গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসিগ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

 

মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর তালা উপজেলায় প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় হয়নি ফলনের কোনো বিপর্যয়। এতে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। একই সঙ্গে বেশ লাভের আশা করছেন তারা।

তালা উপজেলার তেতুলিয়া ও ভাইড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকের ক্ষেতে মাচায় ঝুলছে শত শত তরমুজ। তারমধ্যে টুঙ্কিনারী, বুলেট কিং ও কানিয়া (বাংলালিঙ্ক) জাতের এসব তরমুজ। মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় চাষকৃত ক্ষেতে ভরে গেছে হলুদ, কালো ও সবুজ রং এর ছোট, মাঝারি এবং বড় তরমুজে। কাক্সিক্ষত পরিমাণ ফলন পেয়ে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে মনে করছেন চাষিরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তালার উৎপাদিত তরমুজ চলে যাবে বাইরের জেলায়ও।

তালায় কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে তরমুজের সমারোহ। কেউ ক্ষেত পরিচর্যা, সার-ওষুধ প্রয়োগ, আগাছা দমন আর কেউ বা ক্ষেত থেকে তরমুজ তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

স্থানীয় কৃষক ইকবাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমি প্রথমবারের মতো এক বিঘা পাঁচ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছি। উন্নয়ন প্রচেষ্টার সহযোগিতাই প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে তরমুজ চাষের জন্য বীজ, মালচিং পেপার, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ এমনকি চাষাবাদের জন্য নগদ টাকাও দিয়েছে। তারপরে মে মাসের শেষ সপ্তাহে সেই টাকা দিয়ে বীজ রোপণ করি। ইতোমধ্যে আমার ক্ষেত তরমুজে ভরে গেছে। চলতি সপ্তাহে তরমুজ বিক্রি শুরু করবো।

কৃষক সাইফুল বিশ্বাসের কাছে তরমুজ চাষে খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমি প্রথমবারের মতো এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছি। তরমুজ চাষে আমার সবমিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাইকাররা এসে আমার তরমুজ খেতে দরদাম করে গেছে। তারা ৩৫-৪০ টাকা কেজি দিতে চায়। এ হিসেবে আমি অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো আশা করি। এতে অন্যান্য ফসলের তুলনায় আমার কমপক্ষে ছয়গুণ লাভ হবে।

শুধু ইকবাল হোসেন আর সাইফুল বিশ্বাস নয়, তেতুলিয়া গ্রামের শিপন বিশ্বাস, মোঃ রফিকুল ইসলাম ও শরিফুল বিশ্বাস, ভাইড়া গ্রামের মুক্তার মহালদার, লিয়াকত মহালদারসহ আরও অনেকই চাষ করেছেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষিবিদ নয়ন হোসেন বলেন, পিকেএসএফ’র অর্থায়নে উন্নয়ন প্রচেষ্টার সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষিখাতের আওতায় স্থানীয় কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সর্ব্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়। প্রথমবারেই তারা উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে। আশা করি মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের প্রযুক্তি এই এলাকায় আরও সম্প্রসারিত হবে।

তালা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার শুভ্রাংশু শেখর দাশ বলেন, তালার ভাইড়া ও তেতুলিয়া গ্রামে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রচেষ্টা কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করেছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সেই সাথে সরকারের কৃষি বিভাগও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের এই প্রযুক্তি আগামীতে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

সুত্রঃ বার্তা২৪.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *