পুরোদমে কৃষিকাজ, মাছ ধরা ও অন্যান্য পেশায় ঝুঁকেছেন করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে ফেরা নরসিংদীর চরাঞ্চলের প্রবাসীরা। এতে পড়ে থাকা শত শত হেক্টর কৃষিজমিতে নতুন করে আবাদ শুরু হয়েছে। এতে ফসল উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি বেকারত্ব ঘুচেছে দেশে ফেরত আসা অনেক প্রবাসীর।
স্থানীয়রা জানান, রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের কর্মক্ষম উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ প্রতিবছরই পাড়ি জমায় বিভিন্ন দেশে। রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ প্রবাসী হওয়ায় আগ্রহ কম ছিল কৃষিকাজে। এছাড়া উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ কম হওয়া ও কৃষি শ্রমিক সংকটসহ নানা কারণে ফসল আবাদ থেকে সরে আসেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। এতে পতিত হয়ে পড়েছিল শত শত হেক্টর জমি। অনেকে কৃষি কাজ না থাকায় বাধ্য হয়েও বিদেশে পাড়ি জমান।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট আবাদি কৃষি জমির পরিমান ৪ হাজার ৮২৭ হেক্টর। এরমধ্যে নিলক্ষা ইউনিয়নে রয়েছে ৭৭৫ হেক্টর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। মাটি উর্বর হওয়ায় চরাঞ্চলের এসব জমিতে ধান, মরিচ, আলু, বাদাম, তিল, ভুট্টা, বাঙ্গি, ওস্তে ও কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের ভালো ফলন হয় থাকে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সার, কীটনাশক, জ্বালানি তেলসহ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ কম হওয়ার ফলে ফসল আবাদ থেকে অনেকটা সরে এসছেন চরাঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষক। কৃষি কাজ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দেয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে সংকট দেখা দেয় কৃষি শ্রমিকের। শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি দিতে হয় দ্বিগুণ। এতে বাড়তি খরচ দিয়ে ফসল চাষ করে অব্যাহত লোকসানে পড়তে হয় এই চরাঞ্চলের কৃষকদের। এতে পতিত হয়ে পড়ে শুধু নিলক্ষার চরাঞ্চলের আড়াইশত হেক্টর কৃষি জমি। বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা ও লোকসানের কারণে চাষাবাদ না করায় একইভাবে এই উপজেলার আরো ৭টি চরাঞ্চলীয় ইউনিয়ন বাশঁগাড়ী, মির্জারচর, পাড়াতলী, চাঁনপুর, শ্রীনগর, চর মধুয়া ও চর আড়ালিয়ায় প্রতি বছর বাড়তে থাকে অনাবাদি কৃষি জমির পরিমাণ। চরাঞ্চলের এসব জমিতে চাষাবাদ না করায় বছরের পর বছর জুড়ে পতিত থাকে মাঠের পর মাঠ।
চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শুধুমাত্র নিলক্ষাতেই ফেরত এসছে প্রায় ১০০ প্রবাসী। তাদের অনেকেই বিভিন্ন পেশা আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগ প্রবাসী পুনরায় ফিরেছেন কৃষিকাজে। কেউ নিজের জমি আবার কেউবা অন্যের জমি চুক্তিতে নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছেন। পুরোদমে কৃষিকাজে মনোযোগী হওয়ায় ফসলে সবুজের সমারোহে ভরে উঠেছে চরাঞ্চলের পতিত এসব জমি। এছাড়া ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় অন্যান্য কৃষকরাও ধান চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
শুধু নিলক্ষা ইউনিয়ন নয়, একইভাবে অন্যান্য ৭টি চরাঞ্চলীয় ইউনিয়নেও কৃষিকাজে মনোযোগী হচ্ছেন প্রবাস ফেরতরা। কৃষিকাজ ছাড়া অনেকে ইজিবাইক চালিয়ে, কেউ কেউ মেঘনা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
চরাঞ্চলের গোপীনাথপুর গ্রামের মালয়েশিয়া ফেরত শাহিন মিয়া জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। আর যেতে পারবো কী না জানি না। দেশে বেকার না থেকে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান ও আলু চাষ করেছি। আমার মতো অনেকেই কৃষিকাজে যুক্ত হচ্ছেন।
sutro: ডেইলি বাংলাদেশ