চামড়া রপ্তানিতে আশার আলোচামড়া রপ্তানিতে আশার আলো

নিউজ ডেস্কঃ
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাজার বড় হচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানিতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। চামড়ার জুতা রপ্তানিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, চামড়াশিল্প বিকাশের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে এ জন্য দরকার সরকার ও উদ্যোক্তাদের সমন্বিত উদ্যোগ এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নজরদারি নিশ্চিত করা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬.২২ শতাংশ বেশি হয়েছে। এই সময় আয় হয়েছে প্রায় ৯ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরে জুলাইতে আয় হয় ১০ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এ ছাড়া এই সময় চামড়ার জুতা রপ্তানি করে আয় হয় পাঁচ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১.৩৪ শতাংশ বেশি।

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) সূত্রে জানা যায়, কভিড-১৯-এর কারণে এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রায় ২০ কোটি ডলারের কার্যাদেশ স্থগিত হয়ে পড়ে। এই সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল ভঙ্গুর। তবে সম্প্রতি সরবরাহব্যবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার ফলে অন্য খাতের মতো রপ্তানি আয় কিছুটা আলোর মুখ দেখছে। স্থগিত হওয়া পণ্য জাহাজীকরণ শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে এলএফএমইএবি সহসভাপতি ও লেদারেক্স লিমিটেডের এমডি নাজমুল হাসান সোহেল বলেন, ‘করোনায় বিশ্ববাজারে স্থবিরতা, চাহিদা কমে যাওয়া এবং সাভার ট্যানারিপল্লীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ শেষ না হওয়ায় দেশের চামড়া খাত বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। ফলে ৭০ শতাংশ পণ্য মজুদ হয়ে পড়ে। আশার বিষয় হচ্ছে, পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় ক্রেতারা আবার তাদের পণ্য নিতে শুরু করেছে। এ ছাড়া চামড়ার জুতার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ নতুন কার্যাদেশ আসছে। আর চামড়াজাত পণ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ নতুন কাজ আসছে।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে মন্দা, কভিড-১৯ এবং সাভারের ট্যানারিপল্লীর কাজের উপযোগী না হওয়ায় দেশের চামড়াশিল্পে এমন পরিণতি হয়েছে। তবে এই বছরটা ভিন্ন ছিল। এ ছাড়া গত বছরও চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া যায়নি।

মূল্যবান চামড়াশিল্পকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ‘এ জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো প্রাইস মনিটরিং কমিশন গঠন, এজেন্ট নিয়োগ, তৃণমূল পর্যন্ত এজেন্টদের নেটওয়ার্ক তৈরি এবং সর্বস্তরে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি। এ ছাড়া কী পরিমাণ কোরবানির পশু জবাই হতে পারে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে এমন তথ্য থাকতে হবে। একই সঙ্গে কোরবানির আগে-পরে সংগ্রহকালীন সময়ে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে তিন দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থার কথা জানান তিনি। বিদিশা হক বলেন, ‘সাপ্লাই চেইন আর বাজার তদারকির পাশাপাশি সাভারের চামড়াপল্লীর সিইটিপি নিশ্চিত করতে হবে।’

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *