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের উচিত খামারি ও কৃষকদের বাঁচাতে পশুখাদ্যের দাম কমানো হোক।
নওগাঁ শহরের আটাপট্টি এলাকার মেসার্স আলহাজ্ব ফিড এবং চিকস সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী বজলুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি গো-খাদ্যের দাম আড়াই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ফিড ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৪৭ টাকা কেজি। এছাড়া আটা, খৈল ও ভুসিসহ অন্যান্য খাবারের দাম প্রতি কেজিতে ১০-২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষক ও খামারিদের গো-খাদ্য কেনার আগ্রহ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে খামার ধ্বংস হয়ে যাবে।
বদলগাছী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুল হক বলেন, প্রতিটি দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে। এতে প্রান্তিক খামারি ও কৃষকরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। খামারিরা এসে অভিযোগও করছেন, খাদ্যের দাম বাড়ায় লাভ না হয়ে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। খামারিদের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা বিশ্বাস করি সরকারও খামারিদের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবেন।
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দীন বলেন, কোরবানি উপলক্ষে খামারিদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
সুত্রঃ
জাগোনিউজ২৪.কম